প্রশান্তি ডেক্স॥ বাঙালির ইতিহাসে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় হচ্ছে সবচেয়ে বড় অর্জন, আমাদের গর্বের প্রতীক। এর মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি গণতন্ত্র, সংবিধান, জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা, আমাদের ভূখন্ড এবং বাঙালি হিসাবে আমাদের পরিচয়। কিন্তু স্বাধীনতাত্তোর আমাদের যা যা অর্জন, যে সকল বিষয়ে বাঙালি হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি, যেমন পোশাক শিল্প, ক্রিকেট ইত্যাদির মধ্যে আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়েছে। এ আত্মবিশ্বাস অর্জন সম্ভব হয়েছে শুধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বের কারণে। তার নেতৃত্বের গুণে বাংলাদেশ আজ একটি শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে আছে যা সরকারকে সাহস যুগিয়েছিল নিজস্ব অর্থায়ণে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিতে। তবে এ কাজটি খুব সহজ ছিল না। এটি করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনেক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হয়েছে এবং পরিশেষে তিনি সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। আগামী ২৫ জুন, পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত জনসভা সফল করার লক্ষ্যে আজ ১৬ জুন (২০২২), বৃহস্পতিবার, সকাল ১০টায়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে দক্ষিণবঙ্গের ২২টি জেলার প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রস্তুতি সভায় সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ এ কথা বলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি। সঞ্চালনা করেন-যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন-ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে এই সেতু একটা মাইলফলক হিসাবে ভূমিকা রাখবে। গ্রামের মানুষকে জীবিকা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার জন্য শহরে দৌঁড়াতে হবে না। নিজ জেলা থেকেই শহরের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবে। উন্নতমানের বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, শিল্প, কল-কারখানা ও কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে। খুব শীঘ্রই, স্বাভাবিকভাবে আপনার জেলার পৌরসভা মেগা শহরে রূপান্তরিত হবে। এই সেতু নির্মাণের ফলে দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নদীবেষ্টিত ভূখ- সরাসরি রাজধানীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। পদ্মা সেতু যেমন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় ৫ কোটি মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক সুবাতাস বয়ে আনবে, তেমনই কমপক্ষে এক দশমিক পাঁচ শতাংশ জাতীয় আয় বৃদ্ধিও নিশ্চিত করবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে, লাভবান হবে পুরো দেশের মানুষ। প্রসার হবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনের। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নির্মাণে এই সেতুর প্রভাব হবে অপরিসীম। মোটকথা, যোগাযোগের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ অত্যন্ত সহজতর হবে। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পদ্মা সেতু আজকে বাংলাদেশের একটি বাস্তবতা। এটি শুধু বাংলাদেশের জন্যই গর্বের বিষয় নয়, এটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের জন্য একটি শিক্ষণীয় উন্নয়ন প্রকল্প হয়ে থাকবে।
তিনি পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন-আপনারা জানেন একসময় বিশ্ব ব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়ণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। সব পকিল্পনা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে-এমন সময় কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে। কোন সুস্পষ্ট অভিযোগ ছাড়া একটি ডায়রির পাতাকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাংক সরকারের উচ্চ পদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা সরকার এবং দুর্নীতি দমন কশিমনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বব্যাংকের এ চাপের কাছে নত স্বীকার করেনি। বরং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তখন দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন বিশ্বব্যাংক যদি দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণাদী দাখিল করতে পারে তাহলে সে সমস্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু বিশ্বব্যাংক কখনোই তা প্রমাণ করতে পারেনি। সবচেয়ে হাস্যকর বিষয়, বিশ্বব্যাংকের যে কর্মকর্তা সেই সময় দুর্নীতি দমন কমিশন এবং সরকারের ওপরে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে মর্মে চাপ প্রয়োগ করেছিল সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখন দুর্নীতির তদন্ত চলছে বিশ্বব্যাংকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেদিন দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন যে বাংলাদেশে পদ্মা সেতু অবশ্যই নির্মিত হবে এবং সেটি নিজস্ব অর্থায়ণে। প্রধানমন্ত্রীর সেই দিনের কথাকে অনেকে উপহাস করেছিল। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, উদ্দেশ্য যদি সৎ হয় এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকে তাহলে যে কোনো অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। তার সেই ঘোষণা বর্তমানে বাস্তবে পরিণত হয়েছে পদ্মা সেতুর সমাপ্তির মধ্য দিয়ে।
তিনি যুবলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন-২০২৩ এর নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনাদের ভূমিকা হবে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব মানুষের মাঝে পৌঁছে দেওয়া। এর গুরত্ব আপনারা সভা-সমাবেশে বলবেন। এভাবে পদ্মা সেতুর গুরত্ব সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি ২৫ জুনের জনসভাকে সফল করার লক্ষ্যে যুবলীগের স্বেচ্ছাসেবক টিম, ফ্রি মেডিকেল টিম, শৃঙ্খলা টিম, সার্বিক মনিটরিং টিম, প্রচার টিম, আপ্যায়ন টিম গঠন এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যেন কোন অপশক্তি নস্যাৎ করতে না পারে সে দিকে যুবলীগের নেতা-কর্মীদেরকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আজম এমপি বলেন-আগামী ২৫ জুন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত জনসভা সফল করার জন্য যুবলীগকেই প্রধান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচি সফল করার জন্য আমাদের ধারণার চেয়েও যুবলীগ বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি যুবলীগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে উদ্দেশ্য করে যারা দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র করেছে তারা কিন্তু বাংলাদেশেরই মানুষ। তাদের ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। আমরা যদি সজাগ থাকি তাহলে কেউ কোন ধরণের নাশকতা করতে পারবে না। এই পদ্মা সেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতার প্রতীক। কারণ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ণে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল কিন্তু মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর বিনিয়োগ থেকে সরে দাড়ায়। বঙ্গবন্ধুকন্যা ভেঙ্গে না পড়ে সাহসিকতার সাথে স্বপ্নের পদ্মা নির্মাণের ঘোষণা দেন এবং আজ সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। এই পদ্মা সেতু শুধু সক্ষমতার প্রতীক নয়, এটা ষড়যন্ত্রকারীদের মুখে বিশাল চপেটাঘাত।
যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন-২৫ জুন বাঙালি জাতির অস্তিত্বের দিন। পদ্মা সেতুকে ঘিরে বিএনপি-জামাত বাংলাদেশকে আবার চোরের দেশ, ভিক্ষুকের দেশ, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোবল আর আত্মবিশ্বাসের ফলে নিজেদের অর্থায়ণে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে তার দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সারা বিশ্ব আজ বাংলাদেশকে মর্যাদার চোখে দেখছে। তিনি আরও বলেন-পদ্মা সেতু নিয়ে যে ভাবে অপপ্রচার, মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্র আর গুজব রটানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কেউ হলে বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়তো। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাঁর সততা, দৃঢ়তা, আর আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করেছেন। বিশ্বে প্রমাণ করেছেন বাঙালি জাতি সততার জাতি, আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান জাতি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন-যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা: খালেদ শওকত আলী, মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন এমপি, মোঃ রফিকুল ইসলাম, মোঃ নবী নেওয়াজ, সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার, ইঞ্জি. মৃনাল কান্তি জোদ্দার, তাজউদ্দিন আহম্মেদ, জসিম উদ্দিন মাতুব্বর, মোঃ আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, সুব্রত পাল, মুহা: বদিউল আলম, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মোঃ মাজহারুল ইসলাম, ডা: হেলাল উদ্দিন, মোঃ সাইফুর রহমান সোহাগ, মোঃ জহির উদ্দিন খসরু, আবু মুনির মোঃ শহিদুল হক চৌধুরী রাসেল, মশিউর রহমান চপল, অ্যাড. ড. শামীম আল সাইফুল সোহাগ, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজা, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, দপ্তর সম্পাদক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ জহুরুল ইসলাম মিল্টন, অর্থ সম্পাদক মোঃ শাহাদাত হোসেন, শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার সম্পাদক ব্যারিস্টার আলী আসিফ খান রাজীব, আন্তর্জাতিক সম্পাদক কাজী সারোয়ার হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোঃ সাদ্দাম হোসেন পাভেল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক মোঃ শামছুল আলম অনিক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মুস্তাফিজ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক ডা. মোঃ ফরিদ রায়হান, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক অ্যাড. হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা, ধর্ম বিষযক সম্পাদক মাওলানা খলিলুর রহমান সরদার, মহিলা সম্পাদক অ্যাড. মুক্তা আক্তার, উপ-দপ্তর সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক অ্যাড. শেখ নবীরুজ্জামান বাবু, উপ-অর্থ সম্পাদক সরিফুল ইসলাম দুর্জয়, উপ-শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার সম্পাদক কাজী খালিদ আল মাহমুদ টুকু, উপ-ত্রাণ সম্পাদক মোঃ আলতাফ হোসেন, উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ রাশেদুল হাসান সুপ্ত, উপ-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক এন আই আহমেদ সৈকত, উপ-স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক ডা. মাহফুজুর রহমান উজ্জ্বল, উপ-কৃষি ও সমবায় সম্পাদক মোল্লা রওশন জামির রানা, উপ-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ গোলাম কিবরিয়া শামীম, উপ-ধর্ম সম্পাদক হরে কৃষ্ণ বৈদ্যসহ ২২টি জেলার নেতৃবৃন্দ।