জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার ॥ প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে সুযোগ বুঝে পর্যটকদের কাছ থেকে গলাকাটা দাম হাঁকছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। শুধু হোটেল-মোটেলেই নয়, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে- পরিবহণ এবং রেস্তোরাঁগুলোতেও। পর্যটনমৌসুমের শেষ দিকে হওয়ায় পর্যটকের ঢল নেমেছে সেন্ট মার্টিনে। এই সুযোগে জাহাজ, ইজিবাইক, ভ্যানচালক ও রেস্তোরাঁসহ সব খানেই চলছে এমন রমরমা বাণিজ্য। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকাশ্যে রিসোর্টগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে তারা। আগে যে রিসোর্টের ভাড়া ছিল ১ থেকে ২ হাজার টাকা, এখন তা বাড়িয়ে এক লাফে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে।
এদিকে সেন্ট মার্টিনে প্রতিটি পয়েন্টে ইজিবাইকে উঠা-নামা জনপ্রতি ছিল ১০০ থেকে ২০০ টাকা। আর কেউ যদি রিজার্ভ করে আসে তাহলে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। প্রতিটি রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম বাড়তি। সী ব্লু নামে একটি হোটেলে এক বাটি ডাল ও একটি ছোট ইলিশ মাছের পিসের দাম ৫০০ টাকা। রেস্তোরাঁয় এভাবে বাড়তি দাম নেওয়ায় হতাশ পর্যটকরা। ঢাকা পোস্ট এই খবরের সত্যতা যাচাই করতে ওই রেস্তোরাঁয় যায়। এক বাটি ডাল ও একটি ছোট ইলিশ মাছের পিস অর্ডার করে। পরে খাবার শেষ হতে না হতেই একটি বিলের কাগজ হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। যেখানে খাবারের দাম ৫০০ টাকা লেখা রয়েছে। রেস্তোরাঁর ম্যানেজারকে খাবারের দাম এত বেশি কেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামা আমরা ২ মাস ব্যবসা করি। এ দুই মাসেই পুরো বছরের টাকা তুলে নিতে হয়।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা রাজিব (২৫) নামে এক পর্যটক বলেন, অললাইনে হোটেল বুকিং দিয়েছিলাম। যে রকম ছবি দেখেছিলাম সেটার সাথে রুমের কোনো মিল নেই। ছোট একটি খাট যার ভাড়া ২ হাজার টাকা। আসলে এগুলো একদম নিয়ন্ত্রণহীন। স্থানীয় এক সংবাদকর্মী অন্তর দে বিশাল (২৬) জানান, আমরা স্থানীয় হয়েও এই অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। একটি পানের দাম ১৫ টাকা। ইজিবাইকে উঠা-নামা ১০০ টাকা। রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে সেখানেও গলাকাটা দাম। প্রতিটি পণ্যের দাম লাগামহীন। এভাবে গলাকাটা বাণিজ্য চলতে থাকলে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নেবে।
শারমিন নামে এক পর্যটক ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, যে সেন্ট মার্টিন ডাবের জন্য বিখ্যাত সে সিন্ট মার্টিনে ডাবের দাম ২০০ টাকা। যেটি রাজধানী ঢাকার চেয়ে ২ গুন দাম। এই অসাধু ব্যবসায়ীরা আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ দিচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার । সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব) এর সভাপতি তোফায়েল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিছু অসাধু মৌসুমী ব্যবসায়ীর কারণে সেন্ট মার্টিন থেকে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তবে সেটাও এখন নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে। বর্তমানে সেন্ট মার্টিন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। তাই আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার ।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরীর বলেন, আগত পর্যটকদের হয়রানি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। যেখানেই অভিযোগ পাওয়া যাবে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশা করি, পর্যটকরা নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দে সেন্ট মার্টিনের সৈকত ও অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলো উপভোগ করতে পারবেন। এ জন্য কাজ করছে আমাদের একাধিক টিম। সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ এখন সংকটাপন্ন। তাই পর্যটন নিয়ন্ত্রণে সেখানে নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির কাছে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে একটি সফটওয়্যারও তৈরি করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের প্রতিদিন ১ হাজার ২৫০ পর্যটক যেতে পারবে। তবে সেখানে রাত যাপন করা যাবে না। ১ হাজার ২৫০ পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের ব্যাপারে পর্যটকের সংখ্যা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক সার্ভিসেস সংস্থার মাধ্যমে অ্যাসেসমেন্ট করা হয়েছিল। তারা প্রতিদিন এক হাজার পর্যটকের ধারণক্ষমতার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।