বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও আমরা

আজ (১৬/১২/২০২১) বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের ৫০ বছর পূর্তী উদযাপীত হচ্ছে। যাকে আমরা সুবর্ণজয়ন্তী বলে আখ্যায়ীত করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের স্রষ্টার বয়র যখন ১০০ বছর উদযাপীত হচ্ছে ঠিক তখন তাঁরই সৃষ্টি এবং তাঁরই সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকা এই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের হলো ৫০ বছর আর আমার হলো ৪৯ বছর। কি পেলাম আর কি হারালাম এর মধ্যেই নিহীত রয়েছে আমাদের এই সুবর্ণজয়ন্তীর নাতিদীর্ঘ উপাখ্যান। এই উপাখ্যানকে এখন নতুন করে ইতিবাচক ভুমিকায় দৃশ্যায়ন করে নতুনত্বের সুনিবিড় পরিচর্যায় উন্নত রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্জনে এবং স্থায়ীত্বে কাজ করার প্রত্যয় ও অঙ্গিকার ব্যক্ত করাই হউক আমাদের সকলের ঐকান্তিক কাম্য। দলীয়, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক এবং সামাজিক ও ধর্মীয় এমনকি গোত্রীয় আঙ্গিকের বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আসার প্রতিজ্ঞায় জাতি আরেকটিবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দৃশ্যায়মান হউক এই সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অঙ্গিকারে।
আজ আমার গর্ব হচ্ছে যে, জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে এবং আমিও এর শরীক হতে পেরেছি। কারন বহু গুণী ও জ্ঞানী মানুষ আজ এই সুখস্মৃতিতে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেনি; কারন-কারো কারো জীবনের অধ্যায় শেষ আর কারো কারো জীবনের অধ্যায়ে বার্ধক্য এমনকি বিভিন্ন রোগ ও সাজাভোগে বঞ্চিত। তবে আমি সমস্ত প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে আজকের দিনে শরীক হতে পেরে গর্বীত বোধ করছি। শৈশব থেকেই এই বিজয় দিবস উদযাপন করে আসছি, এই দিবসকে কেন্দ্র করে লিখা ও বাণী প্রকাশ করছি; নাটক ও সাংস্কৃতিক অনূষ্ঠান এমনকি আলোচনা সভাও করেছি। সারাদিন বিভিন্ন কাজে জড়িত থেকে এই দিবসটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পুর্ণতা দিতে চেষ্টা করেছি। এই দিসব সম্পর্কে দাদা, নানা, বাবা ও চাচাদের কাছ থেকে কষ্টমাখা দিনগুলোর পরে পাওয়া এই বিজয় সর্ম্পকে অনেক গল্প ও বাস্তব কাহিনী শুনেছি। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের কঠিন সময় পারি দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার কাহিনীতে আমি যুক্ত থাকতে পেরেছি। কারণ আমার পরিবারের সবাই মুক্তিযোদ্ধা এবং আত্মীয় স্বজনেও সবাই মুক্তিযোদ্ধা এমনকি শহীদ পরিবারের সদস্য। তাই আমি যদিও স্বশরীরে মুক্তিযুদ্ধ করতে পারিনি তবে মুক্তিযুদ্ধার রক্ত প্রবাহিত এই দেহে এবং দ্বীতিয় প্রজন্মের একজন আপোষহীন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে দাবি করছি এর পাশাপাশি গর্ববোধও করছি। আন্দোলন, সংগ্রাম ও জেল-জুলুম এবং নির্যাতন শয্যকরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের এমনকি দেশ গড়ার কারিঘরদের একজন হিসেবে গর্ববোধ করছি। আজকের দিনে স্বশ্রদ্ধচিত্ত্বে শ্রদ্ধাবনত মস্তকে মাথা নত করছি জাতীর বীর সেনানীদের প্রতি; শহীদদের প্রতি, বুদ্ধিজীবিদের প্রতি, নির্যাতিত এমনকি সম্ভ্রম হারানো মা ও বোনদের প্রতি; সর্বশেষে বলতে চাই যার পরিচালনায়, ইচ্ছায়, আকাঙ্খায় এবং দিকনির্দেশনায় ও আহবানে অর্জীত এই বিজয় সেই মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু ও তৎপরে জাতীর জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে। যিনি জন্ম না হলে এই বাংলাদেশ নামক ভুখন্ড আমরা পেতাম না। যার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও আভির্ভাব না থাকলে আজকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারতাম না; তাকে ও তাঁর পরিবারকে জানাই হাজার সালাম; (গুরু তোমায় প্রনাম)।
অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে আজ আমরা এসে পৌঁছেছি কাংখিত লক্ষের দ্বারপ্রান্তে। তবে এই ভূখন্ডের স্থপতী যদি বেচেঁ থাকতেন তাহলে হয়ত এত চড়াই উৎরাই পার হওয়ার প্রয়োজন ছিল না এমনকি বর্তমান দৃশ্যমান বৈশিষ্ট্যের অসামঞ্জস্যতাও আর আপসারণের প্রয়োজন পড়ত না। তবে আশার কথা হলো বাঙ্গালী পেরেছে তার প্রমান বার বার রেখেছে। এই প্রমানে যুক্ত থেকেছে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা জীবন দিয়েও অমর এবং তাদের জীবনের শুরু এবং শেষ বিশ্লেষণে আমাদের জন্য শিক্ষা ও দিক নির্দেশনা রয়েছে। আসুন আমরা এই বিজয়ের দিনে সুবর্ণজয়ন্তী পালনের মাধ্যমে ঐ শিক্ষা ও ত্যাগ এবং দিক নির্দেশনাগুলো গুরুত্বের সহিত নিজ নিজ জীবনে প্রয়োগ করি। কমান্ড ও অনুসরণ এবং অধিনস্ততা কাকে বলে তার শিক্ষা হলো আমাদের স্বাধীনতা অর্জন এবং জাতীয় চার নেতার জীবন উপাখ্যান। তাই আসুন আমরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে সেই চেতনার ধারক ও বাহক হই এবং তাদের জীবন কর্ম এবং জীবনাবসান থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর জীবন, পরিবার ও রাষ্ট্র এবং সমাজ ব্যবস্থাকে সাজাই। তবে এই ক্ষেত্রে পুর্বের ন্যায় এখনও যে সকল প্রতিকূলতা বিরাজমান রয়েছে তার অবসানকল্পে জরুরী ভিত্তিতে অতি গুরুত্বের সহিত প্রধিকার দিয়ে কাজ করার নব অঙ্গিকারে আবদ্ধ হই। বঙ্গবন্ধুর চেতনার ধারক ও বাহক এবং তাঁরই রক্তের প্রবাহমান ধারাবাহিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বিশ্ব মানবতার মা এবং জননেত্রী এমনকি সৎ শাষকের তালিকার প্রধানতম অলংকরণ আর উন্নয়ন রোল মডেলের একমাত্র ধারক ও বাহক অথবা রূপকার যিনি বিশ^বিক্ষায় (বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গিতে) রাজনীতি, নীতি ও আদর্শ, সততা এবং কঠোর পরিশ্রমী, সফল পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী, দুরদর্শী, চিন্তাশীল, বিচক্ষণ ব্যক্তি, সাহসী পদক্ষেপে নির্ভয়ে এগিয়ে যাওয়ায় দৃঢ়চেতা মনোভাব বাস্তবায়নরত অবস্থানের ক্ষেত্রে শিক্ষক হিসেবে অভির্ভূত তিনি হলেন আমাদের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া আশির্বাদ; অসহায়ের আশ্রয় এবং বিশ্ব বিভেকের শেষ ভরসাস্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (যিনি আমাদের কারো কারো কাছে হাসু আপা, কারো কারো কাছে মা জননী, কারো কারো কাছে বুবু, কারো কারো কাছে ফুফু, দাদী, আন্টি, চাচিআম্মা এনমকি আরো কতোকি)।
হ্যা আমাদের উন্নয়ন এর সুতীকাঘার রচিত হয়েছিল সেই বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই আর সেই হাতের মজবুত ভিত্তিটুকু এখন সফলতার শীর্ষে পৌঁছে দিতে কঠোর ও কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছেন তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা মহিয়সী নারী শেখ হাসিনা। তবে এখনও সেই বঙ্গবন্ধু আমলের নেতিবাচকতা মিশ্রিত ষড়যন্ত্রের রেষ কাটেনি বরং এর মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে যা দেশে বিদেশে দৃশ্যমান রয়েছে। তাই এই মাত্রায় শিথীলতা আনয়ন করে শুন্যের কোটায় নিয়ে আসা এখন আমার ও আপনার সকলের দায়িত্ব। তাই এই দায়িত্ব বহন এবং পালন করার নির্মিত্তে আমাদের সবাইকে এই বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে এক কাতারে এসে দাঁড়াতে হবে এবং বিভিন্ন বিষয়ের সমাধানে দৃঢ় শপথ গ্রহণ করতে হবে। করণ এই সোনার বাংলা পরিপূর্ণতাই পরিপূর্ণ হতে হলে প্রয়োজন আমাদের সকলের আরেকটিবার গর্জে উঠা এবং এখনই সময় ঐ গর্জে উঠার আর নেতাও রয়েছেন আমাদের সম্মুর্খে। তিনি বঙ্গবন্ধুর মতই জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন যোগ্য কান্ডারী হিসেবে লক্ষ্যের দ্বাড়প্রান্তে। দেশী ও বিদেশী ষঢ়যন্ত্র মোকাবিলায় সেই ৭১’র মত আরেকটিবার গর্জে উঠুন এবং নতুন প্রজন্ম পুরোনোদের নিয়ে এক অবিচ্ছেদ্য দেয়াল রচনা করে বাংলাদেশ এবং এই দেশের ইতিহাসকে মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে বিশ্বকে নতুন শিক্ষার সিলেবাস রচনায় সহায়তা করুন। আর ইতিহাস নয় বরং শিক্ষার সিলেবাসে প্রতিটি অর্জনকে স্থায়ীত্ব দিতে কাজ করুন।
লিখা লিখে এমনকি কথা বলে শেষ করার নয় এই বাংলা এবং বাঙ্গালী এমনকি এই দেশের উন্নয়নকাব্য। যা ইতিমধ্যে মহাকাব্যে পরিণত হয়েছে; যা অনেকে তাঁর ভাষাগত জ্ঞান ও মাধূয্য দিয়ে অনেক উপাধিতে পরিণত করেছেন। তবে নতুন করে বলতে চাই আসুন আমরা সঠিক ইতিহাস জানি এবং সঠিক ইতিহাস বলতে ও লিখতে উৎসাহিত করি। ভুল ও মিথ্যা ইতিহাসের করব রচনায় মনোনিবেশ করি এমনকি ভুল ইতিহাস প্রবক্তাদের বাধ্যকরি সঠিক ইতিহাসের ছায়াতলে ফিরে আসতে। ইতিবাচক ও সঠিক ইতিহাসের চলমান ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ ও মাদ্রাসায় শিক্ষার সিলেবাসে যুক্ত করি; শুধু দেশে নয় বরং বিশ্ব শিক্ষালয়ে এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে শিক্ষার স্থান ও কালের প্রেক্ষিতে বাংলা ও বাঙ্গালী এবং এর সংগ্রামী অগ্রযাত্রাকে ১ম স্থানে আসীন করাই। ইতিমধ্যে বিশ্ব রাজনীতি ও উন্নয়নে বাংলাদেশ অধ্যায় যুক্ত হয়েছে কিন্তু ব্যাপকাকারে এর বিস্তার ঘটাতে আরো কাজ করে যেতে হবে। এই সুবর্ণজয়ন্তী আমাদেরকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাক আমাদের বিশ্ব শিক্ষার সিলেবাসের ব্যপকতায়। জয় হউক ইতিহাসের ১ম সুবর্ণজয়ন্তী এবং রজতজয়ন্তীর। এর ধরাবাহিকতায় টিকে থাকুক আমাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, কালচার, সম্বৃদ্ধির অগ্রগতির ক্রমবর্ধমান ধারাবাহিকতা। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.