কৃচ্ছতা সাধন এবং মিতব্যায়ী হওয়ার শিক্ষা ছোট বেলার বা শৈশবের শুরুতেই পেয়েছি; প্রথমত পরিবার তারপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। সেই কৃচ্ছতা সাধন নিয়ে জীবনের অনেক গল্প পড়েছি এবং কৃচ্ছতা সাধন ব্যক্তি জীবনেও করেছি কত শত বার তার কোন হিসেব নেই। আজ জাতীয় জীবনে কৃচ্ছতা সাধনের প্রি মহড়া শুরু হয়েছে। তবে এই মহড়াই যেন কৃচ্ছতা সাধনের কর্মযজ্ঞ উৎরিয়ে যেতে পরি সেই কামনায় প্রতিনিয়ত করি মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট।
আমাদের জাতীয় জীবনে কৃচ্ছতা সাধনের প্রয়োজনীয় কি ও কেন এবং কতদিনের জন্য তার কোন সুনিদিষ্ট ছক বা পরিকল্পনা এখন আমাদের হাতে নেই। তবে দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সফলতা এবং ভোগ বিলাসের প্রয়োজনে কি আজ কৃচ্ছতা সাধন জরুরী হয়েছে নাকি মহামারি করোনার ছোবলে আক্রান্ত পৃথিবী এবং এর আভ্যন্তরিন সকল কিছু আজ কৃচ্ছতা সাধনে ব্যতিব্যস্ত। তবে এই কৃচ্ছতা সাধনের প্রয়োজনীয়তাই যুক্ত হয়েছে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধ। এই সকল মিলেই আজ পৃথিবীর অর্থনীতি, খাদ্য, যোগাযোগসহ সকল ক্ষেত্রেই কৃচ্ছতা সাধনের প্রয়োজনীয়তা অনুভত হচ্ছে। তবে কেউ কেউ পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে কৃচ্ছতা সাধন অনেক আগে থেকেই শুরু করেছে কিন্তু আমাদের স্ব মহিমায় উদ্ভাসিত দেশ এবং সরকার দেরীতে হলেও শুরু করেছে। কিন্তু এর শুরুটা হয়েছে নিজের ঘর দিয়ে এবং সরকারের অফিস আদালত দিয়ে। পাশাপাশি জনগণকেও এই কৃচ্ছতা সাধনে মনোনিবেশ করাতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে খুব দৃঢ় লয়ে সরকার সামনের দিকে এগুচ্ছে।
পাশ্ববর্তী দ্বীপ দেশ শ্রীলংকার আজকের অবস্থার জন্য দায়ী দেশের জনগণ এবং সরকার উভয়ই। তবে তাদের কৃচ্ছতা সাধন প্রয়োজন ছিল আরো তিন বছর বা কমপক্ষে দুই বছর আগে থেকে। তাহলে হয়ত আজকের অবস্থার উদ্ভব হতো না। যাক এর থেকে সকলকেই শিক্ষা নিতে হবে এবং সেই শিক্ষার আলোকের আগামীর প্রয়োজন ও গুরুত্ব চিহ্নিত করে কর্মপন্থা নির্ধারন করে সজাগ দৃষ্টি নিয়ে সামনে এগুতে হবে।
পশ্চিমা বিশ্ব তথা উন্নত বিশ্ব সচেতন হয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তা বস্তবে কার্যকর করে ঠান্ডা মাথায় সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর সেই জাতিও তাদের সর্বোচ্ছ ত্যাগের নিশ্চয়তা দিয়ে কঠিন সময় পার করে সামনের সোনালী সময়কে কাছে নিয়ে আসতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের দেশেও কি সেই একই রকম হবে? না কিঞ্চিত ব্যতিক্রম হবে। আমরা সদ্য উন্নয়নশীল দেশে পদার্পন করেছি। আর আমাদের জাতি এখনও অভ্যস্ত নয় দেশ এবং সরকারের সঙ্গে একমত পোষণ বা সহমত পোষণ করে কল্যাণের তরে একযোগে এগিয়ে যাওয়ায়।
যেহেতু আমরা ঘুম থেকে জেগে উঠেছি এবং সুখের কিছুটা আগামীর জন্য উৎসর্গ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তাই বলতে পারি খাদ্য, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, যাতায়ত, ভোগ-বিলাস এর খোলস থেকে বের হয়ে এসে উৎসর্গকৃত মানুষিকতায় ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে সামনের সফলতার সোনালী ভোরকে অতিক্রম করার মানুষিকতায় প্রস্তুত হচ্ছে। তবে আরো কিছুদিন সময় নিয়ে পুরোদমে কাজে কর্মে; চিন্তা এবং কাজের সমন্বয় ঘটিয়ে এগিয়ে যাব।
সরকার শুরুটা করেছে এবং জনগণ ঐ শুরুটায় অভ্যস্থ্য হওয়ার চেষ্টায় শামিল হয়েছে। তবে হিসেব নিকেশ গরমিল শুদ্ধ করে পরিস্কারভাবে জনগণকে আগাম সতর্কবানীর পরিকল্পনা এবং সময়সূচী প্রকাশ করে প্রত্যেকের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে হবে। সেবার মানুষিকতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। নম্রতার চর্চা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। অহৎকার এবং হুমকি – ধমকি এমনকি এবং চাপিয়ে দেয়ার মানুষিকতা প্রত্যাহার করতে হবে। জনগণকে ভুল বোঝানো থেকে বিরত থাকতে হবে। করোনা বা দয়া করছি বা করছে ভাব পরিহার করতে হবে। কথার লাগাম টেনে ধরতে হরে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সবকিছু মোকাবিলা করতে হবে। জনগণের শক্তি দ্বারা শক্তিমান হতে হবে। কাউকেই নেতিবাচক কর্মের সুযোগ দেয়া যাবে না। বরং সকল নেতিবাচক কর্ম বন্ধে এই কঠিন সময়ে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে হবে।
সকলের কথা ও কাজের মিল থাকা এই মুহুত্বে ফরজে আইন। কিন্তু কথার বা সুচির ব্যত্যয়ে সরকারের ভাবমুক্তি অথবা স্থিতিশীলতার ভাবমুক্তি বিনষ্টের কারন হবে। সারা দেশেই বিদ্যুতের লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্রাতিরিক্ত ভাবে। কারন চার্ট এবং সুচী কোনটাই আর এখন কাজ করছে না বরং কার্যত মুখ থুবরে পড়েছে। কোথাও এক ঘন্টার স্থলে দুই ঘন্টা, আবার কোথাও দুই ঘন্টার স্থলে ৪ ঘন্টা এমনও খবর আসছে যে অসহনীয় গরমে মানুষ অতিষ্ট। কারণ একবার বিদ্যুৎ গেলে ৪-৫ ঘন্টার আগে আর ফিরে না। এই অবস্থা কিন্তু সরকার অথবা সরকারের অফিস আদেশে ছিল না। তাই দেখতে হবে যে, এই পরিস্থীতির মাধ্যমে জনঅসন্তোষ সৃষ্টিতে কেউ কেউ ফায়দা লোটার চেষ্টায় লিপ্ত কিনা। খুব সাবধানে এগুতে হবে। চোখ – কান খোলা রেখে এগুতে হবে। নতুবা হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।
সরকারের যেমন আন্তরিকতার কমতি নেই ঠিক তেমনি জনগণেরও আন্তরিকতার কমতি নেই। তই উভয়ে উভয়ের পরিপূরক হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করুন। জনসমর্থনের বাইরে গিয়ে কোন বিপদে পা দিবেন না। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সকল পরিকল্পনা সাজান এবং সেই অনুযায়ী জনবান্ধব পরিকল্পনায় নিশ্চিত সার্বিক ও সামগ্রীক সফলতায় অগ্রসর হউন। সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং নতুনভাবে সেবার সুযোগ এবং সুরক্ষার মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে মোনাজাত বা প্রার্থনা করুন। আল্লাহ তায়ালা (সৃষ্টিকর্তা) আমাদের ডাক, ফরিয়াদ, মোনাজাত, প্রার্থনার উত্তর দিবেন।
জ্ঞান ও সুবুদ্ধির তালাস করুন। এই সময়ে জ্ঞান ও সুবুদ্ধিকে ব্যবহার করে সামনে অগ্রসর হউন। উপর থেকে যে জ্ঞান আসে, তা প্রথমত খাঁটি, সৎ, ভন্ডামী শুন্য, নম্র, ক্ষমা ও ভালবাসায় পূর্ণ। এই জ্ঞান যাচনা করুন এবং খোদায়ী জ্ঞানের ব্যবহার নম্রতার সঙ্গে করুন। কৃচ্ছতা সাধনের ক্ষেত্রে খোদয়ী জ্ঞান ব্যবহার করে খোদার সাফল্য এবং নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা পুরোপুরি উপভোগ করুন এবং অন্যকে করাতে উদ্যোগি হউন।
আমাদের প্রত্যেকেরই একজন মালিক আছে জেনে স্ব স্ব ক্ষেত্রে কাজে নেমে পড়ুন। নিজে মালিক সাজার মোহকে ত্যাগ করুন। সেবার দায়িত্ব আসে উপর থেকে তাই উপরের কর্তাকে তাঁর অভিপ্রায় পূর্ণ করে সন্তুষ্টি লাভে নিয়োজিত থাকুন। পৃথিবীর শেষে কিয়ামতের শুরুতে বা শেষ বিচারের দিনের কথা স্মরণেে রেখে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করুন। শেষ বিচারের দিনে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করণে কৃচ্ছতা সাধনে খোদায়ী জ্ঞানের পূর্ণতা নিয়ে আমৃত্যু সংগ্রাম চালিয়ে যান। সফলতা শতভাগ সুনিশ্চিত।