পহেলা বৈশাখ ও রমজান

এলো এলো এলরে আবারো এলো পহেলা বৈশাখ এবং রমজান। এই দুটোই জাতিকে একত্রিত করে, সাম্যের বন্ধনে নি:শর্ত ভালবাসার বন্ধনে আলিঙ্গনাবদ্ধ করে, ধর্ম-কর্ম, ঐতিহ্য, অর্থ-বিত্ত ও বৈভব এর বাইরে এনে এক সুন্দর শান্তিপ্রীয় সুশৃঙ্খল জীবনানন্দ এবং নির্মল প্রশান্তির সুবচন নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামীর কল্যাণে এগিয়ে যেতে পথ দেখায়। একই কাজ সুসম্পন্ন করে থাকে রমজান, আর রমজান মাসের পবিত্রতা; রহমত, বরকত, মাগফিরাতসহ সকল ধরনের ফজিলত সৃষ্টির কল্যাণে নিবেদিত, ধর্মভেদে রমজান ভিন্নতর হলেও কিন্তু আদীতে রমজান একই উদ্দেশ্যে বিরাজমান রয়েছে। সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে নিবেদিত রমজান মানব জাতির কল্যাণের তরে। এই রমজানের মাধ্যমেই সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সৃষ্টিকর্তায় ঐক্যবধ্য নির্মল আনন্দ উপভোগ এবং জীবনের প্রয়োজনীয় যোগানসমৃদ্ধ হওয়া আর আখেরাতের নিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ হয়ে সৃষ্টির কল্যাণে এগিয়ে যাওয়ার ব্রতই জাতিকে বিশেষ করে মুসলিম জাতিকে বা উম্মাহকে উদার ও নম্র এবং বিনয়ী মনোভাবে উদৃপ্ত করে ইহলৌকিক ও পরলৌকিক যোগানের নিশ্চয়তায় অনুগঠকের ভুমিকা পালন করে। রমাজান এবং পহেলা বৈশাখ এই দুটো ভিন্ন হলেও কিন্তু দুটিই বাঙ্গালী জাতির জীবনে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে এবং যাবে। তবে এই দুটোর একত্রে আভির্ভাব এবং উদযাপন নির্বিঘ্নে করে জাতি দুটোকেই সম্মানীত করেছেন। দুটোকেই পবিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। দল-মত এবং জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণের উর্দ্ধে উঠে পহেলা বৈশাখকে একটি জায়াগা করে দিয়েছে যা সার্বজনীনতায় পরিপূর্ণ এবং সকল মতভেদ ও বিভেদের উর্দ্ধে রেখে এই দিবসটি বাঙ্গালীর জাতিয় দিবসে পরিণত হয়েছে। তবে কেউ এর বিরোধীতায় আর মুখরোচক গল্পের অবতারণা করতে পারবে না তা বলা যায় না। তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের আমলে এই জায়গাটুকু আরো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে একটি নতুন আঙ্গিকের উদ্ভাভনী শক্তির জাগরণে পরিণত হয়েছে এমনকি পাকাপোক্তকরণে এগিয়ে যাচ্ছে।
গত দুটি পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়নি যা ঘোষিত অদৃশ্য করোনার ছোবলে। ঠিক তদ্রুপ ঈদও স্বতস্ফুর্ত উদযাপন হয়নি ঐ একই কারণে। তবে এবারের বৈশাখের মুল আকর্ষণ ছিল রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব এবং নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তার দৃশ্যমান ব্যবস্থা। তবে এইভাবে আমাদের সকল অনুষ্ঠানগুলোকে নিছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে আবৃত্ত করতে পারলে এবং জাতির জাতিয় দিবসগুলোকে গুরুত্বের সহিত বিবেচনায় নিয়ে কায্যে পরিণত করতে পারলেই বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আরো একধাপ সামনে এগুবে এবং নতুন করে স্থায়ীত্ব ও রোল মডেলের নিশ্চয়তা পাবে। বিদেশী গোয়ান্দা সতর্কতা নয় বরং দেশীয় গোয়েন্দা সতর্কতা এবং অগ্রীম খবর সংগ্রহ এমনকি সকল নেতিবাচক প্রচেষ্টা ধ্বংস করে দেয়ার ক্ষমতার পাশাপাশি বিদেশী নিরাপত্তার খোজ-খবর রেখে সতর্কবার্তা প্রেরণ করা। এইভাবেই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগানো চৌকস বাহিনী সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নতুনভাবে মাথা উচু করে দাঁড়ানোর ব্যবস্থার স্বীকৃতি আদায়ে চলমান প্রচেষ্টাকে আরো গতিশীল ও তীক্ষণ অবস্থানে দাঁড় করাতে হবে। জাতির ক্রান্তিলঘ্নে জাতি যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করে একটি সহনশীল এবং গ্রহনযোগ্য অবস্থানে এসে পৌঁছেছে তার সবটুকুই সরকারের কৃত্ত্বিত্বের ভান্ডারে রক্ষিত তবে এই কৃতিত্বের ধারাবাহিকতা ও কলেবর বৃদ্ধিকল্পে আরো সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগুতো হবে এবং জাতির সামনে জাতিয় সেবকে পরিণত হতে হবে। তবে একটি কথা বলতে চাই “শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে” হ্যা সোহাগের পরিমান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সোহাগের পাশাপাশি শাসনের মাধ্যমে শৃঙ্খলা এবং নৈতিকতা ও ইমান -আমলে পরিপূর্ণতা আনয়নের তরে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া এবং বাস্তবায়ন করা জরুরী। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এইসকল করা খুবই সহজ তবে জনগণের বাইরে গিয়ে নয়।
জাগতিকতা এবং কোন অনুষ্ঠানের প্রতি মহব্বত না বাড়িয়ে বড়ং সৃষ্টিকর্তার প্রতি মহব্বত বাড়িয়ে তুলুন। এবাদত কাঠামোতে নয় বরং যার উদ্দেশ্যে এবাদত তাঁর প্রতি মহব্বত বাড়িয়ে তুলুন। সৃষ্টিকর্তাকে নিজ নিজ জীবনের অধিকর্তা হিসেবে বা পরিচালনাকারী হিসেবে নিজ নিজ হৃদয়ের সিংহাসনে আরোহন করান। সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সম্পর্কোউন্নয়নে আরো পরিচ্ছন্ন হয়ে নম্রতায় নিজেকে নিয়োজিত করুন। এই ক্ষেত্রে জীবনের সবচেয়ে দরকারী হুকুমকে গুরুত্ব দেন। “আমাদের মাবুদ আল্লাহ এক। তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের সমস্ত দিল, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত মন এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমাদের মাবুদ আল্লাহকে মহব্বত করবে।” তারপরের দরকারী হুকুম হলো এই, ‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত মহব্বত করবে।’ এই দুটি হুকুমের উপরই নবীদের সমস্ত কিতাব নির্ভর করে আছে। হ্যা আমরা যেন সকল ক্ষেত্রেই এই দুটো হুকুমকে পরিপালন করতে পারি এবং পৃথিবীতে খোদার হুকুম পালনের স্বৃকীত জাতী হিসেবে নিজেদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারি। আসুন আমরা সবাই আল্লাহর কাছে ফিরে আসি এবং আল্লাহর ছায়াতলে থেকে সকল কাজ করি যাতে সকল কাজেই কল্যাণ সাধিত হয়। নবী মাখাখির কথায় আমিও বলতে চাই “আমি মাবুদ, আমার কোন পরিবর্তন নেই। সেইজন্য হে ইয়াকুবের বংশধরেরা, তোমরা ধ্বংস হচ্ছ না। তোমাদের পূর্বপূরুষদের সময় থেকেই তোমরা আমরা সব নিয়ম-কানুন থেকে সরে গেছ এবং তা পালন কর নি। আমার কাছে ফিরে এস, আর আমিও তোমাদের কাছে ফিরে আসব।” মাবুদ আরো বলেছেন— “ দেখ, সেই দিনটা আসছে, তা চুলার আগুনের মত জ্বলবে। সেই দিন সমস্ত গর্বিত লোক ও অন্যায়কারীরা নাড়ার মত হবে এবং পুড়ে যাবে। একটা শিকড় ও একটা ডালও বাকি থাকবে না। কিন্তু তোমরা যারা আমাকে মহব্বত কর বা ভয় কর তোমাদের উপর ন্যায়ের সুর্য উঠবে যার আলোর রশ্নিতে থাকবে সুস্থ্যতা। হ্যা আমরা সবাই মাবুদে নিকট ফিরে আসি এবং মাবুদের ইচ্ছায় ও অভিপ্রায়ে নিজের ইহকালীন জীবন পরিচালনা করি।
বাংলাদেশ এগিয়েছে এবং এগিয়ে যাবে এতে কোন নেতিবাচক প্রেতাত্মার ছাপ পড়বে না। না হবে শ্রীলংকার দশা না হবে পাকিস্থানের দশা বরং আরো গতিশীল হয়ে বাংলাদেশের সকল প্রকার উন্নয়ন এগিয়ে যাবে কাংখিত লক্ষের দিকে। আগামীর মুক্তি হবে অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতার এবং পারস্পরিক শান্তি, শৃঙ্খলা, নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তার। বাংলাদেশ আগামীর বিশ্ব নেতৃত্বের অবশিষ্ট স্বীয় কার্য্যে অনুঘঠক হয়ে কাজ করবে এবং বিশ্বে ফিরে আসবে শান্তি ও নিশ্চয়তা এবং সকল ইতিবাচক দিকের স্থিতিশীলতা। করোনামুক্ত বাংলাদেশে এই নববর্ষের স্লোগান হউক “ভাতৃত্বের বন্ধনে জড়ানো সকল ইতিবাচকতা, ন্যায়পরায়নতা, সাম্য ও ন্যার্যতা, ক্ষমা এবং ভালবাসা। পিছনের সকল গ্লানী এবং ঘৃণা, হিংসা-বিদ্ধেষ, হামলা-মামলা সবই ইতিবাচক ক্ষমায় অবসান ঘটিয়ে সকলকে সৃষ্টিকর্তার দৃষ্টিতে গ্রহণ করে সৃষ্টিকর্তার অসমাপ্ত কাজের সমাপ্তি টানার দায়িত্ব ও কর্তব্য সুসম্পন্ন করার অঙ্গিকারের। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের, স্বাধীনতা সুরক্ষার, অধিকার আদায় এবং বিতরণের, সেবার পরিধী ও মানদন্ডের ক্রমোন্নতি ঘটিয়ে সমতাভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় সুফল ভোগ করানোর। আমাদের রোজা ও কর্ম হউক একমাত্র সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে। তাঁরই জন্য সকল কিছু করার প্রত্যয়ে কাজে, চিন্তায়, পরিকল্পনায় এবং বাস্তবায়নে দৃশ্যমান থাকুক। রোজাদার, ঈমানদার, পরহেজগার হিসেবে ঢোল পিটানো না হউক বরং সৃষ্টিকর্তার কাছে জবাবদিহীতার জন্য একমাত্র সৃষ্টিকর্তাকেই জানানো হউক। আর সেই পুরস্কার হিসেবে তাঁরই নিকট থেকে গ্রহণের অপেক্ষায় থাকার পালা বা প্রহর গুনা শুরু হউক। লোক দেখানো কোন কাজে যেন জড়িয়ে না পড়ি বরং সবকিছুই সৃষ্টিকর্তার জন্য করি এবং তাঁরই সৃষ্টির উপকারে বা কল্যাণের তরে করি। সকল নেতিবাচকতা পরিহার করি এবং অন্যের উন্নতি ও মঙ্গলে উৎসাহিত হই এমনকি খুশি হয়ে প্রশংসা করি। আল্লাহর বা সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া আদায় করি। অন্যের জন্য মোনাজাতে মঙ্গল কামনায় ব্যতিব্যস্ত থাকি। খোদা তায়ালা আমাদের সঙ্গে আছেন এবং আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ও যাবেন। কোন প্রতিবন্ধকতাই এই উন্নয়ন এবং অগ্রগামীতাকে থামাতে পারবে না বরং এরই মধ্যে দিয়ে মানুষ আরেকটিবার খোদাকে পরখ করবে এবং খোদার কাছে ফিরে আসার রাস্তা উন্মুক্ত হবে। খোদা তায়ালা আমাদেরকে আশির্বাদ করুন এবং আপনার নেয়ামতে, হোফাজতে এবং সুরক্ষায় ও নিয়ন্ত্রণে আবদ্ধ রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.