বা আ॥ ২০০৫ সালের রমজান মাস। কার্তিকের কাঠফাটা গরমে প্রাণন্তকর অবস্থা সাধারণ মানুষের। ঢাকা শহরজুড়ে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা। আর সারা দেশে তো বিদ্যুৎই থাকে না। এমনকি ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময়েও বিদ্যুৎ না থাকায়- অবশেষে ক্ষুব্ধ হয় আপামর জনতা। অথচ সেসময় শুধু খাম্বা বসিয়ে- হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে- তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান। ফলে বিএনপি আমলজুড়েই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকটে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় দেশ।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ যখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৩শ মেগাওয়াটে উত্তীর্ণ করেছিল, তারেক রহমানের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বিএনপি আমলে তা কমে হয় মাত্র ৩ হাজার ২শ মেগাওয়াট। তার অর্ধেকই সরবরাহ করা হতো ঢাকার কয়েকটি অভিজাত এলাকায়। বাকি অর্ধেক বরাদ্দ করা হতো সারা দেশের জন্য! ফলে ২০০১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত শীতকালেও নজিরবিহীনভাবে বিদ্যুৎ-ঘাটতি দেখা দেয় দেশজুড়ে। ধস নামে কৃষি ও শিল্প- উভয়ক্ষেত্রে।
বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের এই আমলে, খোদ ঢাকাতেও দিনের বেলা মোমবাতি জ্বালিয়ে নিয়মিত স্কুলের ক্লাস নিতে বাধ্য হয়েছেন শিক্ষকরা। বিদ্যুৎ না থাকায় পানি উত্তোলনও ব্যাহত হয়েছে শহরে, ফলে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে রাজধানীর সাধারণ জনগণ।
এসময় গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ না থাকায়- চাষাবাদের জন্য ডিজেল চালিত সেচ পাম্পের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন- কৃষকরা। সেই সুযোগে ডিজেল ও সারের দামও বাড়িয়ে দেয় ‘হাওয়া ভবন’ সিন্ডেকেট। তবে তারেক-মামুন গংদের লুটপাটের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় তীব্র প্রতিবাদ।
তবে বিদ্যুতের দাবিতে দেশের কোথাও কোনো কথা বললেই- বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে- সাধারণ মানুষদের ওপর হামলা এবং তাদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করতে শুরু করে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বাধ্য করে জনগণের ওপর গুলি চালাতে। ফলে দেশজুড়ে বিএনপি সরকারের পেটোয়া বাহিনীর হাতে নিহত হয় শতাধিক ও আহত হাজার কয়েক হাজার মানুষ।
কৃষিকাজের সেঁচ সুবিধার জন্য, তীব্র গরম থেকে একটু রক্ষা পাওয়ার জন্য- শুধু বিদ্যুৎ চাওয়ার কারণেই ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে হত্যা করা হয় ২০ জন সরলপ্রাণ গ্রামবাসীকে। সেপ্টেম্বরে দেশের ৪০টি জেলার সাধারণ মানুষের ওপর একযোগে হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াতের পেটোয়া বাহিনী। এভাবেই হত্যা ও খুনের রাজত্ব কায়েম করে- দেশকে নৈরাজ্যের অন্ধকারে ডুবিয়ে- কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে তারেক রহমান ও তার বন্ধুরা।
অথচ আজ কেমন আছে গ্রামের মানুষ? ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। প্রত্যন্ত গ্রামের হারিকেনটিও এখন চলে গেছে জাদুঘরে। ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যখন আবার সরকার গঠন করেন, তখন দেশের মাত্রা ৪৭ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল, কিন্তু ২৪ ঘন্টায় নামেমাত্র কয়েকঘণ্টা করে বিদ্যুৎ পেতো তারা। আর আজ, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে এসে, মাত্র ১৩ বছরের মধ্যে বদলে গেছে পুরো দৃশ্যপট। দেশের শতভাগ মানুষ এখন ভোগ করছে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সুবিধা। রাজধানীর মানুষের কাছে লোডশেডিং এখন ইতিহাস মাত্র। নতুন প্রজন্ম জানেই না যে, দেশে একসময় বিদ্যুতের জন্য গুলি খেয়ে মরতে হতো! তাদের কাছে হয়তো এটি অবিশ্বাস্য মনে হবে। বিএনপি আমলের পুরনো পত্রিকাগুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে দেখুন।
আজকের বাংলাদেশ পুরোটাই নতুন। দেশ বদলে গেছে। শতভাগ বিদ্যুতের ওপর ভর করে ডিজিটাল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ও সরকারের কর্মনিষ্ঠার কারণেই আজ পুরো দেশ আলোকিত হয়েছে। জনতার অদম্য প্রচেষ্টায় এখন উন্নত বিশ্বের দিকে ধাবিত হচ্ছি আমরা। নতুন প্রজন্মকে আমরা আর অতীতের অন্ধকারে ঢেকে দিতে চাই না। জয় বাংলা বলে আগে বাড়ুন, কর্মময় ভবিষ্যত নিশ্চিত করুন।