প্রশান্তি ডেক্স॥ রমজানে মাসের শুরু থেকেই দেশে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে থাকা কোটি প্রবাসী। ঈদে পরিবারের চাহিদা মেটাতে প্রবাসীরা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি বেশি টাকা পাঠান দেশে। পরিবার পরিজনের কাছে যেতে না পারলেও তাদের ঈদের কেনা কাটার জন্য টাকা পাঠাতে কার্পণ্য করেন না প্রবাসীরা। পরিবারের কেনাকাটার জন্য টাকা পাঠালেও নিজের জন্য কিছুই কেনেন না বেশির ভাগ প্রবাসী।
পরিবারের হাল ধরতে বিদেশে কাজ করছেন কোটি বাংলাদেশি। পরিবারের অবস্থান বদলের জন্য বিদেশের মাটিতে কাজ করলেও প্রবাসীর মন পড়ে থাকে দেশে। প্রবাস জীবন সংগ্রামে ব্যস্ত এই মানুষগুলো ভুলে যান নিজের প্রয়োজনের কথা। প্রতি বছরই ঈদের আগে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ে। এবারও প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। মূলত পরিবার পরিজনের চাহিদা মেটাতে গিয়ে নিজের জন্য বাড়তি টাকা খরচ করতে চান না প্রবাসীরা। বিদেশে জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়া অনেক দেশ থেকেই জামা-কাপড় কেনেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি এপ্রিলে রেমিট্যান্সের গতি বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে আসছে ৬ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। এপ্রিলের ২১ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪০ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। মার্চে গড়ে প্রতিদিন এসেছে ৬ কোটি ডলার করে। প্রবাসীরা গত মাসে বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন ১৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। যা ২০২১ সালের জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ। জুলাইয়ে এসেছিল ১৮৭ কোটি ডলার।
সৌদি আরব আলমগীর হোসেনের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। এবার ঈদে বাবার কাছ তার আবদার দুটো প্যান্ট আর দুটো টিশার্ট আর এক জোড়া জুতা। আর ৫ম শ্রেণিতে পড়া মেয়ে বাবার কাছে চাইছে একজোড়া জুতা আর মেহেদি। সন্তানদের আবদার মেটালেও নিজের জন্য কিনবেন না কিছুই। ২০ বছর ধরে সৌদি আছেন লক্ষ্মীপুরের আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, বাড়িতে বাবা,স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে।আমি ঈদে নিজের জন্য কিছু কিনি না। সেই টাকা আমার প্রতিবেশী গরিবদের কাপড় কিনে দেই।
চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইসহাক ১৩ বছর ধরে দেশের বাইরে কাজ করছেন।.বর্তমানে তিনি দুবাইয়ে। দেশে রয়েছেন মা, ভাই, বোন এবং স্ত্রী। ইসহাক বলেন, ঈদ কী সেটা প্রবাসে এসে ভুলে গেছি। পরিবারের অভাব অনটন দূর করতে এখানে কাজ করতে আসছি। এখন ঈদের ছুটি তো চাইলেও পাবো না। আর দেশে যাওয়া আসাও অনেক খরচ। ঈদে পরিবারে জন্য অবশ্যই খারাপ লাগে, কিছু করার নেই। আমি দেশে টাকা পাঠাই, মা, ভাই, বোন এবং স্ত্রী ভালো আছে, এটাই আমার আনন্দ।
২০১৮ সালে বাড়ি থেকে যে শার্ট প্যান্ট নিয়ে আসছেন সেগুলো ব্যবহার করছেন মোহাম্মদ রাসেল। প্রতি মাসে বাড়িতে মায়ের কাছে টাকা পাঠান তিনি। মোহাম্মদ রাসেল বলেন, সৌদি আরবের নরমালি একটা প্যান্ট কিনতে ৫০ রিয়াল খরচ হয়। চিন্তা করি ওই ৫০ রিয়াল দিয়ে দেশে তিনটি প্যান্ট কিনতে পারবো। তাই দেশে গেলে কাপড় কিনে আনি। প্রবাস জীবনের আগে দেশে থাকতে ঈদ প্রতি বছর কেনাকাটা করতেন এই প্রবাসী। মোহাম্মদ রাসেল বলেন, দেশে থাকতে কিনতাম। তখন টাকা কী জিনিস বুঝতাম না, মাস শেষে ভাইয়েরা টাকা দিতো। কিন্তু এসব বিদেশে এসে বুঝতে পারছি, তারা কত কষ্ট করে টাকা পাঠাতো।
সাইফুল ইসলাম মিঠু বাহরাইন প্রবাসী।মেহেরপুরে মা,বাবা আর ৪ ভাই থাকেন। ঈদের সময়ে বেতন পেতে দেরি হবে তাই আগের মাসেই দেশে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি চাই পরিবার সবাই খুশি থাকুক। তাদের খুশিতেই আমি খুশি।এখানে আমি একা একা থাকি, আমার আর নিজের জন্য আলাদা করে কেনার কিছু নেই। গত মাসেই টাকা পাঠিয়েছি। জানতাম এই মাসে স্যালারি পেতে দেরি হবে।
১৫ বছর দরে সৌদিতে আছেন কুমিল্লার রফিকুল ইসলাম। রমজান মাসের শুরুতেই নিজের পরিবারের জন্য টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। অথচ নিজের জন্য কেনেননি কিছুই। রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিবারের খুশি মানে আমার খুশি। আমার আর নিজের জন্য কিনার কিছু নেই। বিদেশে এসে আলাদা করে ঈদের জন্য কিছু কেনা হয় না।
মিলন খান থাকেন সৌদি আরবে।তিনি বলেন, আমার পরিবারে পাঁচ সদস্য। পরিবারের ঈদের কেনাকাটার জন্য ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছি। এই টাকায় তাদের হচ্ছে না। কিন্তু আমার কাছে আর টাকাও নেই। যদিও তাদের বলছি দেখি কী করা যায়। আমার মাসের খাবার খরচ বাবদ কিছু টাকা হাতে আছে, সেটাই পাঠিয়ে দেবো। পরিবারের সবাই কেনাকাটা করবে, এটাই আমার আনন্দ। তবে সত্যি বলছি আমি একটা সুতাও কিনি নাই, কেউ জানতেও চায়নি আমি ঈদে কিছু কিনেছি কিনা।