বা আ ॥ ডিজিটাল পদ্ধতি বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কার্যক্রমে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই ডিজিটাল পদ্ধতিতে বন্যা প্রবণ এলাকায় বসবাসরত মানুষকে ‘পুশ নোটিফিকেশন’-এর মাধ্যমে বন্যা শুরুর তিন দিন থেকে তিন ঘন্টা সময় আগ পর্যন্ত সতর্ক করা যাচ্ছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষয়ক্ষতি রোধকল্পে গত বছরের ২৫ অক্টোবর বর্তমান সরকার ডিজিটাল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কার্যক্রম চালু করে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো), এটুআই এবং আন্তর্জাতিক তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক সংস্থা গুগল কর্তৃক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রম শুরু হয়।
বাপাউবো সূত্র জানায়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ২০১৯ হতে ২০২০ সালের প্রথমার্ধ পর্যন্ত ডিজিটাল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা উন্নীতকরণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বাপাউবো এবং এটুআই’র প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞগণের সরাসরি অংশগ্রহণ, কারিগরি কার্যক্রম ও তত্ত্বাবধানে এবং গুগল এর স্যাটেলাইট ভিত্তিক উন্নত ভূ-উচ্চতা তথ্য, মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি এবং কারিগরি সহায়তায় ২০২০ সালের জুন মাসে পরীক্ষামূলক ভাবে ব্রক্ষ্রপূত্র ও পদ্মা নদীর অববাহিকার ১৪টি জেলায় এই কার্যক্রমের সূচনা হয়। বর্তমানে ৫৫টি জেলায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বাপাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, এই উন্নততর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থায় বাপাউবো’র বিদ্যমান আগাম পাঁচ দিনের বন্যা পূর্বাভাস উপাত্তকে প্রক্রিয়াকরণ করে উন্নত ভূউচ্চতা তথ্য ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির মাধ্যমে মানচিত্র প্রস্ত‘ত করা হয়। এর মাধ্যমে বর্তমানে বন্যা শুরু হওয়ার তিন দিন থেকে তিন ঘণ্টা সময় আগে স্থানীয় জনগোষ্ঠী পর্যায়ে ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন ধরনের পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ বার্তা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। পূর্বাভাসের এই আগাম সময় আরও বর্ধিতকরণের জন্য গুগল এর সাথে কারিগরি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমানে গুগল ‘পুশ নোটিফিকেশন’-এর মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের এই পূর্বাভাস প্রদান করছে। ২০২০ সালে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা নদী তীরবর্তী ১৪টি জেলার ৩৮টি উপজেলায় এই কার্যক্রমটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হয়। ২০২০ সালে বন্যা কবলিত এলাকার ৩ লক্ষ অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারীকে প্রায় ১০ লক্ষ ‘পুশ নোটিফিকেশন’ অর্থ্যাৎ ঘোষণাপত্র পাঠানো হয়। বর্তমানে বাপাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের মাধ্যমে সারাদেশে ১০৯টি স্টেশনে বন্যা মনিটরিং এবং ৫৫টি স্টেশনে পাঁচদিনের আগাম বন্যা পূর্বাভাস চালু আছে। গুগল এর কারিগরি সহায়তায় ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সংশিষ্ট সকল স্টেশন এলাকার আওতাভুক্ত ৫৫টি জেলার ৯৯টি উপজেলার বন্যা প্রবণ এলাকার জনগণের নিকট স্মার্ট ফোনের ‘পুশ নোটিফিকেশন’ এর মাধ্যমে বন্যার তথ্য ও পূর্বাভাস প্রচার করা সম্ভব হচ্ছে।
প্রকৌশলী রায়হান বলেন, গুগল ম্যাপ এবং গুগল ফিডে আগাম বন্যা সম্পর্কিত সতর্কতামূলক বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। বার্তাগুলো পানির স্তরের উত্থান-পতন, বন্যার গভীরতা, তীব্রতাসহ বন্যার অঞ্চল সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করছে। গুগল অনুসন্ধানে বন্যা সম্পর্কিত নানাবিধ তথ্য ও পরামর্শ, যেমন: সুরক্ষা সম্পর্কিত পরামর্শ, ফসল তোলার পরামর্শ, বন্যার অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কিত তথ্য, জরুরী সরবরাহের তথ্য ইত্যাদি প্রেরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, গুগল ম্যাপ এবং আর্থ এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্থানের বন্যা সতর্কতার ভিত্তিতে প্লাবনের ছবি নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে।
গুগল ম্যাপে প্লাবনের ছবির সাথে প্রয়োজনীয় যেসব তথ্য প্রদান করা হয় তাহলো: বন্যার তীব্রতা, ২৪ ঘন্টার মধ্যে পানির স্তরের বৃদ্ধি ও পতন, বন্যাকবলিত অঞ্চল, আনুমানিক বন্যার গভীরতা, সুরক্ষা পরামর্শ এবং জরুরী সেবা পেতে যোগাযোগের নম্বর ও ঠিকানা ইত্যাদি। এই সকল তথ্য পেতে ব্যবহারকারী পর্যায়ে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ ব্যতীত কোনো আর্থিক সংশ্লিষ্টতার প্রয়োজন নেই। অধিকন্তু, বন্যা পূর্বাভাসের তথ্য দ্রততম সময়ে দুর্যোগ কবলিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য বাপাউবো, এটুআই এবং গুগল সম্প্রতি আন্তর্জাতিক রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহায়তায় যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে।
বাপাউবো’র উদয় রায়হান বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ায় বন্যা পূর্বাভাস প্রান্তিক জনসাধারণের কাছে পৌঁছাতে এসএমএস পদ্ধতি অধিক ফলপ্রসূ। এসএমএস পদ্ধতিতে পূর্বাভাস প্রেরণের বিষয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের সাথে আলোচনা চলছে। এসএমএস এর মাধ্যমে পূর্বাভাস প্রেরণ সম্ভব হলে সকল মোবাইল অপারেটর এর মাধ্যমে বছরে প্রায় ৩.৬০ কোটি এসএমএস এর মাধ্যমে পূর্বাভাস প্রেরণ করা সম্ভব হবে। বর্ষা মৌসুমে বন্যা বাংলাদেশের একটি নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বন্যা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রশমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার কাঠামোগত এবং অকাঠামোগত উভয় রকম পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। একটি দুর্যোগপ্রবণ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বন্যা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতা ইতোমধ্যেই বিশ্বের নজর কেড়েছে।