রাজশাহী প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের অধীনে দেশের ব্যাপক উন্নয়নে বিএনপি অখুশি বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বিএনপিকে ভুল প্রমাণিত করে আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেখিয়েছে। এই সেতুতে ওঠার আগে দেশের মানুষের কাছে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি বলেছিল, আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু করতে পারবে না। পদ্মা সেতু এখন হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী গাড়ি চালিয়ে এর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পাড়ি দিয়েছেন। এখন অপেক্ষা করছি, এই সেতুর ওপর দিয়ে কখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রিজভী সাহেব যাবেন; নাকি নিচ দিয়ে আওয়ামী লীগের নৌকায় পার হবেন। এটা দেশের সবার সেতু। তবে এ জন্য বিএনপিকে তওবা পড়তে হবে। দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’
হাছান মাহমুদের মতে, দীর্ঘদিন রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকায় বিএনপি এখন যা–তা বলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নে দেশ বদলে যাওয়াতে দেশের মানুষ খুশি, কিন্তু বিএনপি অখুশি। এ জন্য তাঁদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আসলে দেশটা বদলে গেছে বলেই তাঁদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাঁরা নয়া পল্টনের অফিসে বসে প্রতিদিন আওয়ামী লীগের বিদায়ঘণ্টা বাজায়, কিন্তু কেউ সাড়া দেয় না। তাঁদের কর্মীরাও সাড়া দেয় না। আসলে বিএনপি নিজেদের বিদায়ঘণ্টা বাজাচ্ছে; আওয়ামী লীগের নয়।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, মাঠে–ময়দানে কোথাও নেই বিএনপি। সারা দেশে তারা সমাবেশ করতে পারে না। নিজেরা মারামারি করে। নিজেরা একটি সমাবেশ সুষ্ঠুভাবে করতে পারে না, তারা নাকি আবার সরকার পরিবর্তন করবে!
সরকার যে উন্নয়ন করেছে তাতে আগামী নির্বাচনে ভোট অন্য কোনো বাক্সে যাওয়ার কথা নয় বলে মনে করেন হাছান মাহমুদ। নেতা–কর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘যদি যায় তা আমাদের নেতা–কর্মীদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে যাবে। মানুষ ঔদ্ধত্য পছন্দ করে না। সে কারণে ক্ষমতায় থাকলে বিনয়ী হতে হয়। বিনয়ের কোনো বিকল্প নেই। তাই তরুণ নেতা–কর্মীদের বলব, বিনয়ী হওয়ার জন্য। যারা দলের নাম ভাঙিয়ে জায়গা দখল ও মাদকের কারবার করছে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার। যারা দলের নাম ভাঙিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছে, তাদের সতর্ক হওয়ার অনুরোধ জানাই। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয় নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগের প্রাণ হচ্ছে তৃণমূলের সংগঠন। দল যখন বড় কোনো সংকটে পড়েছে, তখন অনেক নেতা দলের সঙ্গে বেইমানি করেছেন, অনেক নেতা দল ত্যাগ করেছেন, ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন, অনেকে ক্ষমতাসীন নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। কিন্তু তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা কখনো বিভ্রান্ত হননি, তাঁরা সব সময় ঐক্যবদ্ধ থেকেছেন; দলের পতাকা সমুন্নত রেখেছেন। ২০০৭ সালে বিশেষ সরকার থাকার সময় যখন দলীয় নেত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন অনেক নেতাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি; কিন্তু তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা তা করেননি।
দুর্গাপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম। উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, সদস্য বেগম আখতার জাহান, সাংসদ মনসুর রহমান, আয়েন উদ্দিনসহ প্রমুখ। সম্মেলন শেষে দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান ফিরোজকে সভাপতি ও দাওকান্দি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোজ্জামেল হককে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।