ভর্তুকীর খেসারতে শুভঙ্করের ফাঁকি

শুভঙ্করের ফাঁকিরও রকমফের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। কৃষিতে এমনকি বিভিন্ন পন্যে ভর্তুকী দেয়া হচ্ছে এবং হবে তবে এর ফলে কে বা কারা উপকৃত হচ্ছে তাকি একবারও অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে। হয়তো হয়েছে আবার নাও হতে পারে তবে যেহেতু ফল প্রকাশিত নয় সেইহেতু এই ভর্তুকির বেড়াজালের শুভঙ্করের ফাঁকিগুলোকে চিহ্নিত করার সময় এখন। ডিজেল এবং বিভিন্ন তৈলজ পন্যের বা ভোজ্যতেলের ভর্তুকীর উপকারভোগী কারা এবং কি কারণে এদের জন্য ভর্তুকী দেয়া হয়েছে এমনকি দেশের সামগ্রিক কল্যাণে ঐ ভর্তুকীর উপকার কি কি তাও প্রত্যক্ষ করা এখন জরুরী হয়ে পড়েছে। কৃষক ভর্তুকী পায় এবং পন্য উৎপন্য করে আর পন্য বিক্রয় করে নিজে লাভবান হচ্ছে কিন্তু সার্বিক চিন্তায় সামগ্রীক কল্যানে কি ঐ ভর্তুকীর ফল বাংলাদেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখছে? তাও দেখার সময় এখন। সর্বপ্রকার জ্বালানীর ভর্তুকীতে যারা লাভবান তারা কি জনকল্যাণের নিম্মিত্তে ঐ ভর্তুকী ব্যবহার করছে নাকি শুধু নিজস্বার্থে ঐ ভর্তুকী ব্যবহার করে সম্পদশালী হচ্ছে তাও খতিয়ে দেখার বিষয়। ভর্তুকীর দ্বারা উৎপাদিত পন্য কখনোই সাশ্রয়ী মূল্যে ক্রয় করে জনচাহিদা বা আকাঙ্খা পূরণ করা সম্ভব হয়নি এমনকি হবেও না। তাই ভর্তুকীর ব্যপারে এখন সাবধানতা অবলম্বন জরুরী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে গ্রাম-বাংলার আনাচে-কানাচে বিদ্যুতে সয়লাভ তাই ডিজেল ভর্তুকীর প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে যেখানে অনগ্রসরতায় এখনও জড়িয়ে আছে আধুনিকতার এমনকি ডিজিটাল ছোয়া পৌঁছায়নি সেইসকল এলাকায় ভর্তুকীর বিষয়টি জনগুরুত্বের সহিত মানবিক থেকে অতিমানবিকতায় পৌঁছানো এই সরকারের প্রায়োগিক দায়িত্ব। তবে ভর্তুকী যেন কোন রাঘব বোয়ালের পেটে না যায় তার জন্য চৌষক দৃষ্টি এমনকি ব্যবস্থা জাগ্রত রাখা প্রয়োজন। ভর্তুকীতে ব্যবসায়ীরা কিন্তু দ্বিগুন ফলবান হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ভর্তুকীর কোন সুবিধা পেয়েছে পরিসংখ্যানের বাস্তবতায় খতিয়ে দেখে আমার অনাজানাই রয়ে গেল। একটি গল্প বলি “আজ যে গরীব কাল সে ধনী; আজ যে দুর্বল কাল সে সবল”। যেমন একটি খেলার উদাহরণও দেয়া যায় এই ক্ষেত্রে- ধরুন ইদুর ও বিড়াল বা চোর পুলিশ। আমাদের দায়িত্ব নিরীহ ইদুরকে বিড়ালের হাত থেকে রক্ষা করা কিন্তু এই রক্ষার মাধ্যমে নিরীহ ইদুরটিও বিড়ালের চেয়ে অনেক শক্তিশালী হয়ে পড়ল যা আমাদের অজানাই রয়ে গেল। তাই চোখ কান খোলা রেখে ঐ ইদুরটির নিরীহ ভাব দুর হলে বিড়ালটি নিরীহ ভাবে পরিণত হয় আর তখনই বিড়ালটিকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্বে অগ্রাধীকার পায়। তাই সাম্যের (ব্যালেন্স) রক্ষা করা আমাদের এই সময়ে যুগের সর্বোচ্চ দাবী। তবে খেলাটিতে ক্যরেক্টার চেইঞ্জ বা পারিবর্তনের বিষয় রয়েছে তাই বাস্তবতা পুরোপুরি বুঝা যায় আর আমাদের সময় ও জীবনে এমনকি সমাজে ঐ পরিবর্তনের চর্চাটুকু প্রায় অনুপস্থিত তাই এর আনয়ন জাগ্রত রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তবেই ভর্তুকীর বেড়াজালে জড়ানো শুভঙ্করের ফাকির বিষয়টির অবসান হবে।
এবার আসা যাক আমাদের মৌলিক চাহিদায় ভর্তুকীর প্রসঙ্গে। খাদ্যে ভর্তুকী দেয়া হচ্ছে কিন্তু এই ভর্তুকী গ্রহণে ভোক্তভোগীদের চেয়ে বেশী উপকৃত হচ্ছে ধনীক শ্রেণী এবং ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তের সহায়তাকারীরা। তাই ঐ ভর্তুকীতে নতুনত্ব আনয়ন জরুরী হয়ে পড়েছে। নিত্যপন্যের ঘাটতিতেও ভর্তুকীর ব্যবস্থা প্রচলন রয়েছে এই ক্ষেত্রেও কারণ অনুসন্ধান জরুরী হয়ে পড়েছে এবং এর নিরসনে কার্যকরী ভুমিকা প্রচলন জরুরী হয়ে পড়েছে। পুরাতনকে নতুনত্বে আবৃত করা এখন যুগের দাবী এবং এই ডিজিটাল যুগে কাজের এবং চিন্তার সমন্বয়ের বাস্তবায়ন দৃশ্যমান রাখাই বড় বিষয়। এবার গুরুত্বপুর্ণ আরেকটি বিষয়ে ভর্তুকী নিয়ে আলোচনা না করলেই নয়। সেই বিষয়টি হলো শিক্ষায় ভর্তুকী। তবে এই ভর্তুকীর পুরোটাই এখন আকার্যকর হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। কিভাবে ভর্তুকী দেয়া হয়- রাষ্ট্রের টাকায় এবং এই রাষ্ট্রের মালিক জনগণ সুতরাং ভর্তুকীর ঐ টাকাটা প্রকারান্তরে জনগণেরই। জনগণের টাকাই পড়ালেখা শিখে একেকজন বনে যাচ্ছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবি, বিভিন্ন পেশার সর্বোচ্চ পদধারী এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। আর ঐ পদ অলংকরনকারীরাই কিন্তু আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে, ফাকি দিচ্ছে করে, শুল্কে, মেরে খাচ্ছে জনগণের সম্পদ এবং অসহায়ের ভাগের অংশ। এই ভর্তুকীতে জ্ঞানঅর্জনকারীরা কিন্তু জীবনের, সমাজের, রাষ্ট্রের কোন কাজে বা প্রয়োজনে নিজের অর্জিত জ্ঞানের ভর্তুকী দেন না এবং ভবিষ্যতেও দিবেন না। তাই ঐ ভর্তুকীর ফল কি? কেনইবা আগামীর তরে ভর্তুকী প্রথা চালু থাকবে? এবার আসুন ডাক্তার বাবুদের কথা- তিনারা ভর্তুকীতে পড়ালেখা শেষ করে যখন কর্মের সঙ্গে যুক্ত হন তখনই শুরু হয় তুগলকী কান্ড। তিনারা ভুলে যান ঐ ভর্তুকীর কথা যার ফলশ্রুতিতে সেবার পরিবর্তে কশাইখানার কশাই সর্দারে পরিণত হন। অপরদিকে কোন সেবা প্রত্যাশী তাদের স্মরণাপন্ন হলে এমন ভাব ও আচরণ করে যেন উনারা মহাভারত জয় করে অত্যাচয্য একজন বনেছেন এবং তাঁর সেবা ও সম্মানে এমনকি তোয়াজে এই জাতির সবাই ব্যস্ত থাকবেন। বিনা পারিশ্রমিকে সেবা পাওয়া দুরূহ বিষয় বরং পারিশ্রমিক দিয়েও উপযুক্ত সেবাটুকু পাওয়া যায়নি এবং যাওয়ার কোন লক্ষণও দেখা দেয়নি। তবে ঐ ডাক্তারদ্বয়ের কাছে ধর্ণা দিয়ে দিয়ে সময় ও জোতার শুকতল্কা ক্ষয় হয়ে জীবনাসন ঘটে। তবে একটি বিষয় হলো ডাক্তার-রা মানুষকে সহায়তা করার কোন মানষিকতা রাখেন না বরং তারা অর্থ উপার্জনের নিমিত্তেই কাজ করেন। তবে অর্থ ও বিত্তশালীদের জন্য ঐ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, ব্যরিষ্টার এবং উচ্চশিক্ষিত উচ্চ পদস্থরাই সদা-হাস্যোজ্জ্বল বলিয়ান। তাই ভর্তুকীর গোরায়ই গলদ রয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। এই ভর্তুকীতে নতুনত্ব আনয়ন এখন যুগের দাবী। ডাক্তারগণ শুধু উদাহরণে কিন্তু ভর্তুকী দ্বারা উপকারভোগীরা সকলেরই এই একই ভাব গভেষনায় উঠে এসেছে। তবে লোকদেখানো কিছু বিষয় বাদে সবই যেন একই আবরণে বিভিন্ন প্রকাশ মাত্র।
যারা ভর্তুকীতে জীবনের মৌলিক চাহিদার কোনই যোগান নেন নি তারা কি ঐ একই কাজ করছেন নাকি অন্য কাজ করছেন তাও খতিয়ে দেখার বিষয়। যদি ঐ ভর্তুকীবিহীন মানুষগুলো সমাজের কাজে, দেশের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারেন এবং সেবা ও সত্য উপলব্দি করে জাতির কল্যাণে নিয়োজিত থাকতে পারেন তাহলে ভর্তুকী আশ্রীতরা কেন পারেন না তাও খতিয়ে দেখতে হবে। তবে এই দুইয়ের গবেষণালব্দ ফলই আগামীর দিকনির্দেশনা উন্মোচিত করতে সহায়তা করবে বলে বিশ্বাস। কোথায় অভাব এবং কিসের অভাব বুঝতেও সহায়তা করবে। তর্বে ভর্তুকীতে নতুনত্ব আনয়নের সুবর্ণ সুযোগ এখনই। তাই এই সুযোগকে কাজে লাগাতে যুগান্তকারী ব্যবস্থার আনয়ন জরুরী হয়ে পড়েছে। নতুন কি ব্যবস্থায় যাওয়া যায় তাই খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করছি। যেমন ধরুন যারা ভর্তুকীতে শিক্ষার সমাপ্তি টানবে তাদের কর্মসংস্থান হলে প্রথম দুই বা পাঁচ বছর বিনা বেতনে অথবা পেটে-ভাতে কাজ করে ভর্তুকী পরিশোধ করতে হবে। তারপর কর্মের উন্নতিতে জীবন জিবীকার অধিকার প্রতিষ্ঠায় সার্বিক অবস্থান তৈরীতে নিয়োজিত হবেন। অথবা ভর্তুকীকৃত অংশটুকু লোন হিসেবে পরিগণিত হবে যাতে করে কর্মসংস্থানের সাথে সার্থে মাসিক কিস্তির ভিত্তিতে ঐ ভর্তুকীর অংশ বেতন থেকে কেটে নিয়ে আগামীর ভর্তুকী নিশ্চিত রাখতে ব্যবস্থা সুদৃঢ় করতে হবে। এইগুলো ধারনা মাত্র কিন্তু এরচেয়েও আরও উন্নত ধারনার জ্ঞান ও গুণ এই দেশে বিদ্যমান রয়েছে। ভর্তুকীর সর্বক্ষেত্রে এবং সর্ববস্থায় এখন খতিয়ে দেখে ভাবতে হবে আর আগামীর কল্যানে নতুন পদক্ষেপে এগিয়ে আসতে হবে। পুরোনো ধ্যান ধারনায় এমনকি গতানুগতিক চিন্তাধারার বাইরে গিয়ে নতুন কিছু করার মানুষিকতায় পুরোনোকে বিদায় করে নতুনকে স্বাগতম জানাতে হবে নতুবা পিছিয়ে পড়ার সংস্কৃতির তলানিতে যাওয়ার পথ প্রসস্থ থেকে আরো প্রসস্থ হবে। তাই সময় এখনই ভেবে দেখার এবং কাজে রুপান্তরিত করার।
আসুন আমরা ভর্তুকী নিয়ে ভাবি এবং ভর্তুকী গ্রহন ও বর্জনে নীজ নীজ ভুমিকা রাখি। ভর্তুকীতে ভক্তি ও মুক্তি নেই বরং ভর্তুকীবিহীন জীবনের প্রতি ভক্তি ও মুক্তি এই বিশ^াসে বলিয়ান হই। আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে ভর্তুকীবিহীন জীবনের স্বাদ আস্বাদন করি। আর এই ক্ষেত্রে গত হওয়া মানুষদের জীবন ও কর্মকে গবেষনায় আনয়ন করে নিজের অবস্থান ঠিক করি। পরিশেষে বলতে চাই সৃষ্টিকর্তা এই ভর্তুকী ব্যবস্থায় কি বলছেন এবং কিভাবে এই ব্যবস্থাকে ঠিক রাখতে পারি সেই দিকে মনযোগ দিন। জ্ঞানের অভাব হলে সৃষ্টিকর্তার কাছে জ্ঞান যাচনা করি এবং সেই জ্ঞানেই মুক্তি নিহীত রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা কি ভর্তুকীতে নির্ভরশীল হতে বলেন না ভর্তুকীবিহীন জীবনের ইঙ্গিত তিনি নবি ও রাসুলগণের মাধ্যমে দিয়েছেন তা এখনই খতিয়ে দেখে আগামীর পদক্ষেপ নিন। কারণ আমাদের স্বনির্ভরতা নির্ভর করছে সম্পূর্ন সৃষ্টিকর্তার বিধানাবলীর উপর এর বাইরে নয়। তাই তাঁর বিধানে মনোনিবেশ করুন। শেষে বলি সৃষ্টিকর্তার কথা- তোমাদের জন্য আমার পরিকল্পনা আমিই জানি এবং সেই পরিকল্পনা তোমাদের মঙ্গলের জন্য অপকারের জন্য নয় বরং সেই পরিকল্পনার মধ্যেদিয়েই তোমাদের ভবিষ্যতের আশা পূর্ণ হবে।” তাই — তাই যেন হয় এবং সেই নিমিত্তেই যেন আমরা সকলে মনোনিবেশ করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.