হতাশার অপর প্রান্তে মরন অপেক্ষা করছে। আবার হতাশার মধ্যদিয়ে সচেতনতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এই দুই-ই এখন হতাশাকে গ্রাস করে রেখেছে। তবে হতাশা, মরন বা সচেতনতা এখন মুল্যবোধহীন হয়ে পড়েছে। তবে জাতীয় জীবনে হতাশা বা সচেতনতা প্রায়শই চমক সৃষ্টি করে জাতিকে / বিবেকবে এমনকি মানবতাকেও আলোড়িত করে। যার প্রতিচ্ছবি গত ৩/২/২২ রাতের হৃদয়ছোয়া ভাষায় প্রকাশবীহিন এক হৃদয়বিদারক হৃদয়ে রক্তক্ষরনের দৃষ্টান্ত জাগ্রত ও বহমান রয়েছে এবং থাকবে আগামীর দৃষ্টান্ত হিসেবে। একাকিত্ব এবং নি:সঙ্গতা যখন মানুষকে ঘ্রাস করে তখন আপনজনের ইতিবাচক প্রচেষ্টা এবং দৃশ্যমান
সহযোগীতা-ই আগামীর আকাঙ্খাকে জীইয়ে রাখতে সাহায্য করে। দারিদ্রতা বা অর্থনৈতিক অসহায়ত্ব যখন মানুষকে ঘ্রাস করে তখন পরিবার এবং সমাজ ও আত্মীয়স্বজনের সহযোগীতা অথবা উৎসাহ-ই আগামীর রসত যুগিয়ে জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে সাহায্য করে। ব্যবসা এবং চাকুরী খুইয়ে এমনকি পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যখন মৃতপ্রায় অবস্থায় উপনীত হয় তখনই আল্লাহর সাহায্য এবং সৃষ্টিকর্তার বাক্য ও খোদায়ী মুল্যবোধ মানুষকে সবকিছু কাটিয়ে উঠে জীবনে প্রশান্তি উপভোগে সহায়তা করে। ইতিবাচক দৃষ্টান্ত নিয়ে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে এই বিষয়ে একটি পূর্নাঙ্গ গাইডলাইন দিয়েছেন। “তোমরা যারা স্ত্রী, তোমরা প্রত্যেকে স্বামীর অধিনতা মেনে নাও, কারণ প্রভুর বান্দা হিসেবে এটাই উপযুক্ত। তোমরা যারা স্বামী, তোমরা প্রত্যেকে স্ত্রীকে মহব্বত করো এবং তার সঙ্গে কঠোর ব্যবহার করো না।
ছেলেমেয়েরা তোমরা সব বিষয়ে মা বাবার বাধ্য থেকো, কারন এতে প্রভু খুশী হন। তোমরা যারা পিতা, তোমাদের ছেলেমেয়েদের মন তেতো করে তুলো না, যেন তারা উৎসাহহীন হয়ে না পড়ে।
তোমরা যারা গোলাম, তোমরা সব বিষয়ে তোমাদের এই দুনিয়ার মালিকদের বাধ্য থেকো। যখন তাঁরা তোমাদের লক্ষ্য করেন কেবল তখনই যে কেবল তাঁদের খুশী রাখবার জন্য তাঁদের বাদ্য থাকবে তা নয়, বরং খাঁটি দিলে প্রভুর উপর ভয় রেখে তাঁদের বাধ্য থোকো। তোমরা যাই করো না কেন তা মানুষের জন্য নয় বরং প্রভুর জন্য করছ বলে মন-প্রাণ দিয়ে করো কারণ তোমরা তো জান, প্রভু তাঁর বান্দাদের জন্য যা রেখেছেন তা তোমরা পুরস্কার হিসাবে তাঁরই কাছ থেকে পাবে।
মালিকেরা বেহেশতে তোমাদেরও একজন মালিক আছেন জেনে তোমরা তোমাদের গোলামদের সংগে সৎ এবং ন্যায় ব্যবহার করো।” সৃষ্টিকর্তার দেয়া দিক নির্দেশনা কি মেনেছি আর কি মানতে পারিনি সেই হিসাব কষা এখন জরুরী। আমাদের পরিবার ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রিয় ব্যবস্থায় সর্বপরি দৈনন্দিন জীবনে সৃষ্টিকর্তার দেয়া গাইডলাইন অনুসরণ এবং অনুকরণ করা জরুরী। যদি আমরা ঐ গাইডলাইন অনুসরন এবং অনুকরন করতাম আজকের দৃশ্যমান ঘটনাগুলো দেখতে ও শুনতে হতো না। তাই এখনই সময় মুল্যবোধের মুলে ফিরে যাওয়ার নতুবা সামনে আরো কঠোর ও কঠিন সময় এবং বাস্তবতার মুখোমুখি আমাদেরকে হতে হবে। এইখানে খোদার কালামের একটি শিক্ষা গল্পাকারে উল্লেখ করছি। একজন ধনী যুবক এসে বলল, “হুজুর, আখেরী জীবন পাবার জন্য আমাকে ভাল কি করতে হবে?” জবাবে তিনি বললেন,“ভালোর বিষয়ে কেন আমাকে জিজ্ঞাসা করছ? ভাল মাত্র একজনই আছেন। যদি তুমি আখেরী জীবন পেতে চাও তবে তাঁর সব হুকুম পালন কর।” সেই যুবকটি বলল, “কোন কোন হুকুম?” তিনি বললেন, “খুন করো না, জেনা করো না, চুরি করো না, মিথ্যা সাক্ষি দিয়ো না, পিতা-মাতাকে সম্মান করো আর তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত মহব্বত করো।” তখন সেই যুবকটি বলল আমি এই সবই করে আসছি, তবে আমাকে আর কি করতে হবে?” — তখন আল্লাহ বললেন, “যদি তুমি পুরোপুরি খাঁটি হতে চাও তবে গিয়ে তোমার সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে গরীবদের দান কর। তাতে তুমি বেহেস্তে ধন পাবে। এই কথা শুনে যুবকটি মনে অনেক দু:খিত হয়ে চলে গেল; কারণ তার অনেক ধন সম্পদ ছিল। এই প্রসঙ্গে আল্লাহর কালাম বলে, ধনী লোকের পক্ষে বেহেশতে ঢোকা কঠিন হবে। আমি আবার তোমাদের বলছি, ধনী লোকের পক্ষে আল্লাহর রাজ্যে ঢুকবার চেয়ে বরং সুচের ফোটা দিয়ে উটের ঢোকা সহজ।” এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার সময় এখনই এবং জীবনে, পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে প্রয়োগের প্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আসুন আমরা চিরস্থায়ী বিধানাবলীর আলোকে সকল সমস্যার সমাধান করি এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে হতাশা থেকে সচেতনতায় ফিরে এসে সমুজ্জ্বল করে পৃথিবীকে বেহেস্তী আবেশে রূপান্তরিত করি।
বাদশাহ সোলাইমান (আ:) এর মাধ্যমে আমাদের জন্য দেয়া শিক্ষাগুলো আজ মৃতপ্রায় তাই জীবন যুদ্ধে এই নেতিবাচক অন্যায় কাজের ছড়াছড়ি প্রকাশিত হচ্ছে। বাদশাহ সোলাইমান (আ:) এর কয়েকটি উক্তি উল্লেখ করতে চাই-“ছেলে আমার, তুমি তোমার আব্বার উপদেশে কান দাও; তোমার মায়ের দেয়া শিক্ষা ত্যাগ করো না। সেগুলো হবে তোমার মাথায় জড়াবার সুন্দর মালা আর গলার হারের মত। ছেলে আমার, তুমি ওদের সঙ্গে যেয়ো না, ওদের পথে তোমার পা ফেলো না; কারণ ওদের পা গুনাহের দিকে দৌঁড়ায়, খুন করবার জন্য ওরা ছু্েট চলে। এই লোকেরা নিজেরাই খুন হবার জন্য ওৎ পেতে থাকে, নিজেরাই শেষ হওয়ার জন্য লুকিয়ে থাকে। খারাপ উপায়ে কোন কিছু লাভ করবার জন্য যারা ছোটে তাদের সকলের দশাই এই রকম হয়; তারা যা লাভ করে তা তাদের জীবন শেষ করে দেয়। ছেলে আমার, আমার কথা শোন আর আমার সব হুকুম তোমার অন্তরের মধ্যে জমা করে রাখ। আমার হুকুম পালন কর, তাতে তুমি বাঁচবে। আমার দেওয়া শিক্ষা তোমার চোখের মণির মত করে পাহারা দিয়ে রাখ; তোমার অংগুলগুলোতে তা বেঁধে রাখ, তোমার অন্তরের পাতায় তা লিখে রাখ। জ্ঞানকে বলো, “তুমি আমার বোন”,আর বুদ্ধিকে সাথী বল; যাতে তারা তোমাকে জেনাকারিণীর হাত থেকে রক্ষা করে, রক্ষা করে সেই মিষ্টি কথায় ভরা বিপথে যাওয়া স্ত্রীলোকের হাত থেকে।
আল্লাহর বা সৃষ্টিকর্তার দেয়া বিধানগুলো কি আমরা আমাদের জীবনে, পরিবারে সমাজে পরিপালন করে যাচ্ছি নাকি এর বাইরে নিজেদের তৈরী বিধানাবলীর বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছি তাও ভেবে দেখার সময় এখন। পারিবারিক মূল্যবোধ এবং সৃষ্টিকর্তার বিধানাবলীর আলোকে স্ব স্ব ধর্মীয় শিক্ষায় সুশিক্ষীত করাই এখন সময়ের দাবী। আজ যা ঘটেছে বা দৃশ্যমান হয়েছে তা শুধু ধর্মীয় শিক্ষা এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেই হয়েছে। পিতা মাতার দায়িত্ব সঠিকভাবে পরিপালিত না হওয়ার ফলে এই অবক্ষয় সমাজ ও পরিবারকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। সৃষ্টির সেরাজীব বার বার জর্জরিত হচ্ছে এবং মানবিকতা আর বিবেক ধ্বংসিত হয়ে ঘৃণা ও ক্রোধে প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে যার দহন এখন সইবার শক্তি হারিয়ে ভগ্নচূড়া অন্তরের গহীনে রক্তহরণ হচ্ছে। আত্মহননের বিভিন্ন পথের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে লাইভ যা ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে হয়েছে। বিভিন্নভাবে ঐ আত্মহত্যা সংগঠিত হয়েছে; হচ্ছে এবং হবে তবে এর ধরণে শুধু নতুনত্ব এসেছে। আর এই নতুনত্বের লাগাম টানা এখন জরুরী হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যারা আত্মহননের স্বীকার হয়েছে তাদের জীবন ও কর্মের মাধ্যমে এর শেষ পরিণতির ঘটনাগুলোর যে পুনরাবৃত্তি হয়েছে তা যেন না হয় সেইদিকে দৃষ্টি দেয়া জরুরী। আগামীর পরিবারগুলোকে রক্ষা করা এখন জরুরী তাই মূল্যবোধ এবং ধর্মীয়
শিক্ষায় সুশিক্ষীত করে তুলেই ঐ নৈরাজ্যমূলক কর্মকান্ড থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। অভিনব পদ্দতিতে আত্মহণনের পথ বেঁছে নেয়ার যে রেওয়াজ বিরাজমান তার অবসানকল্পে কাজ করার এখনই সুযোগ। মিডিয়া যন্ত্র ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন জরুরী। মৃত্যুর খবর ছাপানো এবং প্রচার ও প্রকাশ করার ধরনে পরিবর্তন আনয়ন জরুরী হয়েছে তাই আর যেনতেন ভাবে সম্প্রচার নয় বরং এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগুতো হবে। এযাবত কালের ভুলগুলিকে শুধরানোর এখনই সুযোগ। এই ধরনের মৃত্যুর ভয়াভহতা এমনকি ক্ষতিকর দিকগুলি তুলে ধরতে হবে এবং আগামীর কল্যাণে এই ধরনের মৃত্যুঝুকি শুন্যের কৌটায় নামিয়ে আনার সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই অপমৃত্যুকে গবেষনায় এনে যে যে ক্ষেত্রে প্রচারনা চালানো যায় তার সবগুলোই অব্যাহত রাখতে হবে। তবে এই ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে এর মাধ্যমে ক্ষতিকর কিছুর উদ্ভব না ঘটে। সকল কিছুতেই সৃষ্টিকর্তার বিধানাবলী অবলম্বন, বিশ্বাস, পালন এবং অনুসরণ ও অনুকরণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। আমি কিছু অংশ খোদার কালাম থেকে উল্লেখ করেছি যাতে আমরা আবারো গভীরভাবে সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভরশীল হতে পারি এবং তাঁর বাক্যের ব্যবহার আমাদের জীবনে, পরিবারে, সমাজে এবং রাষ্ট্রে বহুল প্রচার, পরিচর্যা এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের মাধ্যমে চর্চায় আনয়ন করে এই ঘুনেধরা সমাজকে নতুন করে খোদায়ী মূল্যবোধে জাগ্রত রাখতে পারি। যাই হউক আমরা এই নিমজ্জ্বিত অন্ধকারের তলানি থেকে বের হওয়ার জন্য মূল্যবোধ প্রয়োজন এবং এই মূল্যবোধের চর্চার কোন বিকল্প নেই। আসুন চলামান হতাশায় নিমজ্জ্বিত সচেতনতাকে বিবেকে খোদায়ী মূল্যবোধে জাগ্রত করি। শান্তি, স্থিতিশীলতা, নিশ্চয়তা, নিরাপত্ত্বা এবং আগামীর নিশ্চিত আশা ও আকাঙ্খার পরিপূর্ণতা সুনিশ্চিত করতে চলমান হতাশা থেকে শিক্ষা ও দিক্ষা নিয়ে খোদায়ী সচেতনতায় বের হয়ে আসি। আসুন মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে কায়মনোবাক্যে মোনাজাত/ফরিয়াদ করি যেন আমাদেরকে (মোট কথা সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাতকে) সঠিক জায়গায় ফিরিয়ে আনতে পারি।