নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ॥ ফুল ভালোবাসার প্রতীক, পবিত্রতার প্রতীক। পৃথিবীর সব মানুষেরই ফুলের প্রতি টান অনুভূত হয়। ফুল দেখলেই যেন স্নিগ্ধতায় নিজেকে জড়িয়ে নিতে চান। ফুলের সৌরভ একদিকে যেমন মানুষকে বিমোহিত করে তেমনি এর সৌন্দর্য প্রাকৃতিক পরিবেশকে করে তোলে আকর্ষণীয়।
আসছে পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি ও বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ফুলের চাষ হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কয়েকটি এলাকায়ও নানান জাত ও রঙের ফুলের শোভা পাচ্ছে। ফুলের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে উঠছে এলাকা।
ফুলচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরজুড়েই নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার দিঘলদি ও সাবদীসহ কয়েকটি এলাকায় ফুলের চাষ হয়ে থাকে। তবে শীত মৌসুমে প্রায় সব ফুলেরই চাষ করে থাকেন। জন্মদিন পালন, বিয়ে, মৃতের আত্মার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, গৃহ সজ্জায় এ ফুল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একই সঙ্গে প্রতিবছর বসন্ত বরণ, ভালোবাসা দিবস, বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতো দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে।
নারায়ণগঞ্জে এ চাহিদার অনেকটাই পূরণ করে থাকেন বন্দর উপজেলার দিঘলদি এলাকার ফুল চাষিরা। যার কারণে দিন দিন বন্দরে ফুল চাষ বাড়ছে। উপজেলার দিঘলদি ও সাবদী গ্রামের প্রায় ২৫০ বিঘা জমিতে এখন চাষ হচ্ছে গোলাপ, গাঁদা, গ্লাডিয়াস, চ্যারি, জাপানি, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানান জাতের ফুল। মাঠের পর মাঠ বিভিন্ন রঙয়ের ফুলের দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। যদিও এ বছর বৃষ্টির কারণে ফুলচাষিরা তেমন সুবিধা করতে পারেনি। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেক ফুলগাছ ছোট থাকতেই পচে গিয়েছিল। পানি কমে আসার পর আবার নতুন করে ফুলের চারা রোপণ করতে হয়েছে। সেসব গাছে এখন ফুল আসতে শুরু করছে। তবে যারা উঁচু জমিতে ফুলের চাষ করে থাকেন তারা এবার লাভজনক অবস্থানে আছেন।
বন্দরের মাধবপাশা এলাকার ফুলচাষি খোকন জানান, তিনি পাঁচ বছর ধরে ফুল চাষ করে আসছেন। তার পরিবারের সব সদস্যরাই এই ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত। প্রত্যেকদিন ক্ষেত থেকেই বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এসে ফুল নিয়ে যান। এই ফুল চাষের মাধ্যমেই তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে। ফুল ব্যবসার মাধ্যমে বন্দরে নির্মাণ করেছেন বাড়ি। তিনি আরও জানান, তাদের ফুল চাষের জমিটি বেশ উঁচুতে রয়েছে। যার কারণে তারা এবার লাভজনক অবস্থানে রয়েছেন। সামনে কয়েকটি দিবস রয়েছে। সেসব দিবসকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই ফুল স্টক করে রাখতে হবে।
ফুলচাষি শামীম বলেন, এবার ফুলের চারা রোপণের পরপরই টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হয়। ফলে অনেকেই বিপাকে পড়ে যান। তাদের আবার নতুন করে চারা রোপণ করতে হয়। ফলে এ বছর অনেক চাষি তেমন সুবিধা করতে পারেননি। নতুন করে চারা রোপণ করেছি। সেগুলোতে এখনো ফুল ধরতে শুরু করছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আমিনুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা মাঝে মধ্যে গিয়ে ফুলের বাগানগুলো মনিটরিং করি। গত সপ্তাহে আমাদের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক পরিদর্শন করেছেন। কীভাবে কী করা যায় তা নিয়ে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। বছর খানেক আগে ফুলচাষিদের কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এ কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, এটা একটা উচ্চমূল্যের ফসল এবং লাভজনক। এজন্য দিন দিন ফুল চাষের জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকার কাছাকাছি হওয়াতে বাজারটাও তাদের জন্য সহজ হচ্ছে। ফুলচাষিদের ফুল আনা নেওয়ার জন্য পরিবহন ব্যবস্থার চেষ্টাও রয়েছে আমাদের। আমরা চাচ্ছি ঢাকার কাছাকাছি এলাকা হিসেবে নারায়ণগঞ্জে যেন ফুলচাষ বাড়ে।