প্রশান্তি ডেক্স ॥ বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দল পরিচালনা, সাংগঠনিক কার্যক্রম, বন্যার্তদের সহযোগিতাসহ বেশ কিছু বিষয়ে তিনি দলের সিনিয়র নেতাদের কাছে নিজের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। গত ১০ জুলাই ঈদুল আজহায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ মনোভাব প্রকাশ করেন। গত কয়েকদিনে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে সাক্ষাৎকারী একাধিক নেতা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য জানান, সামগ্রিকভাবে দল পরিচালনা নিয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী নেতাদের প্রতি নিজের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শর্তসাপেক্ষে মুক্তিপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া। তিনি নিয়মিত দলের খোঁজ খবর রাখছেন।
এ বিষয়ে গত শুক্রবার (১৫ জুলাই) আলাপকালে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আমরা ঈদের দিন সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। ম্যাডাম আমাদের বললেন, ‘দল তো ভালোই চালাচ্ছেন’। তিনি আলাপে জানান, খালেদা জিয়া নিয়মিত পত্রিকা দেখেন। দল ভালো চলতেছে, তিনি মোটামুটি খুশি। উনার অ্যাবসেন্স নিয়ে তিনি অখুশি না। বিছানায় বসেই দলের খোঁজ খবর রাখছেন।
তবে আলাপে জমির উদ্দিন সরকার জানান, সৌজন্য সাক্ষাতে নির্বাচন নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন গিয়েছিলাম তো, সৌজন্য বিনিময়ই বেশি সময় গেছে। কার্টেসি ভিজিট।’
১০ জুলাই রাত সাড়ে ৮টায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান গুলশানের ‘ফিরোজা’য় যান। দেড় ঘণ্টা সাক্ষাৎ শেষে সেদিন রাত ১০টায় তারা বেরিয়ে আসেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান যুক্তরাষ্ট্র, ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু নিজ নির্বাচনি এলাকায় থাকায় সাক্ষাতে তারা অনুপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ গত রমজানের ঈদে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎ শেষে বিএনপি মহাসচিব উল্লেখ করেন, ‘খালেদা জিয়া সিলেট, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনায় বন্যার্তদের খবর আমাদের কাছ থেকে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা যেভাবে দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছ ঠিক সেভাবেই তোমরা বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে থাকবে তাদের কষ্ট লাঘব না হওয়া পর্যন্ত। তিনি মনে করেন বন্যার্তদের সেবা করা মানে হচ্ছে মানুষের সেবা করা এবং এটাই রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।’
বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, সম্প্রতি সরকার দলীয় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ব্যক্তির পক্ষ থেকে বিএনপির নেতৃত্ব কার হাতে বা ক্ষমতায় এলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, এসব প্রশ্নে বেগম জিয়ার কথাই তুলে ধরেছেন বিএনপির নেতারা। নেতারা মনে করছেন, শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার পাশাপাশি ‘শর্তসাপেক্ষ জীবনযাপনের’ কারণে তিনি ঘরবন্দি হলেও আদতে তাকে সামনে রেখেই রাজনৈতিক অবস্থান বিএনপির। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তারেক রহমান সক্রিয় থাকলেও মূল নেতৃত্ব বেগম জিয়ার হাতেই। জানতে চাইলে বুধবার (২০ জুলাই) স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া আমাদের দলের চেয়ারপারসন, তার ভাবাদর্শই আমাদের আদর্শ। তিনি বন্দি থাকার কারণে দলের দৈনন্দিন সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন না। সেটা আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সারাদেশে সংগঠনের সাংগঠনিক তৎপরতা সরাসরি তত্বাবধান করছেন।’