বাআ॥ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, বিএনপি বলছে, তাদের কথামতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফর্মুলা না দিলে তারা নির্বাচনে আসবে না। আমরা বলি, তত্ত্ববধায়ক সরকার ফর্মুলাই কোন নির্বাচন হবে না। যেভাবে সারা বিশ্বে, ইংল্যান্ডে, ভারতে, যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দল থাকা অবস্থাতেই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন হয়, সেভাবেই নির্বাচন হবে। আগামী নির্বাচনে জনগণের রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় আসবে ইনশাল্লাহ।
গত শুক্রবার সকালে রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের ১ম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। তানোরের গোল্লাপাড়া বাজার মাঠে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। শুরুতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন-ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, দেশের এখনো অনেক উন্নয়ন কাজ বাকি আছে। সেই কাজটি আওয়ামী লীগ করছে, আগামীতেও করতে চায়। শেখ হাসিনা আগামীতেও ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন-এটি আপনারা-আমরা সকলে চাই। কারণ শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষ ভালো, নিরাপদে ও শান্তিতে আছে। সেই কারণে আওয়ামী লীগকে দরকার। আওয়ামী লীগের মতো অপরিহার্য দল বাংলাদেশ আর নেই।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, একটি সুযোগ পেলে এবং একটু সুযোগ না পেলেও যারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বলে, সেই খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল গংরা বলেছিল পদ্মা সেতু হবে না, বৈদেশিক মুদ্রা রির্জাভ হঠাৎ করে নাই হয়ে যাবে। তাদের মুখে ছাই দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। এ বছর ঈদের আগ পর্যন্ত প্রবাসী ভাইয়েরা ৫২ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এটিই শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। এই টাকা তো আগেও আসার কথা ছিল। কিন্তু বিএনপি সরকারের সময়ে আসেনি। কারণ তখন ব্যাংকিং চ্যানেল ছিল না। এখন ব্যাংকিং চ্যানেল এতো সোজা করে দিয়েছেন আমাদের নেত্রী, প্রবাসীরা নিশ্চয়তার জন্য ব্যাংকিং চ্যানেল দিয়ে টাকা বাংলাদেশে পরিবারের কাছে পাঠায়।
তিনি আরো বলেন, পুরাতন প্রবাদ আছে, শকুনের দোয়ায় গরু মরে না। শকুন আকাশে উড়ে আর ভাবে যদি একটা গরু মরতো, তাহলে মেনে গিয়ে খেতে পারতাম। ওই রকম বিএনপি-জামায়াতের নেতারা শকুনের মতো, মির্জা ফখরুল গংরা বাংলার আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে আর খুঁজছে কোথায় শেখ হাসিনা সরকারের ক্রটি হলো। সেটা নিয়ে চিৎকার চেচামেচি করবে, আন্দোলন করবে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আজ থেকে প্রায় ৭ বছর আগে খালেদা জিয়া বলেছিল, ‘ঈদের পরে আন্দোলন হবে।’ আজ ৭ বছরেও সেই আন্দোলনের শেষ হয়নি, শুরুও হয়নি, সেই আন্দোলনের কোন খবরই নাই। বিএনপি নিজের আন্দোলন নিজেই খেয়ে ফেলে ঘরে মধ্যে ঢুকে বসে আছে। যে দলের নেতারা ঢাকায় চমৎকার বাড়ি ছেড়ে, এসি গাড়ি ছেড়ে রাজপথে সূর্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে, পথে-প্রান্তরে দাঁড়িয়ে মানুষের সাথে কথা বলার মানসিকতা রাখে না। সেই দলের কথায় বাংলার মানুষ কান দেবে, সেটি হবে না।
তিনি আরো বলেন, উপমহাদেশে আওয়ামী লীগের মতো এতো প্রাচীন ও বিশাল দল একটিও নেই। আওয়ামী লীগ বটগাছের মতো দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ছায়া দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ আছে বলেই বাংলাদেশ টিকে আছে।
রাজশাহী সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করে অনেক অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। তিনি আছেন বলেই রাজশাহীকে আমরা উন্নয়নে বদলে দিতে পেরেছি। আগামী মে মাসের মধ্যে রাজশাহী আরো অনেক বদলে যাবে, আরো নতুন হবে, আরো আধুনিক হবে, আরো সুন্দর হবে, আরো কর্মমুখর হবে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের বিনয়ী হতে হবে, ভালো আচরণ করতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। যারা ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী তাদের পরিহার করে ভালো মানুষকে দলে টানতে হবে। শেখ হাসিনা সারাদেশে উন্নয়ন করছেন। উন্নয়নের কথাগুলো মানুষের কাছে পৌছে দিতে হবে।
এসএম কামাল হোসেন আরো বলেন, শেখ হাসিনা নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রধানমন্ত্রী হননি। তিনি এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন।
সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার। সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা। তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া বেগম, সদস্য বেগম আকতার জাহান, সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা এমপি, সদস্য আব্দুল আওয়াল শামীম ও রাজশাহী-১(তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আদিবা আঞ্জুম মিতা। সঞ্চালনা করেন তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন। সম্মেলনের ১ম অধিবেশনে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে মাইনুল ইসলাম স্বপন সভাপতি ও আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন।