বিভিন্ন সম্মাননা পুরস্কার দেয়া ও নেয়া এবং দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া একই মানদন্ডের যোগসূত্র। বর্তমানে মানুষ সম্মাননা পুরস্কার পাওয়ার আশায় কতকিই না করে থাকে যা বাস্তবে হতাশার এবং কলঙ্কের তবে মাঝে মাঝে মানুষ কোন কিছু পাওয়ার আশা ছাড়াই অনেক ইতিবাচক এবং ভাল কাজ করে থাকে যা সমাজে দৃষ্টান্ত হিসেবে কল্যাণকর বলে প্রতিয়মান হয় বা হয়েছে এবং আগামী দিনে হবে। তবে মাঝে মাঝে এও প্রতিপন্ন হচ্ছে যে লোক দেখানো কর্মকান্ডের বা পরিকল্পীত কর্মকান্ডের পুরস্কার হিসেবে বিভিন্ন খ্যাতাবে ভুষিত হওয়া বা স্বীকৃতি হিসেবে দেশীয় বা আন্তর্জাতিক সনদ পাওয়া। সবই একধরনের দু:ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। ঐসকল দু:ঘটনার ভাল ও মন্দ এই দুটোই এখন জাতির সামনে প্রজ্জ্বলিত। মানুষ এখন বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে দুনিয়াবী কামিয়াবী অথবা মান-সম্মান ও অর্থ-বিত্ত্বের দিকে। আর এইসকলই এখন মানুষকে নিয়ে খাঁদের কিনারায় দাঁড় করিয়েছে। তাই প্রতিনিয়নই আমরা দেখি সম্মাননা পুরস্কারের বাহার আর দুর্ঘটনার যজ্ঞ। ইদানিং এই সকল সম্মাননার সমালোচনারও ঝড় বইছে আর সম্মাননার/ ডিগ্রীর বা পুরস্কারের বাহারি রকম ফেরে রয়েছে স্বজনপ্রীতি বা দুর্ণীতি অথবা কোন নেতিবাচক ফায়দা হাসিলের আগাম বার্তা। তবে সম্মাননা, পুরষ্কার বা আগামীর কল্যাণকর কিছু পাওয়ার আশায় আমরা যদি জাগতিকতাকে ছেড়ে সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ের প্রতি বা শেষ অথবা আখেরী জীবনের প্রতি দৃষ্টিপাত করি তাহলে এই জাগতিকতা শুধু শুন্যই নয় বরং আগামীর ভিভিষিকাময় পরিস্থিতি এমনকি অনিশ্চিত গন্তব্যের প্রতি নিশ্চয়তা প্রদানে সহায়তা করে। তাই একটি কথার দিকে দৃষ্টিপাত করতে চাই যা মাবুদ আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা আমাদের জন্য নিয়ামত হিসেবে রেখেছেন-“তোমরা যারা গোলাম, তোমরা সব বিষয়ে তোমাদের এই দুনিয়ার মালিকদের বাধ্য থেকো। যখন তাঁরা তোমাদের লক্ষ্য করেন কেবল তখনই যে কেবল তাঁদের খুশী রাখবার জন্য তাঁদের বাদ্য থাকবে তা নয়, বরং খাঁটি দিলে প্রভুর উপর ভয় রেখে তাঁদের বাধ্য থেকো। তোমরা যাই করো না কেন তা মানুষের জন্য নয় বরং প্রভুর (সৃষ্টিকর্তার) জন্য করছ বলে মন-প্রাণ দিয়ে করো কারণ তোমরা তো জান, প্রভু তাঁর বান্দাদের জন্য যা রেখেছেন তা তোমরা পুরস্কার হিসাবে তাঁরই কাছ থেকে পাবে।” হ্যা আমরা তাঁরই (সৃষ্টিকর্তার) উপরই আশা রাখি এবং তাঁরই কাছ থেকে পুরস্কার ও উপাহার পাওয়ার কাজেই মনযোগী হই। অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকি যেন আখেরী জীবন বা অনন্ত জীবন লাভের পরিপূর্ণতা ও নিশ্চয়তা শতভাগে উন্নীত হয় এমনকি নিশ্চিত হয়।
ইদানিংকার কিছু ঘটনাবহুল আলোচনায় ইতি টানতে আল্লাহর তরফ থেকে পাঠানো নিয়ামত তাঁরই বাক্য আমাদেরকে সাহায্য করে। অনেক সন্দেহ ও হাস্যকর ডিগ্রী অর্জনে মিডিয়া প্রচার আর বিভিন্ন সম্মাননা স্মারক ও নামের দ্বারা ভূয়সী প্রসংসা অর্জনের খতিয়ান এমনকি রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের অপমৃত্যুর খবরও আমাদেরকে বিচলিত করে। তাই নতুন নতুন খেতাব অর্জনের চেয়ে বরং খেতাব বর্জনে মনযোগী হউন। খেতাব কিন্তু আমাদেরকে অন্ধকার কবরের গহবরেই নিমজ্জ্বিত করে। এই নিমজ্জ্বিত হওয়ার ঘটনার অতল গহবরে আমরা হারিয়ে নিলজ্জ্বতার মহড়া দিয়ে যাচ্ছি। তবে আর কতকাল এই বাহাবা কুড়াব একটু ভেবে দেখবেন? কারন আগের যে ডিগ্রী, উপাধী এবং সম্মাননা স্বারক ও বিভিন্ন পুরস্কার প্রবর্তিত হয়েছিল তা জাতিকে ইতিবাচক অগ্রগতির ক্ষেত্রে উৎসাহ যুগিয়ে এগিয়ে নিয়ে এসেছে এবং আগামীর ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে খোদায়ী মনোভাবে ভাস্বর হয়ে রয়েছে। কিন্তু বর্তমানের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীতাত্মক এবং নেতিবাচকতায় ভরপুর। আগের গুলো রিওয়ার্ড আর বর্তমানের গুলো হলো আগামীর জন্য সঞ্চিত পুজি যা নেতিবাচক মনোভাবকে পুনজাগরিতকরণে হাতিয়ার স্বরূপ কাজ করবে। তাই ঐসকল উপাধিতে/ খেতাবে/ পুরস্কারে বা ডিগ্রিতে ভূপাতিত হওয়ার আগেই উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে জাতিকে এবং মানুষের সদিচ্ছাকে অথবা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে এগিয়ে আসুন এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপে কাজে নেমে পড়ুন। রিওয়ার্ড সম্পকে বলতে গিয়ে কয়েকটি ছুট উদাহরণ দিয়ে বলছি একটু ভাবুন বর্তমানেরগুলো কি ঐ ঘটনাগুলোর সাথে কোনরকম মিল আছে বা নেই- “মাইক্রোসফটের জনক বিল গেটস্ একজন মধ্যবিত্ত্ব পরিবারে বেড়ে উঠা সাধারণ ছাত্র ছিল এবং তিনি নিজের জন্য কিছু চিন্তা না করে বরং মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়েছেন আর সেই চাওয়ায় ছিলনা কোন প্রাপ্তীর প্রত্যাশা। তাই তিনি ছাত্রজীবনে মায়ের কিচেন টেবিলে বসেই মাইক্রোসফট্ ইউন্ডোজ এর ডিজাইন ঠিক করেন এবং মাকে বলেন তার নি:স্বার্থ চিন্তার কথা আর সেই ডিজাইনটা তাঁর বন্ধুদেরকে দিয়ে আরো ঝালিয়ে নিয়ে বিশ^কে উপহার দেন। যা আজ সারা পৃথিবীতে বহুল প্রচলিত এবং ব্যবহৃত।” কিন্তু সেই মায়ের কিচেনের নিস্বার্থ চিন্তা এবং এর বাস্তবায়নের ফল কি তা আজ বিশ^বাসী সবাই জানে। তবে ঐ ব্যক্তিটিরই শুরুতে ছিল অজানা- যা পরবর্তীতে জ্ঞাত হয়ে রিওয়ার্ডে পরিণত হয়েছে। আরেকটি ঘটনা বলি সেই আমেরীকার এক স্কুল ছাত্রী বিদেশে কর্মরত সৈনিকদের নিয়ে চিন্তা শুরু করে সৈনিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এবং গভেষনায় পেলেন যে, সৈনিকদের সময় পার করার বা মন ভাল করার কোন ব্যবস্থা নেই। কারন সৈনিকরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিবার ছেড়ে দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকেন। তাই সেই ক্ষুদ্র স্কুল ছাত্রীটি বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করে ঐ সৈনিকদের যন্ত্রণার অবসানে কাজ করেছেন। সে তার নিজের বাজানো ক্যাসেট এবং বই ডাকযোগে পাঠানো শুরু করলেন এই খবর তার সহপাঠিরা এমনকি সমাজব্যবস্থা সহ সমগ্র দেশেই প্রসংশা পেল আর তাঁর কাছে ডাকযোগে সব গানের ক্যাসেট ও বই চলে আসল; সেই মোতাবেক সে পাঠানো শুরু করল এবং একজন সেলিভ্রেটিতে পরিণত হল। এই সেলিভ্রেটিতে পরিণত হওয়াটাই হলো রিওয়ার্ড। আরেকটি বলি কম্পিউটারে অন্যের উপকারের জন্য ওয়েব পোর্টাল তৈরী করে এক স্কুল ছাত্রী আলোড়ন ছড়ালো। সে খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান কিন্তু সে মানুষের জন্য একটি ওয়েভ তৈরী করে বিনামূল্যে মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিল। আর সেই উন্মুক্ত ওয়েভ ব্যবহার করে হাজারো; লাখো এবং লক্ষ্যকোটি মানুষ উপকৃত হলো। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা ঠিক তাকে প্রাপ্যটুকু বুঝিয়ে দিল। কিভাবে- বিভিন্ন সংস্থা বা কোম্পানীর মালিকগণ ঐ ওয়েব সাইটকে লক্ষ করে মালিককে খোজে বের করে বিজ্ঞাপনের জন্য প্রস্তাব দিল এবং সেই অনুযায়ী মাসিক/বাৎসরিক ও আজিবন চুক্তিতে আবদ্ধ করল। যার দরুন ঐ বিনামুল্যের দানে দরিদ্র কিশোরী ধনীতে রূপান্তরিত হয়ে অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থান করে আলোচিত হলো; আলোচিত ঐ কিশোরীর জন্মস্থানও আমেরীকায়। এই হলো রিওয়ার্ড কিন্ত বর্তমানের যে তুগলগি কান্ডের তুলকালাম চলছে তাকে কি বলবেন আপনারা? ভাবুন এবং বের হয়ে আসুন ঐ অপসংস্কৃতির চর্চার অন্ধকারের মনেবৃত্ত্বি থেকে। ইতিবাচক মনোভাবের বাহ্যিক ব্যবহার উন্মুক্ত করে আগামীর কল্যাণের তরে এগিয়ে যান খোদায়ী অসীম সাহায্যের মাধ্যমে।
আরো কিছু বিষয়ে দৃষ্টিপাত দিলে সত্যিই ভাবতে অপারগতা প্রকাশিত হয় আর আগামীতেও হবে। কিন্তু সেই থেকে বের হয়ে আসারও রাস্তা ঐ একই। সৃষ্টিকর্তাবিহীন জীবন, যৌবন এবং কর্ম নিস্ফল। আর ঐ নিষ্ফলতার হুংকারে বিলীন হচ্ছে লাখোকোটি তরতাজা সম্ভাবনাময় প্রাণ। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে বলেছিলেন, কোন মানুষকে যেন হত্যা না করি, কারণ কোন মানুষকে হত্যা করলে সৃষ্টিকর্তাকে হত্যা করা হয়। মানুষ সৃষ্টিকর্তার সিফতে সৃষ্টি আর সৃষ্টিকর্তা বসবাস করেন মানুষের অন্তরে। তাই সাবধান হউন আর মানুষ হত্যা নয় বরং মানুষের জীবনকে রক্ষায় মনোনিবেশ করুন। সৃষ্টির দেখাশুনা ও পরিচর্যা এবং পরিচালনায় একশতভাগ গুরুত্বারূপ করে কাজে নেমে পড়–ন। যারা আমরা নিজেদেরকে দুনিয়ার মালিক ভাবা শুরু করছি এবং মালিক হতে চেষ্টা করছি তাদের উদ্দেশ্যে সৃষ্টিকর্তা অনেকদিন আগেই বলে রেখেছেন “ মালিকেরা বেহেশতে তোমাদেরও একজন মালিক আছেন জেনে তোমরা তোমাদের গোলামদের সংগে সৎ এবং ন্যায় ব্যবহার করো।” হ্যা তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সকল ক্ষেত্রেই ইতিবাচক মানদন্ড ঠিক করি এবং সৃষ্টিকর্তার আদতে ও তাঁর অভিপ্রায়ে মনোনিবেশ করি। যেন আমাদের জীবনের সকল কাজই হয় এই আঙ্গিকে- “যা সত্য যা উপযুক্ত যা সৎ যা খাঁটি যা সুন্দর যা সম্মান পাবার যোগ্য, মোট কথা যা ভাল এবং প্রশংসার যোগ্য সেই দিকে তোমরা মন দাও।” হ্যা তাই যেন হয় আমাদের জীবনের পাথেয়।