প্রশান্তি ডেক্স॥ জাল নোট ব্যাংকে জমা দিতে সহায়তা করা অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে গোয়েন্দারা। হুমায়ুন কবির (৪৮) নামে এক ব্যক্তিকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে জাল নোট ছড়িয়ে দিতে ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় গোয়েন্দারা। গ্রেফতারকৃত হুমায়ুন কবির একসময় পুলিশে চাকরি করতেন। পরবর্তীতে জাল নোট তৈরিতে জড়িয়ে পড়েন। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সব বিষয় তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ উত্তরা গোয়েন্দা বিভাগ।
গত বুধবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ১৬ লাখ জাল টাকাসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, জাল নোট তৈরির পর সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় বিপণন করে তাদের পাঁচ থেকে ছয়টি সিন্ডিকেট। প্রতিমাসে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার জাল নোট সেই সিন্ডিকেটের কাছে সরবরাহ করতেন হুমায়ূন কবির। এর আগেও হুমায়ুন কবির জাল নোট তৈরি এবং বিপণনের অভিযোগে জেল খেটেছেন। তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। জেল খেটে বেরিয়ে এসে আবারও একই কাজ করতেন তিনি।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের হুমায়ুন কবির জানান, জাল নোট সিন্ডিকেটের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় ব্যাংকে জমা দিতেন তারা। তবে তদন্তের স্বার্থে ব্যাংকের নাম এখনই প্রকাশ করছে না গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, হুমায়ুন কবিরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য তদন্ত করে পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টাকার পাশাপাশি ভারতীয় জাল মুদ্রাও তৈরি করেছে এ চক্রটি। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশি ও ভারতীয় জাল নোট পাচারও করেছে বলে গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন গ্রেফতারকৃত হুমায়ুন কবির।
জানা যায়, ৫০০ টাকার দুটি জাল নোটের বান্ডিল তৈরিতে জড়িতরা পায় ১০ হাজার টাকা। এক লাখ টাকার নোট নিয়ে তারা যদি বিলি করতে পারতো তাহলে কারখানার মালিক পেতো দশ হাজার টাকা। ধর্মীয় উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে তৎপরতা বাড়তো এসব চক্রের। পূজাকে কেন্দ্র করে তারা ৬০ লাখ জাল টাকা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছিল। যখন ব্যাংকে গ্রাহকের চাপ থাকে সেই সময়টি অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় জাল নোট ছড়িয়ে দিতো এই চক্রটি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপি উত্তরা গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কায়সার রিজভী কোরায়েশী বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জাল টাকার তৈরির পর কোথায় কোথায় বিক্রি হতো এবং কোন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এসব জাল নোট জমা দিতো— এসব বিষয়ে তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে। এ চক্রের আরও পাঁচজনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। তাদের গ্রেফতারের অভিযান চলছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, পূজাকে কেন্দ্র করে জাল নোট ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল চক্রটি। তারা অনেকদিন ধরে এই জাল নোট তৈরিতে জড়িত। ব্যাংকে লেনদেনের সময় মেশিনের মাধ্যমে টাকা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়ে আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন গোয়েন্দা বিভাগের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।