ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি \ কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বাবাকে হত্যা ও ভাইকে গুম করার অভিযোগ উঠেছে ভগ্নিপতির বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ভগ্নিপতির নাম ইদ্্িরস সিকদার। তার বাড়ি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ থানার মাধবখালী গ্রামে। সে ওই গ্রামের মৃত আজিজ সিকদারের ছেলে। বর্তমানে ঢাকা শহরের শান্তিনগর সার্কিট হাউজ এলাকায় ভাড়ায় বাসায় বাস করে। বাসা নং-১/৫০৪।
অভিযোগকারীনি বিথি আক্তার জানায়, তার বড় ভগ্নিপতি ইদ্্িরস সিকদার মানব পাচার, সোনা চোরাচালনা ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। গত ১০ মাস পূর্বে তার মাধ্যমে বিথি আক্তার তার দেবরকে বিদেশে পাঠায়। সেই সুবাধে একাধিকবার তার বাসায় যাওয়া হয়। হঠাৎ কুদৃষ্টি পড়ে শ্যালিকা বিথি আকতারের উপর। একাধিকবার অনৈতিক কাজের কুপ্রস্তাব দেয় বিথিকে ভগ্নিপতি ইদ্রিস সিকদার। দারিদ্রতার সুযোগে একপর্যায়ে শ্বশুড়ের নিকট বিথিকে বিয়ের প্রস্তাবও দেয় কুলাংগার ইদ্রিস সিকদার। তাতে রাজি হয়নি শ্বশুর বারেক হাওলাদার। তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে তার মা-বাবা ও ভাইকে অর্থাৎ ইদ্রিস সিকদারের শ্বশুর-শাশুড়ী ও শ্যালককে গুম করা সহ মেরে ফেলার হুমকি দেয়। দুই সপ্তাহ আগে বিথিকে সাথে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ইদ্রিস সিকদার বিথির বাবা ও মামাকে পাঠায় বিথির শ্বশুর বাড়ি কসবা উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের নোয়াগাও গ্রামে। বিথি ভগ্নিপতির কুপ্রস্তাব ও হুমকির ভয়ে ঢাকায় যেতে রাজি হয়নি। গত ৬ নভেম্বর বিথির বাবা ও ভাইকে পাঠায় তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে। বিথি তাদের সাথে যেতে রাজি হয়নি। এ বিষয়ে গত ১৪ নভেম্বর আবারো অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের সাথে দিয়ে বাবা বারেক হাওলাদারকে পাঠায় বিথিকে ঢাকা নেয়ার জন্য। ভয়ে সন্ত্রাসীদের মেয়েকে ঢাকায় যেতে বললেও ইশারায় মেয়েকে নিষেধ করেন।
ওইদিনই কসবা থানায় ইদ্রিস সিকদারের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন বিথি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত সোমবার দিবাগত রাতে তার শ্বশুর বারেক হাওলাদারকে হত্যা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচারের অভিযোগ করেন বাদিনী বিথি আক্তার। গতকাল ঢাকা বাড্ডা থানা এলাকায় ইদ্্িরস সিকদারের নিজস্ব বাড়ি থেকে তার বিথির বাবার লাশ উদ্ধার করেন পুলিশ। বিথির একমাত্র ভাই সোহেল হাওলাদারকে গত ৪দিন যাবত গুম করে রাখার অভিযোগও রয়েছে ইদ্রিসের বিরুদ্ধে। বিথির বাবা বারেক হাওলাদার ছেলে গুম হওয়ার বিষয়ে বাড্ডা থানায় একাধিকবার ডাইরী করতে গেলে পুলিশ তার ডাইরী গ্রহন করেনি বলে জানায় বিথি। তার স্ত্রী লাকি আক্তার ফারজানাকে দিয়ে জোরপূর্বক বাবাকে মানসিক রোগী হিসেবে থানাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচার করে। বিথি জানায় তার বাবা সম্পুর্ন সুস্থ ছিলো এবং নামাজি ব্যক্তি ছিলেন। তার ভগ্নিপতি ইদ্রিস সিকদার এসমস্ত অপপ্রচার করছে।
বিথি আক্তার আরো বলেন, তার ভগ্নিপতি এক সময় ঢাকা শহরে রিক্সা চালাতেন। গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন অবৈধ ও অপকর্মে জড়িয়ে এবং মাদক ব্যবসা করে বর্তমানে শত শত কোটি টাকার মালিক। ঢাকা শহরে তার চারটি বিশাল বাড়ী রয়েছে। এছাড়াও দেশের বাড়িতে রয়েছে বিশাল গরুর খামার ও ফিড ব্যবসা। তার বিভিন্ন ব্যবসায়ীক পার্টনারের মনোরঞ্জনের জন্য এবং তার সাথে অনৈতিক কাজ করার জন্য আমাকে প্রস্তাব দেয় সে। সে আমাকে রক্ষিতা হিসেবে রাখতে চায়। তার এসকল কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অবৈধ টাকার গরমে আমার বাবাকে মেরে আত্মহত্যা বলে চালাচ্ছে ইদ্রিস সিকদার। আমার বাবা চরমোনাইর মুরিদ ছিলো। সে আত্মহত্যা করতে পারেনা। তার দেয়া প্রাণনাশের হুমকির ভয়ে আমি বাবার লাশটাও দেখতে যেতে পারছিনা। সুবিচার পেতে বিথি আক্তার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী সুদৃষ্টি কামনা করেন।
নোয়াগাও গ্রামের বাসিন্দা আবদুল কাইয়ুম মোল্লা জানান; বিথি আমার শ্যালকের স্ত্রী। গত কিছুদিন যাবত বিথিকে ঢাকা নেয়ার জন্য একাধিকবার বিথির ভগ্নিপতি গাড়ি পাঠিয়েছে। বিথি থেকে আমরা সবকিছু অবগত হয়ে এ বিষয়ে কসবা থানায় গত ১৪ নভেম্বর অভিযোগ দায়ের করেছিলাম।
এদিকে কসবা থানার অভিযোগের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আবদুর রাজ্জাক বলেন; অভিযোগটি তদন্তাধিন রয়েছে। তবে বাড্ডা থানার বিষয়টি আমরা অবগত নই।
এ ব্যাপারে বাড্ডা থাানার ওসি (তদন্ত) আবু সাইদের সংগে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান; বারেক হাওলাদার মানসিক রোগী এ কথা আমি বলিনি। তবে তার ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে এরকম ব্যবস্থা তার বড় মেয়ে ফারজানা আক্তার ও জামাতা ইদ্রিস সিকদার আমাদের দেখিয়েছে।
এ বিষয়ে বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বারেক হাওলাদের ঝুলন্ত লাশ আমরা উদ্ধার করেছি। ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।