ঈসা মসীহের জন্মোপলক্ষে বিশ্লেষনাত্মক আলোচনা:

শুভ বড়দিন (ঈদুল মসীহ): ধন্যবাদ খোদাকে তাঁর পরিকল্পনার জন্য এবং আজকের এই বিশেষ দিনের জন্য। খোদার নামেই আরম্ভ করছি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। আমরা দেশী-বিদেশী বিখ্যাত ব্যক্তিদের অনেকেরই নাম জানি। তাদের কারো সম্পর্কে অনেক কিছু জানি আবার কিছুই জানিনা। ইহা একটি সাধারণ ব্যাপার। আজ আমরা খুজে বের করব সেই বিখ্যাতদের বিখ্যাত কিতাবুল মোকাদ্দস স্বীকৃত এমন একজন ব্যক্তিকে যার এই পৃথিবীতে আগমন উপলক্ষ্যে আমাদের আজকের এই আয়োজন। যার উপলক্ষ্যে আজকে আমরা একত্রিত হয়েছি তাঁর সম্পর্কে কিছু জানব এবং আমাদের সাধারণ চিন্তা থেকে কিছু প্রশ্ন উপস্থাপন করব।
১। তিনি কে?
২। তিনি কোথায় এসেছিলেন?
৩। কখন তিনি এসেছিলেন?
৪। কেন তিনি এসেছিলেন? ইত্যাদিঃ
আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খুজে পাওয়ার জন্য কিতাবুল মোকাদ্দস ব্যবহার করব। কিতাবের আয়াত পাঠ করেই আমরা প্রশ্নের উত্তর এবং আমাদের জীবনের সমাধান পাব বলে আমার বিশ্বাস। আমার ধারনা যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে বুঝতে পারব এবং অনুভব করতে পারব কেন ঈসা মসীহ পৃথিবীতে বিখ্যাত ও অতি পরিচিত?
১। তিনি কে আমরা সকলেই জানি। তিনি হলেন ঈসা মসীহ। যার জন্য আজকের এই আয়োজন।
২। কোথায় তিনি এসেছিলেন ? প্যালেষ্টাইন বা ইসরাইল। আমার প্রশ্ন ইহা কি একটি বড় দেশ? না! ছোট। আমার উত্তরের সাথে আপনাদের সকলের উত্তর এক হবে বলে আমার বিশ্বাস। ইসরাইল বা প্যালেষ্টাইন দেশের আয়তন ২০,০০০ বর্গ মাইল আর আমাদের বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৪,০০০ বর্গ মাইল। যা বাংলাদেশের চেয়ে ৭গুন ছোট। আল্লাহ তাঁর নবীদেরকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন তাঁর মসীহের জন্ম সেখানে হবে। কেন আল্লাহ ইব্রাহীমকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন এবং মূসাকে বলেছিলেন ইব্রাহীমের সন্তানদেরকে মিশরের বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে সেখানে (ইসরাইল/প্যালেষ্টাইন) নিয়ে যাও? কেন মসীহ সেখানে এসেছিলেন? দয়া করে আপনারা ম্যাপ দেখবেন এবং ম্যাপে সেই জায়গাটি চিহ্নিত করবেন। পৃথিবীর কোন স্থানে বা অবস্থানে ঐ জায়গাটি অবস্থিত তাও চিন্তা করবেন। এই চিন্তার অবসান ঘটানোর লক্ষে চলুন আমরা কিতাবুল মোকাদ্দস এর হেজকিল ৫ঃ৫ আয়াত পাঠ করি “আমি আল্লাহ মালিক বলছি; এই হল জেরুজালেম। তাকে আমি জাতিদের মাঝখানে স্থাপন করেছি; তার চারপাশে রয়েছে নানা দেশ। পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থান হল জেরুজালেম। যার চারিদিকে বিভিন্ন দেশে ঘেরা এবং অনেক জাতির বসবাস। এই কারণেই আল্লাহ তাঁর নবীদেরকে সেখানে পাঠিয়েছেন। জেরুজালেম নামের অর্থ হল শান্তির শহর। যার উদ্দেশ্যে আজকের এই লিখা আর তিনিই হলেন ঈসা মসীহ; যার প্রতি শান্তি ছিল, আছে এবং থাকবে অনন্তকাল। তিনি (ঈসা মসীহ) জন্মেছিলেন কোথায়? বেথেলহেম। যার অর্থ পবিত্র স্থান। বেথেলহেমের অবস্থান ছিল জেরুজালেম শহরের একটু বাইরে। আমরা হেজকিল ৫ঃ৬ আয়াত পাঠ করি। “কিন্তু সে তার খারাপির জন্য আমার শরীয়ত ও নিয়মের বিরুদ্ধে তার চারপাশে নানা জাতি ও দেশের চেয়েও বেশী বিদ্রোহ করেছে। সে আমার শরীয়ত অগ্রাহ্য করেছে এবং আমার নিয়ম মেনে চলেনি”। আমরা জেনেছি সমস্ত জাতিদেরকে অশান্তি ও বিশৃংখলা থেকে মুক্ত করে মাবুদ তাঁর শান্তির শহরে বসবাস করার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু সেই শান্তির শহরে আমরা থাকতে পারিনি বরং সকল পাপের রেকর্ড ভঙ্গ করে আরো বেশী পাপী হয়েছি? যার কারণে মাবুদের পৃথিবীতে আসতে হল।
৩। কখন তিনি এসেছিলেন ঃ আজ থেকে প্রায় ২০০০ হাজার বছর আগে। আরো স্পষ্টভাবে জানতে পারব ইবরানী ১ঃ১ আয়াত পাঠ করে। “অনেক দিন আগে নবীদের মধ্যদিয়ে আল্লাহ আমাদের পুর্বপুরুষদের কাছে নানাভাবে অনেকবার অল্প অল্প করে কথা বলেছিলেন। কিন্তু এই দিনগুলির শেষে তিনি তাঁর পুত্রের (রূহানী পূত্রের) মধ্যদিয়ে আমাদের কাছে কথা বলেছেন।”
মাবুদ আল্লাহ যুগ যুগ ধরে আমাদের কাছে তাঁর নবীদের মাধ্যমে আমাদের পাপের কথা বলেছেন ও পাপ থেকে মুক্তি পাবার কথাও বলেছেন। মাবুদ আল্লাহ পবিত্র। তিনি তাদের মাধ্যমে এই কথাও ঘোষনা করেছেন। আর এইজন্যই আমাদেরকে পবিত্র রাখতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন। তিনি আইন –কানুনের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু সেই আইন কানুন অমান্য করে আমরা অবাধ্য হয়েছি বার বার। যার শুরু হয়েছিল বাবা আদমের মাধ্যমে। আর এই কারণেই মাবুদ আল্লাহ তাঁর মনোনীত একমাত্র রূহানী পুত্র ঈসা মসীহকে এই পৃথিবীতে যুগের শেষে যখন সকল কিছু প্রস্তুত ছিল তখন পাঠালেন এবং তাঁর কাজের সমাপ্তি টানলেন।
৪। কেন তিনি এসেছিলেন ঃ
ক) তিনি আমাদেরকে আইন কানুন দিতে আসেন নি। যাহা ভাল এবং দরকার তাহা দিতে এসেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তাঁর আইন কানুন দিয়েছিলেন পূর্বের নবীদের কাছে। আমরা জানি আদম এবং হাওয়াকে কতগুলি আইন দিয়েছিল? তারা কি সেইগুলির বাধ্য থাকতে পেরেছিল বা পালন করেছিল? আমরা এও জানি তুর পাহাড়ে মূসা কতগুলো আইন বা নিয়ম আল্লাহর কাছ থেকে গ্রহন করেছিল? মূসার শরীয়ত অনুসারীরা কি সেগুলির বাধ্য থাকতে পেরেছিল? আমরা দেখেছি আইন প্রমান করে আল্লাহর পবিত্রতার কথা এবং আমাদের অবাধ্যতার বা গুনাহের কথা। আমাদের সমস্যা আল্লাহর দেয়া আইনের সাথে সম্পৃক্ত নয়। সমস্যা এইখানে যে, আমরা এই আইনের বাধ্য হয়ে চলতে পারি না। এই আইন আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, আমাদের প্রয়োজন আল্লাহর রহমতের। প্রত্যেক মানুষই যে পাপী তার অসংখ্য প্রমান পাই বাবা আদম থেকে আরম্ভ করে মহা মানব –মানবীর জীবনের দিকে তাকালে। পাপী বলে আমাদের প্রত্যেকেরই প্রয়োজন পাপ থেকে মুক্তি।
খ) তিনি ঝগড়া করতে আসেননি এমনকি যুদ্ধের দামামা বাজাতেও নয়। মন্দ অবস্থার জন্যও নয়। মূসা থেকে দাউদ পর্যন্ত নবীরা যা করেছিল তা করতেও নয়। আর এইজন্য আমরা মার্ক ১০ঃ৪৫ আয়াত পাঠ করি। “মনে রেখো, ইবনে আদম সেবা পেতে আসেননি বরং সেবা করতে এসেছিলেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছিলেন।” আজকের আগমন তার সেবা পাওয়ার জন্য নয় যেমনিভাবে সেনাবাহীনির প্রধান, প্রেসিডেন্ট, প্রধান মন্ত্রী সেবা পান। তিনি সেবা দিতে এসেছিলেন এবং আবারও তাঁর দ্বিতীয় আগমন হবে বিশ্বাসীদের সেবা দেয়ার জন্য। মোটকথা বিশ্বাসীদেরকে স্বাগতম জানিয়ে রাজাদের রাজা এবং প্রভুদের প্রভু হয়ে একসাথে সকলকে নিয়ে বেহেশতে প্রবেশ করার জন্য। এটাই ছিল তাঁর আইন।
গ) তিনি শুধু শিক্ষা দেওয়া এবং মোজেজা বা অলৌকিক কাজ দেখাতে আসেসনি; যদিও তিনি তাহা করে দেখিয়েছেন। পবিত্র ইঞ্জিল শরীফে তিনি বলেন তাঁর পৃথিবীতে রাজত্ব কালীন সময়ে বিভিন্ন কাজ করেছেন এবং বলেছেন এখনও আমার সময় হয়নি। হ্যা এখানেই প্রশ্ন সেই সময় কোনটি। আমরা জানি তাঁর চলে যাওয়ার পর পৃথিবীতে তাঁর কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য লোক প্রস্তুত করা এবং নির্বাচন করা এমনকি বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া শেষে পাপীদের জন্য ক্রশে (সলিবে) প্রান দেওয়া ছিল তাঁর কাজ।
ঘ) তিনি ক্রশে (সলিবে) প্রাণ দেওয়ার পূর্বেই বলেছিলেন যে আমার সময় হয়েছে। এই প্রাণ দেয়াটাই মুখ্য বিষয়। তিনি ক্রশে (সলিবে) প্রাণ দিতে এসেছিলেন। তাঁর জন্ম ছিল এই মৃত্যুর জন্য। খুবই অসারণ ব্যপার। যাক আমরা মার্ক ১০ঃ ৪৫ আয়াত স্মরণ করি “মনে রেখো, ইবনে আদম সেবা পেতে আসেননি বরং সেবা করতে এসেছিলেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছিলেন।”
তিনি আমাদের পাপের কাফ্ফারা দিতে এসেছিলেন এবং ক্রশে (সলিবে) তা দিয়েছেন যাতে আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে পারি।
ঙ) আজ ২৫শে ডিসেম্বর। যাকে বলা হয় বড় দিন। নিশ্চয় আমরা জানি এই দিনে কি হয়েছিল এবং কেন হয়েছিল ও কাদের জন্য হয়েছিল। পবিত্র ইঞ্জিল শরীফ বলে তিনি বন্দিদের কাছে মুক্তির কথা ঘোষনা করতে এসেছিলেন। পাপীদেরকে পাপ থেকে মুক্ত করার জন্য এবং আল্লাহর সাথে যোগাযোগ সম্বন্ধ স্থাপন করার জন্য এসেছিলেন। তাই আজ আমরা যারা ঈসা মসীহকে জানি এবং তাকে আমাদের নাজাতদাতা হিসাবে গ্রহন করেছি তারা আজকে নুতন করে শপথ নিব যেন আমরা তাঁর উপর বাধ্য থেকে নির্ভর ও বিশ্বাস নিয়ে কাজ করতে পারি। বিগত দিনের ছোট ছোট ভুলগুলি স্বীকার করি এবং সামনে যেন এই ভুল থেকে শুধরিয়ে নতুন এবং সম্পূর্ণ মসীহি জীবন যাপন করতে পারি; কিন্তু যারা আজও তাকে জানেনা তাদেরকে জানানোর জন্য মসীহের দেয়া শিক্ষায় অগ্রসর হতে পারি। আজ এখানে আমরা যারা উপস্থিত আছি বা লিখাটি পড়ছি কিন্তু এখনও মসীহকে নাজাতদাতা হিসাবে স্বীকার করিনি তারা স্বীকার করে নত’ন জীবন লাভ করতে পারি। একমাত্র পৃথিবীতে ঈসা মসীহই এসেছেন পূর্ণাঙ্গ স্বাধিনতা দেয়ার জন্য এবং তিনি আমাদেরকে স্বাধীন জীবন দিয়ে গেছেন। যা আজ আমরা প্রত্যেক বিশ্বাসীরাই উপভোগ করে যাচ্ছি।
৫। কাদের জন্য তিনি এসেছিলেন ঃ তিনি কখনো শক্তিশালী, ভাল লোক এবং ধার্মীকদের জন্য আসেননি। অনেকেই বলতে পারেন যে আমাদের আল্লাহর রহমতের প্রয়োজন নেই। এই কথাটি যে কেউ পছন্দ করতে পারে আবার নাও পারে। কিতাবুল মোকাদ্দস প্রমান করে যে আমরা সবাই পাপী। হ্যা আমরা নিজেরাও তা দেখি এবং জানি। অনেকেই নিজের পাপ দেখতে চায়না। আবার অনেকেই পাপ দেখে কিন্তু অস্বিকার করে বলে ইহাই শক্তিশালী এবং এর মাধ্যমেই আল্লাহর গৌরব ও প্রশংসা করা যায়। যারা মনে করে তাদের সেই ভুল পথই ভাল এবং শক্তিশালী; আসলে কি তাই? কোনটি সঠিক ও নির্ভুল তা যাচাই করে দেখুন।
আমরা এই অংশে দেখেছি এবং জেনেছি ঈসা মসীহ ও বড়দিন সম্পর্কে যাকে আমরা ঈদুল মসীহ্ বলে থাকি। আমাদের ঈদ হল আজকের এই দিনে। আজকের এই অংশে আমরা এও জেনেছি যে তিনি কোথায় এসেছিলেন; কখন এসেছিলেন; কেন এসেছিলেন এবং কাদের জন্য এসেছিলেন?
ক) এই প্রশ্নগুলি অবশ্যই আমাদের জীবনের সমাধান দিতে পারে; যদি আমাদের জন্য তিনি আসেন। হয়ত কারো উত্তর হা বা নাও হতে পারে। যদি আমরা আমাদের নিজ নিজ পাপ স্বীকার করি এবং আল্লাহর দয়া ঈসা মসীহকে আমাদের নাজাতদাতা হিসাবে গ্রহন করি। ইহা ছাড়া আমাদরে সামনে আর কোন সুযোগ বা পথ খোলা নেই। আমরা ভাবতে পারি এবং পছন্দও করি যে আল্লাহর কাছে যাওয়ার অনেক সুযোগ আছে। হ্যা এই সম্পর্কে পবিত্র ইঞ্জিল শরীফ এর প্রেরিত খন্ডে ৪ঃ১২ আয়াত কি বলে দেখি, “নাজাত আর কারো কাছে পাওয়া যায় না, কারণ সারা দুনিয়াতে আর এমন কেউ নেই যার নামে আমরা নাজাত পেতে পারি”। একমাত্র ঈসা মসীহের কাছেই নাজাত রয়েছে আর আমরা তাঁর নামের উপরই দাড়াতে পারি।
খ) যদি আমরা আমাদের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে থাকি তাহলে আমরা তাকে গ্রহন করব এবং আমাদের ২য় প্রশ্নের দিকে যাব যা আমরা কি তাঁর বাধ্য থাকব? যখন আমরা তাকে আমাদের নাজাতদাতা হিসাবে গ্রহন করি, তখন থেকেই তিনি আমাদের প্রভু, তিনিই একমাত্র প্রভু এবং আমরা অবশ্যই তাঁর বাধ্য থাকব। হ্যা তিনিই ব্যতিক্রম এবং আমাদের চিন্তার শিক্ষক। তিনি জাগতিক শিক্ষকদের মত শিক্ষক নন। তিনি ভালোবাসার শিক্ষক যা আমাদের অক্ষমতাকে শক্তিদিয়ে রহমতের মাধ্যমে পূর্ণ করেন এবং অসাধ্য কাজ তাঁর শক্তিতে আমাদেরকে ব্যবহার করে সমাধা করেন। সকল অবস্থায় আমাদেরকে পরিচালনা করে যাচ্ছেন তিনি স্বয়ং নিজে। আমাদের অধার্মিকতা সকল মুছে দেন এবং পবিত্র রাখেন যাতে তিনি আমাদের মাঝে বাস করতে পারেন।
গ) কি তাঁর আদেশ এবং মহিমা ঃ আমরা তাঁর পৃথিবীতে আগমনের কথা চিন্তা করি। কিন্তু এখন অন্য নবীদের জীবনের শেষ দিক চিন্তা করি এবং তাঁর (মশীহের) শেষ দিক চিন্তা করি। এই শেষ চিন্তা বা আদেশ যা ঈসা মসীহ বেহেশতে যাওয়ার পূর্বে আমাদেরকে বলেছিলেন মথি ২৮ ঃ ১৮-২০ আয়াত পাঠ করি “ তখন ঈসা কাছে এসে তাদের এই কথা বললেন, ““বেহেশতের ও দুনিয়ার সমস্ত ক্ষমতা আমাকে দেয়া হয়েছে। এইজন্য তোমরা গিয়ে সমস্ত জাতির লোকদের আমার উম্মত কর। পিতা, পুত্র ও পাক রূহের নামে তাদের তরিকাবন্দি দাও। আমি তোমাদের যে সব হুকুম দিয়েছি তা পালন করতে তাদের শিক্ষা দাও। দেখ, যুগের শেষ পর্যন্ত আমি তোমাদের সংগে সংগে আছি” আমিন।
এবার পবিত্র কোরআন এই বিষয়ে কি বলে তা উল্লেখ করে শেষ করছি।
মাবুদ অল্লাহ কোরআন দ্বারা প্রমান করেছেন যে, নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, যারা ইহুদী এবং খৃষ্টান অথবা সাবেয়ী হয়েছে এদের যে কেউ আল্লাহ এবং শেষ দিবসে বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার আছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দু:খিত হবে না (আয়াত ৬২, ২ নং সূরা বাকারা)।
৫ সূরা আল মায়েদা আয়াত ৬৮: বল, ‘হে কিতাবধারীগণ! তওরাত, ইঞ্জিল ও যা তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা তা প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত তোমাদের কোন ভিত্তি নেই।’ তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তাদের অনেকের ধর্মদ্রোহিতা ও অবিশ্বাসই বৃদ্ধি করবে।
৪ সূরা নিছা আয়াত ১৩৬: হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহতে, তাঁর রসুলে, তিনি যে কিতাব তাঁর রসুলের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন তাতে এবং যে কিতাব তিনি পূর্বে অবতীর্ণ করেছেন তাতে বিশ্বাস কর; আর যে কেউ আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রসুলগণ এবং পরকালকে অবিশ্বাস করবে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।
৩ সূরা আলে ইমরান আয়াত ৪৫-৫১: যখন ফেরেস্তাগণ বলল হে মরিয়ম নিশ্চয় আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তোমাকে একটি কথার সুসংবাদ দিচ্ছেন। যার নাম হবে মসীহ মরিয়ম পুত্র ঈসা। সে হবে দুনিয়া ও আখেরাতের সম্মানীত এবং সান্নিধ্য লাভকারীদের অন্যতম। সে দোলনায় থাকা অবস্থায় ও পরিণত বয়সে মানুষের সাথে কথা বলবে এবং সে হবে নেককারদের একজন। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি আমার সন্তান হবে কিভাবে? তিনি বললেন এভাবেই। আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেন ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়। আর তিনি তাকে শিক্ষা দেবেন কিতাব, প্রজ্ঞা, তওরাত ও ইঞ্জিল এবং বণি ইস্রাঈলদের জন্য তাকে রসুল করবেন। সে বলবে, আমি তোমাদের কাছে নিদর্শন এনেছি। আমি তোমাদের জন্য মাটি দ্বারা একটি পাখি সর্দৃশ আকৃতি গঠন করব অত:পর আমি তাতে ফুঁ দেব ফলে আল্লাহর অনুমতিক্রমে তা পাখি হয়ে যাবে। আমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ ব্যধিগ্রস্তকে নিরাময় করব এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে মৃতকে জীবন্ত করব। আর তোমরা তোমাদের গৃহে যা আহার কর ও জমা রাখ তা তোমাদের বলে দেব। নিশ্চয়, এতে তোমাদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে, যদি ঈমানদার হও। আর আমি এসেছি আমার কাছে যে তওরাত আছে, তার সমর্থকরূপে ও তোমাদের জন্য যা নিষিদ্ধ ছিল তার কতগুলোকে বৈধ করতে এবং আমি তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমাদের নিকট নিদর্শন এনেছি সুতরাং আল্লাহকে ভয় আর আমাকে অনুসরণ কর। আল্লাহ আমার প্রতিপালক এবং তোমাদের প্রতিপালক সুতরাং তোমরা তাঁর উপাসনা করবে এটিই সরল পথ।
১৯ সূরা মারইয়াম আয়াত ১৭-৩৪: অত:পর তাদের নিকট থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য সে পর্দা করল। অত:পর আমি তার নিকট আমার জিব্রাইল পাঠালাম, সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল। মরিয়ম বলল, তুমি যদি আল্লাহকে ভয় কর তবে আমি তোমা থেকে দয়াময়ের স্মরণ নিচ্ছি। সে বলল, ‘আমি তো কেবল তোমার প্রতিপালক প্রেরিত, তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার জন্য। মরিয়ম বলল, ‘কেমন করে আমার পুত্র হবে যখন আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি ও আমি ব্যভিচারিনীও নই? সে বলল, ‘এরূপই হবে।’ তোমার প্রতিপালক বলেছেন এ আমার আমার জন্য সহজসাধ্য এবং আমি তাকে এ জন্য সৃষ্টি করব যেন সে হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন ও আমার নিকট থেকে এক অনুগ্রহ; এতো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার। অতপর সে গর্ভে সন্তান ধারন করল ও তৎসহ এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল; প্রসব বেদনা তাকে এক খর্জুর বৃক্ষ তলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। সে বলল, হায় এর পূর্বে আমি যদি মরে যেতাম ও লোকের স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হতাম। ফেরেশতা তার নিম্ন পাশ্ব থেকে আহবান করে তাকে বলল যে, তুমি দু:খ করো না, তোমার পাদদেশে তোমার প্রতিপালক এক নহর সৃষ্টি করেছেন; তুমি তোমার দিকে খর্জুর বৃক্ষের কান্ডে নাড়া দাও, তা তোমাকে সুপক্ক তাজা খর্জুর দান করবে।’ সুতরাং আহার কর, পান কর ও চক্ষু জুড়াও। মানুষের মধ্যে কাউকেও যদি তুমি দেখ তখন বলো, ‘আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে মৌনতাবলম্বনের মানত করেছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সঙ্গে বাক্যালাপ করব না। অতপর সে সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হল; তারা বলল, হে মরিয়ম! তুমি এক অদ্ভুত কান্ড করে বসেছ। ‘হে হারুন ভগিনী! তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিল না এবং তোমার মাতাও ছিল না ব্যভিচারিনী। অত:পর মরিয়ম ইঙ্গিতে সন্তানকে দেখাল। তারা বলল, ‘যে কোলের শিশু তার সঙ্গে আমরা কেমন কওে কথা বলল? সে বলল, আমিতো আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে গ্রন্থ দিয়েছেন, আমাকে নবী করেছেন; যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে আশিষ ভাজন করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি ততদিন এবাদত (নামাজ) ও যাকাত আদায় করতে ও আমার মায়ের প্রতি অনুগত থাকতে এবং তিনি আমাকে উদ্ধত ও হতভাগ্য করেননি। আমার শান্তি ছিল যেদিন আমি জন্মলাভ করেছি ও শান্তি থাকবে যেদিন আমার মৃত্যু হবে ও যেদিন জীবিত অবস্থায় আমি পুনরুত্থিত হব। এ মরিয়ম তনয় ঈসা। (আমি বললাম সত্য কথা), যে বিষয়ে তারা বিতর্ক করে।
৩ সূরা আলে ইমরার আয়াত ৫৫: যখন আল্লাহ বললেন হে ঈসা নিশ্চয় আমি তোমার কূল পূর্ণ করছি এবং আমার কাছে তোমাকে তুলে নিচ্ছি এবং যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের মধ্যে থেকে তোমাকে পবিত্র করেছি। আর তোমার অনুসারীগণকে কিয়ামত পর্যন্ত কাফেরদের (অঈমানদারদের) উপর জয়ী করে রাখব; অত:পর আমার নিকটে তোমাদের প্রত্যয়ন হবে, তারপর যে বিষয়ে তোমাদের মতান্তর ঘটেছে তার মীমাংসা করে দিব।
৫ সূরা আল মায়েদা আয়াত ৬৮-৬৯: বল, ‘হে কিতাবধারীগণ! তওরাত, ইঞ্জিল ও যা তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত তোমাদের কোন ভিত্তি নেই।’ তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তাদের অনেকের ধর্মদ্রোহিতা ও অবিশ্বাসই বৃদ্ধি করবে। সুতরাং তুমি অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য দু:খ করো না। নিশ্চয়, যারা বিশ্বাসী, ইহুদী, সাবেয়ী ও খৃষ্টান তাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করবে এবং সৎসাজ করবে তার কোন ভয় নেই এবং সে দু:খিতও হবে না।
এই হলো আজকের বড়দিনের তাৎপর্য। এরই আলোকে পথ চলুন এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজমান রাখুন। আমীন॥

Leave a Reply

Your email address will not be published.