হীরেন পণ্ডিতঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তার নেতৃত্বেই শ্রমনির্ভর অর্থনীতি থেকে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির দিকে দেশ এগিয়ে গেছে।
তার সেই চিন্তায় ডিজিটাল বাংলাদেশের বিকশিত রূপটি এখন আমরা দৈনন্দিন জীবনে উপভোগ করছি। প্রাণঘাতী ব্যাধির চিকিৎসা থেকে শুরু করে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠেছে অনলাইন প্রযুক্তি।
২০২৫ সাল নাগাদ আইটি খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের প্রত্যাশা রয়েছে বাংলাদেশের। দেশে আইটি ডিভাইস উৎপাদন শিল্পে অন্তত এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের আশা করা হচ্ছে।
২০২৫ সাল নাগাদ আইটি খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশে তৈরি ডিজিটাল ডিভাইসের রপ্তানি আয় বর্তমানের প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। একই সময়ে আইসিটি পণ্য ও আইটি-এনাবল সার্ভিসের অভ্যন্তরীণ বাজারও ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আগামী চার বছরের মধ্যে দেশে-বিদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ১০ বিলিয়ন ডলারের সম্ভাব্য বাজার ধরতে ডিজিটাল ডিভাইস তথা মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও ল্যাপটপের মতো আইটি পণ্য বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সরকার। এরই অংশ হিসাবে দেশে ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন শিল্প স্থাপনের সুযোগ সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে স্থানীয় পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ রোডম্যাপ নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি)। এ রোডম্যাপের সঠিক বাস্তবায়ন হলে দেশে আইটি ডিভাইস উৎপাদন শিল্পে অন্তত এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে। প্রায় ২০০ কোটি ডলারের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা হবে ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন।
সম্প্রতি আইসিটি বিভাগকে প্রস্তুত করা হয়েছে। আইসিটি বিভাগের আশা, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ আইসিটি এবং আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) পণ্য উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হবে। এটি সরকারের ‘সবার জন্য ডিজিটাল এক্সেস’ এজেন্ডা বাস্তবায়নেরও সহায়ক হবে।
দেশের উদীয়মান মধ্যবিত্ত ও সচ্ছল শ্রেণির ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল ডিভাইস ও কনজ্যুমার গ্যাজেটের চাহিদা আন্তর্জাতিক হাই-টেক শিল্পে বাংলাদেশের প্রবেশে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। রোডম্যাপে সরকারি কেনাকাটায় দেশে উৎপাদিত আইসিটি পণ্যের ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে কেনাকাটায় জড়িত সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানি সহজ করতে সিঙ্গাপুর, দুবাই, ইংল্যান্ড বা অন্য কোনো দেশে হাব স্থাপনেরও প্রচেষ্টা চলছে।
নতুন রোডম্যাপটিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি, পণ্যের মান উন্নয়ন, গুণগত মান নিশ্চিতকরণ, বৈশ্বিক চাহিদা নিরূপণ, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি পণ্যের ইমেজ বৃদ্ধি, মেধাস্বত্ব রক্ষা, গবেষণা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ তরুণ। সজীব ওয়াজেদ জয় এ তারুণ্যকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চান।
তিনি মনে করেন, দেশের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ তরুণকে প্রশিক্ষিত করে আমরা যদি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে খুবই দ্রুত তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্ববাজারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করতে পারব।
এ তরুণ জনগোষ্ঠীই আমাদের সম্পদ। সরকার আইসিটি খাতে এ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে তুলতে তাদের প্রশিক্ষণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে এবং তাদের অংশগ্রহণে প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও চলছে কর্মযজ্ঞ। প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের নাগালে পৌঁছে দিতে দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার।
এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার ফর্ম পূরণ, চাকরির আবেদন, করোনা পরীক্ষার নিবন্ধন, কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিও নেওয়া যাচ্ছে ঘরে বসেই। ব্যাংকে না গিয়ে মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং এবং আই-ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহজেই সেবা নিতে পারছে। করোনাকালে ঘরে বসে অনলাইনে অফিস করছে, ক্লাস করছে। এসবই সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে।
বস্তুত সজীব ওয়াজেদ জয়ই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্রষ্টা। বাংলাদেশে তারুণ্যের নেতৃত্বের বিকাশ, তাদের স্বপ্ন দেখানো, কর্মসংস্থান, তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা নির্মাণে, প্রযুক্তি উন্নয়নে সহায়তা, শিল্পায়ন-গবেষণা ইত্যাদি বিষয়ে তার অসাধারণ অবদান রয়েছে। উন্নয়নশীল বিশ্বে তিনিই একমাত্র মেধাবী নেতৃত্ব, যিনি তার দেশকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। এদেশে অফিস-আদালত থেকে শুরু করে টেন্ডার কিংবা ব্যাংকের লেনদেনের যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে, সেই ডিজিটাইজেশনের নেপথ্যে তার অবদান রয়েছে। এজন্য করোনা মহামারি ও লকডাউনের সময় যখন বিশ্বজুড়ে অনলাইন যোগাযোগ একমাত্র মাধ্যম হয়ে ওঠে, তখন এদেশের কৃতীসন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়কে বেশি করে মনে পড়াটা স্বাভাবিক। ব্যাধির সংক্রমণ রোধে গৃহবন্দি থেকে অনলাইনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বেতন ও সহায়তা পাওয়ার দৃষ্টান্ত আমরা ২০২০ সালের মার্চ থেকেই ভালোভাবে আত্মস্থ করে নিয়েছি।
কৃষিভিত্তিক সমাজ ক্রমান্বয়ে প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে পরিণত হয়েছে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের দিকনির্দেশনায় কাজ করে প্রযুক্তির প্রসার ঘটেছে এদেশে। ফলে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, যার পুরোভাগে তিনি আছেন। শেখ হাসিনা যেমন নির্লোভ, মানুষকে ভালোবাসেন নিজের অন্তর থেকে, জয়ও তেমনিভাবে এগিয়ে চলেছেন। বিরুদ্ধ মানুষের মন জয় করতে হয়েছে তাকে।
সজীব ওয়াজেদ জয় ভিশনারি লিডার। তিনি ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে ২০০৯ সালে দেখতে পেয়েছিলেন বলেই আজ দেশে ১৩ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। শিক্ষা খাতে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ বেড়েছে। বিশেষত করোনা মহামারিতে সব প্রতিষ্ঠান এখন প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। পাঠ্যসূচিতে যেমন শিশুরা আইসিটি অধ্যয়ন করছে, তেমনই বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার। এমনকি দেশের বিপিও খাতে বর্তমানে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করা হচ্ছে; ৫০ হাজারের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সাড়ে ছয় লাখ মানুষ এ মুহূর্তে আইসিটি সেক্টরে চাকরি করছেন। ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ লাখ মানুষের কাজ করার সুযোগ হবে। এ খাতে ৫০০ মিলিয়ন ডলার আয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। আর এসবই সম্ভব হয়েছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী।
সজীব ওয়াজেদ জয় তার বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন নানাভাবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সরাসরি তত্ত্বাবধানে তিনি ‘এটুআই’ গঠন করেছিলেন, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কিটেকচার (বিএনডিএ) ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করেছেন। এ ফ্রেমওয়ার্ক বা কর্মকাঠামোর ওপর ভিত্তি করে সরকারি সব পরিষেবাকে অনলাইনে নিয়ে আসার রেখাচিত্র বানিয়েছেন তিনি। তার স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশে সরকারি সব সেবা পৌঁছে যাবে নাগরিকের দোরগোড়ায়। পরিষেবা হাতের মুঠোয় থাকায় একজন নাগরিককে যেতে হবে না সরকারের কাছে। যিনি যেখানে আছেন, সেখানে বসেই সরকারি পরিষেবা নিতে পারবেন।
২০১৮ সালে যখন বাংলাদেশের নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়, তখন সজীব ওয়াজেদ জয়ের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কথা অনেকেই অনুধাবন করতে পারেননি। এ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে এখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যে শুধু কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রাই সাশ্রয় করছে তা নয়, বিদেশেও এ স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি বিক্রি করা যাচ্ছে। নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকায় বাংলাদেশের মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে বিশ্ববাসীর কাছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে একটি জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশের অধীক্ষক সজীব ওয়াজেদ জয় চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে বাংলাদেশকে শামিল করে এর পূর্ণ সুবিধা ভোগের জন্য ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু করার ব্যবস্থা করেছেন। এর ফলে আমাদের উৎপাদনশীলতা যেমন বাড়বে, তেমনই সক্ষমতা ও কার্যকারিতাও বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে আমাদের জনসম্পদের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে সফটওয়্যার ও পরিষেবা খাতকে করমুক্ত করা হয়েছে। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ডিজিটাল ডিভাইস যাতে আন্তর্জাতিক মর্যাদা পায়, সে বিষয়ে তিনি সব অংশীজনকে নিয়ে নীতিমালা তৈরি করছেন। সারা দেশে ৩৯টি হাই-টেক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক তৈরি করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান করছেন।
ডিজিটাল কমার্সের ওপর নির্ভর করে দেশের মফস্বল ও গ্রামের তরুণ তথা গৃহবধূরাও যাতে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন, সেজন্য তিনি সর্বজনীন নীতিমালা প্রণয়নে সহায়তা করেছেন। শহরবাসীর পাশাপাশি সুলভে দ্রুতগতির ইন্টারনেট যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও পেতে পারে, সে লক্ষ্যে ‘এক দেশ, এক রেট’ ঘোষণা দিয়ে ব্যান্ডউইথের বিক্রয়মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে বিটিআরসির পক্ষ থেকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব, আবেগ ও দেশপ্রেমের প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পাই তার দৌহিত্রের মধ্যে। আজ সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিনে তাকে জানাই শুভেচ্ছা।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক
সৌজন্যেঃ যুগান্তর