হায়াতুজ্জামান মিরাজ, আমতলী (বরগুনা) ॥ বরগুনার আমতলীতে অসহায়, দুস্থ, বিধবা, গরিব মানুষের আর্তনাদে যেন ভারী হয়ে উঠেছে উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের আমড়াগাছিয়া ও চুনাখালী গ্রাম। ভুক্তভোগীদের চোখের জলে কাঁদছে মানবিকতা। টাকা দিয়ে এবং বাবা ডেকেও পাননি মুজিববর্ষের ঘর। ঘরের জন্য দেওয়া টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য মাসের পর মাস ঘুরেও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। সরেজমিনে দুই গ্রামে গিয়ে জানা যায়, গৃহহীন ও দরিদ্রদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে মুজিববর্ষের ঘর ও গভীর নলকূপ দেওয়ার নামে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চুনাখালী ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে। ঘর ও গভীর নলকূপ তো দিচ্ছেই না বরং ভুক্তভোগীরা তাঁদের দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে উল্টো তাঁদের মাসের পর মাস ঘোরাচ্ছেন। বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে হুমকি দিচ্ছেন এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
জানা গেছে, উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের আমড়াগাছিয়া ও চুনাখালী গ্রামের অর্ধশতাধিক হতদরিদ্রের কাছ থেকে মুজিববর্ষের ঘর ও গভীর নলকূপ দেওয়ার কথা বলে পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়েছেন ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন। এর মধ্যে তাঁর অফিসের এক দালালের মাধ্যমে ভুক্তভোগী এক ব্যক্তির কাছ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টানা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পূর্ব চুনাখালী গ্রামের ভুক্তভোগী হতদরিদ্র রাশিদা বেগম বলেন, ‘ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন ও ভূমি অফিসের দালাল ডন্ডি সালাম এক মাসের মধ্যে একটি পাকা ঘর ও একটি টিউবওয়েল দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। টাকা নেওয়ার পর এখন আর ঘর দিচ্ছেন না। আমার দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ‘ ঘর ও নলকূপ দেওয়ার কথা বলে উত্তর আমড়াগাছিয়া গ্রামের শাহানুর ওরফে শাহা মৃধার কাছ থেকে প্রথমে ২০ হাজার টাকা, পরে আনসার ভিডিপি ব্যাংক থেকে ঋণ ও আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে ভূমি অফিসের দালাল ডন্ডি সালামের মাধ্যমে মোট এক লাখ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এখন ঘর ও টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বললেই এলাকাছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন আব্দুল মতিন ও দালাল ডন্ডি সালাম। এ ছাড়া ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম, ঝুমুর বেগম, নান্নু খাঁ, নুর ইসলাম, শাহজাহান মৃধা, মরিয়ম বেগম, পিয়ারা বেগম, আব্দুল জলিল, ধলাইসহ ১৫-২০ জন ভূমিহীন, অসহায়, বিধবা নারীর কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন। তাঁরা ঘর পাওয়া তো দূরের কথা এখন তাঁদের দেওয়া টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না।
কুকুয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য খাদিজা আক্তার পুতুল বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের হতদরিদ্র মানুষদের ঘর দেওয়ার কথা বলে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। বর্তমানে অসহায় দরিদ্র মানুষগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ‘ কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বোরহান উদ্দিন আহমেদ মাসুম তালুকদার মুঠোফোনে বলেন, ‘দুস্থ, হতদরিদ্র, স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা নারীদের কাছ থেকে মুজিববর্ষের ঘর দেওয়ার কথা বলে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমার কাছে একাধিক অভিযোগ আসে। অভিযোগ পেয়ে আমি তাঁকে একাধিকবার বলার পরও তিনি ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দেননি। মুজিববর্ষের ঘরের নাম বিক্রি করে গরিব অসহায় মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করে প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বরগুনা জেলা প্রশাসক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ‘
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন মুঠোফোনে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি ঘর ও গভীর নলকূপ দেওয়ার কথা বলে কারো কাছ থেকে টাকা নিইনি। ‘ আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। আর ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানও তাঁকে কিছু জানাননি। তাই এ বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না বলে তিনি জানান। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ কে এম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ মুঠোফোনে বলেন, ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।