প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ কেকের আকস্মিক মৃত্যুর পেছনের কারণ কী? কলকাতায় কেকে’র শেষ কনসার্টের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানাচ্ছেন, আয়োজনেই গলদ ছিল। সেই প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, চূড়ান্ত অব্যবস্থাপনা ছিল অনুষ্ঠানের আয়োজকদের। এমনকি, অনুষ্ঠানে ঢোকার আগে ইট, পাথর, কাঁচ ছোঁড়া হয়। আয়োজকদের সঙ্গে হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়ে কনসার্ট দেখতে আসা জনতা।
এক কলেজ পড়ুয়া দেখতে গিয়েছিলেন কনসার্ট। তিনি জানিয়েছেন, ‘অনেকের কাছেই পাস ছিল। কেউ কেউ বিনামূল্যেও পাস পেয়েছিলেন। আবার অনেকেই পাঁচ হাজার টাকা দিয়েও অনুষ্ঠানের টিকিট কিনেছিলেন। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর আগে পাস ছাড়াই অনেকে নজরুল মঞ্চে ঢুকে গিয়েছিলেন। ফলে আয়োজকদের সঙ্গে শুরু হয়ে যায় ধাক্কাধাক্কি।’
সেই ছাত্রী আরও জানিয়েছেন, ধাক্কাধাক্কির ফলে অনেকেই আহত হন। এমনকি, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের মাধ্যমে ভিড় ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছিলেন আয়োজকরা। ‘পাস থাকা সত্ত্বেও হলে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না আয়োজক ভলান্টিয়াররা। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে অধৈর্য হয়ে পড়েন সকলেই। তখনই আয়োজকদের দিকে পাথর ছোঁড়া হয়। পাল্টা অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র চালায় আয়োজকরা। সেই গ্যাসের ফলে অনেকেই অসুস্থ বোধ করেন।’
জায়গা থাকা সত্ত্বেও আয়োজকরা ঢুকতে দেয়নি বলেই অভিযোগ সেই ছাত্রীর।
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাওয়ার পরে অবশ্য সেরকম বিপত্তি ঘটেনি। কিন্তু প্রচণ্ড ভিড়ের ফলে ক্রমশ গরম বাড়তে থাকে হলের ভেতর। সেই ছাত্রী জানিয়েছেন, এসি চালানো হয়েছিল হয়তো। কিন্তু তাতেও প্রচণ্ড গরম লাগছিল সকলের। তিনি বলছেন, ‘কেকে বারবার বলছিলেন, পেছন দিকের আলো নিভিয়ে দিতে। কারণ আলোর ফলে বেশি গরম লাগছিল। কিন্তু বারবার বলা সত্ত্বেও আলো নেভানো হয়নি।’
অনুষ্ঠান চলাকালীন কি অসুস্থ বোধ করছিলেন কেকে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলছেন, ‘প্রচণ্ড গরমের কারণেই ভীষণ ঘামছিলেন কেকে। বারবার জল খাচ্ছিলেন।’ অসুস্থ বোধ করলেও মঞ্চে কেকে-কে দেখে মনেই হয়নি তিনি শারীরিক দিক থেকে অসুস্থ বোধ করছেন।
প্রসঙ্গত, কেকের শোয়ের আগেই বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন গায়ক রূপঙ্কর বাগচি। তিনি বলেছিলেন, ‘অনেক বাঙালি শিল্পী রয়েছেন যারা কেকের থেকে ভালো গান করেন। তাদের নিয়ে কেন এত মাতামাতি হয় না!’ যদিও তিনি জানতেন না, সেই উন্মাদনার ফলাফল এতোটা বিয়োগান্তক হবে।
পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. কুনাল সরকার বলেন, ‘দক্ষিণ কলকাতায় ৪টি হাসপাতাল থাকলেও, তাকে (কেকে) নিয়ে যাওয়া হল মধ্য কলকাতায় একটি হোটেলে। সেখানে একটা অসুস্থ মানুষকে বেশ খানিকক্ষণ রেখে তারপর নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে। আর্টিস্টদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সময় নষ্ট করা হলো, কলকাতার জন্য লজ্জার দিন। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সার্বিক ব্যর্থতা।’
হিন্দি, তামিল, বাংলাসহ একাধিক ভাষায় গান গেয়ে কোটি মানুষের হৃদয়ে আসীন বলিউড গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ। ভক্তরা যাকে কেকে নামেই সম্বোধন করেন। গত মঙ্গলবার (৩১ মে) সবাইকে শোকে ভাসিয়ে ৫৩ বছর বয়সে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। কলকাতার নজরুল মঞ্চে গাইতে এসে অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি।