চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ॥ চট্টগ্রামের রাউজানে সড়ক নির্মাণে নিয়মমাফিক টেন্ডার পেয়েও প্রভাবশালীদের বিশৃঙ্খলায় কাজ করতে পারছে না এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তাদের নানাভাবে হয়রানি ও চাঁদা দাবি করে কাজ করতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মারধর করারও অভিযোগ উঠেছে।
সরকারের এলজিইডি কার্যালয়ের নির্দেশনা থেকে জানা যায়, গত বছরের (২০২১) সেপ্টেম্বর মাসের ৮ তারিখে একটি টেন্ডারে চিকদাইর ইউনিয়ন পরিষদের মধ্য পত্তনপারা থেকে কাগুটিয়া পর্যন্ত ২ কোটি ৮০ লাখ ২২ হাজার সাতশো ৭৭ টাকা ব্যয়ে ৪০০ মিটার সড়ক নির্মাণের ঠিকাদারি পায় মেসার্স কে কে এন্টারপ্রাইজ। কাজটির সময়কাল দেয়া হয় ২০২১-এর ৩ অক্টোবর থেকে ২০২২-এর ৩রা জুলাই পর্যন্ত। তবে কাজ পাওয়ার পরপরই ঠিকাদার ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ শুরু করতে পারেননি। সম্প্রতি সেই কাজ শুরু করা হয়। এরপর থেকেই তারা একেরপর এক বাঁধা পাওয়ার অভিযোগ তোলেন।
কে কে এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মো. কবির হোসেন বলেন, আমরা কোন প্রভাব প্রতিপত্তি খাঁটিয়ে নয় বরং লিগ্যালি যেভাবে টেন্ডার হয় সেভাবে ই-টেন্ডার সাবমিট করেছি এবং কাজটি পেয়েছি। কাজটি দেখাশোনার জন্য যাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে আমরা কিছুটা বিলম্বে কাজ শুরু করি জানুয়ারি মাসে। আমাদের কাজটি করতে সর্বোচ্চ ৩ মাস সময় লাগবে এবং আমাদের হাতে রয়েছে আরো ৫ মাস। কিন্তু জানুয়ারিতে কাজ শুরুর পর থেকে আমাদের শ্রমিক ও সেখানে কর্মরত আমরা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে অসহযোগিতা করা শুরু হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করলে তিনি টাকা দাবি করেন এবং বলেন, ‘এভাবে কাজ করতে পারবে না।’ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কাজ করার দরকার নেই। কিছু টাকা নিয়ে চলে যাও। চট্টগ্রামের এক ঠিকাদার কাজটি করবে। প্রয়োজনে রিটেন্ডার হবে।’ কিন্তু তার সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি আমার কর্মীদের মারধর করা হয়। যার ভিডিও ধারণ করলে মোবাইলসহ চেয়ারম্যানের লোকজন আমার কর্মীদের ইউনিয়ন পরিষদের একটি রুমে আটকে রাখে। আমরা কিছু চাই না, শুধু আইনগত ভাবে আমাদের কাজের অধিকার ও নিরাপত্তা দেয়া হোক। আমরা বেআইনি কোন অধিকার চাচ্ছি না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আল-আমীন বলেন, আমরা ঢাকা থেকে কাজটি করতে এসেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের ইন্ধনে আমাদের মালামাল নষ্ট করা, কর্মীদের হয়রানি করা ও সবশেষ চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটেছে। আমরা এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। চিকদাইর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রিয়তোষ চৌধুরী বলেন, আমি একজন চেয়ারম্যান। আমি এমনটা কেনো বলব। আমি বলছি যত সহযোগিতা লাগে আমি করব। আমি বলছি একটু সময় দেন। আমি সহযোগিতা করব।
মারধর ও চাঁদা দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, এরকম একটা তথ্য প্রমাণ দেন। আর তখন তো আমি ইউনিয়ন পরিষদেই ছিলাম না। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি উনারা আপনাদের ভুল তথ্য দিয়েছে। চেয়ারম্যান হিসেবে আমি চরিত্র, আদর্শ নিয়ে চলি। আমি শহীদ পরিবারের ছেলে। আমার সম্বন্ধে জানবেন। উপরওয়ালা একজন আছেন। ইউপ চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমি জমিদারের ছেলে। আমি চাঁদাবাজ না। আমাদের টাকাপয়সার অভাব নেই। রাউজান থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, আমরা অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করবো। সত্যতা পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।