মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল ॥ গ্রাম-বাংলার চাষিদের মাঠজুড়ে প্রকৃতিতে অসাধারণ এক রূপ মেলেছে সূর্যমুখী ফুলে। মন কাড়া হলুদ ফুলে সেজেছে প্রকৃতি। এ যেনো অপরূপ দৃশ্য। মৌমাছির গুনগুন শব্দ মুখরিত সূর্যমুখী ফুলের মাঠ। হলুদ রঙের হাজারো ফুল মুখ করে আছে সূর্যের দিকে। সবুজ মাঠজুড়ে সূর্যের হাসিতে হাসছে টাঙ্গাইলের চাষিরা।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে তেল জাতীয় ফসল সূর্যমুখীর চাষ। ফলন ভালো ও বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকছেন এই সূর্যমুখী চাষে। দেশে তেলের ঘাটতি কমাতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের দেয়া হচ্ছে নানা প্রণোদনা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেখতে সূর্যের মতো, মুখ করে থাকে সূর্যের দিকে। তাই এর নাম সূর্যমুখী। দশর্নার্থীরা ভিড় করছেন সূর্যমুখী ফুলের সাথে ছবি তুলতে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ভিড় করেছেন সূর্যমুখী ফুলের মাঠে। টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ২২৮ হেক্টর জমিতে চাষিরা সূর্যমুখীর আবাদ করছেন। জেলার ১২টি উপজেলায় গত ৫ বছর আগেও জেলায় তেল জাতীয় ফসল সূর্যমুখীর চাষে কৃষকের তেমন আগ্রহ ছিল না। তেল জাতীয় ফসল চাষ বৃদ্ধির জন্য সরকারের কৃষি বিভাগের নানামুখী প্রকল্পে টাঙ্গাইলে এখন সূর্যমুখীর চাষ হচ্ছে। তেল আমদানী নির্ভরতা কমানোর জন্য কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সূর্যমুখীর চাষ সম্প্রসারনের জন্য কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করা হয়। এর ফলে টাঙ্গাইল জেলার কৃষকরা গত কয়েক বছর যাবৎ সূর্যমুখী চাষ শুরু করেছেন। গত মৌসুমে বাজারে ভাল দাম পাওয়ায় ও চাহিদা বেশী থাকায় কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। একারণে চলতি মৌসুমেও বেশী পরিমাণ জমিতে কৃষকরা সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। সারা জেলার কৃষকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে সূর্যমুখী চাষে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলনও হয়েছে ভালো। বর্তমানে ফসলের ক্ষেত জুড়ে শোভা পাচ্ছে রঙিন সূর্যমুখী ফুল। গত বছরের মতো এবারও দাম ভালো পেলে আগামীতে আরো বেশী জমিতে সূর্যমুখী চাষের কথা ভাবছেন কৃষকরা।
সূর্যমুখী ফুল দেখতে আসা সাব্বির মিয়া বলেন, সূর্যমুখী ফুল দেখতে সূর্যের মতো। মাঠ জুড়ে সূর্যমুখী ফুলের সমারোহ দেখতেই ভালো লাগছে। বন্ধুদের সাথে এসে সূর্যমুখী ফুলের সাথে ছবি তুলতে পারলাম। রোদের মধ্যে সূর্যমুখী ফুল গুলো চকচক করছে। জমিতে হাজারো সূর্যমুখী ফুল যেনো খেলা করছে।
সূর্যমুখী চাষি আলম খান বলেন, সূর্যমুখীর ভালো ফলন হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে ১ কেজি বীজ আর ২০ কেজি সার দিয়েছিল। প্রতিটি সূর্যমুখী ফুল থেকে ২৫০-৩০০ গ্রাম বীজ হবে। ৫ কেজি সরিষায় সোয়া কেজি তেল হয়। আর ৫ কেজি সূর্যমুখী থেকে দেড় কেজি তেল হয়। সূর্যমুখীর তেল খুবই পুষ্টিকর আমাদের জন্য। প্রতি কেজি সূর্যমুখীর তেল ৩৫০-৪৫০ টাকা বিক্রি করা যায়। এই মৌসুমে ৪০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেছি। সরিষার চেয়ে সূর্যমুখীর বেশি ফলন হয়।
সূর্যমুখী চাষি ছোরহাব মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে ৫০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করেছি। সূর্যমুখীর ফলন ভালো হয়েছে। সূর্যমুখীর তেল সরিষার চেয়ে বেশি পুষ্টিগুন। প্রতিটি ফুল থেকে ২৫০-৩০০ গ্রাম বীজ পাওয়া যাবে। বাজারে সরিষা ও সয়াবিন তেলের চেয়ে সূর্যমুখীর তেলের চাহিদা বেশি। গতবছর সূর্যমুখী আবাদ করে লাভবান হয়েছিলাম। কৃষি অফিস থেকে ৩ কেজি বীজ ও ১০০ কেজি সার দেওয়া হয়েছিল। সূর্যমুখী আবাদে আমার ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি ৫০ শতাংশ জমিতে ১০ মণ সূর্যমুখীর বীজ হবে। প্রতি মণ ৩৫০০-৪০০০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো। খরচ বাদে ২৫ হাজার টাকা লাভ থাকবে। সূর্যমুখীর ফুল দেখতে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ভিড় করছে। টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোহাম্মদ দুলাল উদ্দিন জানান, জেলায় ২২৮ হেক্টর জমিতে চাষিরা সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। সূর্যমুখী হলো ভোজ্য তেল। সূর্যমুখী সবচেয়ে ভালো মানের তেল। সূর্যমুখীর তেল শরীরের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত। চাষিরা সূর্যমুখী আবাদ করলে নিজেরাও তেল খেতে পারবে এবং বিক্রি করে লাভবান হতে পারবে। সূর্যমুখী থেকে ৪৫-৫০% তেল পাওয়া যায়। সরিষার থেকে ১০-১৫% বেশি তেল হয়। অন্য সব তেলের চেয়ে সূর্যমুখীর তেলে পুষ্টিগুণ বেশি। বাজারে সূর্যমুখী তেলের চাহিদাও বেশি। চাষিদের বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দিয়ে থাকি। চাষিদের সূর্যমুখী আবাদে বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। চাষিরা যেনো সূর্যমুখী আবাদ করে লাভবান হয় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।