প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ ইউক্রেনে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ‘ছায়া যুদ্ধে’ লিপ্ত বলে কয়েক মাস ধরে তুলে ধরার চেষ্টা করে আসছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত দৃঢ়ভাবে তা প্রতিষ্ঠা করতে পারছিল না ক্রেমলিন। কিন্তু এখন মস্কো বলছে, মার্কিন নির্মিত হিমার্স রকেট ব্যবস্থা তাদের এই দাবিকেই প্রমাণ করছে।

দূরপাল্লার এই ব্যবস্থা ইউক্রেনের পুরনো অস্ত্রের তুলনায় নির্ভুলভাবে আঘাত ও দ্রুত ফায়ার করতে সক্ষম। এই ব্যবস্থা পাওয়াতে ইউক্রেনের শক্তি বেড়েছে এবং রাশিয়ার সামরিক অগ্রগতি সীমিত হয়েছে। ইউক্রেন যখন এই অস্ত্রে সফলতা পাওয়ার দাবি করছে তখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে অসাবধানতাবশত রুশদের মধ্যে পুতিনের প্রোপাগান্ডা শক্তিশালী হচ্ছে। ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার ব্যর্থতার জন্য পুতিন একটি বলির পাঁঠা পেয়ে গেছেন।
সিরাকাস ইউনিভার্সিটির রুশ রাজনীতি বিষয়ক অধ্যাপক ব্রায়ান টেইলর বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে সরাসরি জড়িত সেই অভিযোগ তুলে ধরতে পুতিন হিমার্সের সফলতাকে কাজ লাগাচ্ছেন। রাশিয়ায় যুদ্ধ নিয়ে যে আখ্যান তিনি তুলে ধরতে চাইছেন এটি তার সেই কৌশলের অংশ, এমনকি পশ্চিমাদের বিরোধিতার ক্ষেত্রেও।
ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের বিষয়ে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মন্তব্যের বিষয়ে গত সপ্তাহে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, এগুলো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে ইউক্রেনে সংঘাতে সরাসরি জড়িত যুক্তরাষ্ট্র।
রুশ মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ডনবাস ও অন্যান্য অঞ্চলের আবাসিক এলাকা ও বেসামরিক অবকাঠামোতে কিয়েভ অনুমোদিত সব রকেট হামলার জন্য সরাসরি দায়ী বাইডেন প্রশাসন। এসব হামলায় অনেক বেসামরিকের প্রাণহানি হয়েছে।
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী এক ডজন হিমার্স রকেট ব্যবস্থা দিয়েছে পেন্টাগন। আরও চারটি ব্যবস্থা পথে রয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা এসব অস্ত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সোমবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মেলিতোপোলের মেয়র দাবি করেছেন, রুশ সেনারা হিমার্সের সামনে টিকতে পারছে না। সোমবার এক হামলায় শতাধিক রুশ সেনা নিহত হয়েছে। এই হামলায় হিমার্স ব্যবহার করা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি পরিকল্পনার সাবেক সদস্য মাইকেল কিমেজ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে সরাসরি যুদ্ধে জড়িত, তা সত্য থেকে খুব দূরে নয়। অত্যাধুনিক অস্ত্র দেওয়ার পাশাপাশি সংঘাতে গতিপথ পাল্টে দেওয়ার কৃতিত্ব পাচ্ছে ওয়াশিংটন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন মন্তব্য করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হলো ইউক্রেনকে সহযোগিতা করে রাশিয়াকে দুর্বল করা।
তিনি আরও বলেছেন, হিমার্স সরবরাহ করার মাধ্যমে এই যুদ্ধ যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের শুধু এই বার্তা দিচ্ছে না। পশ্চিমা শক্তিরা যে রাশিয়াকে যুদ্ধে যেতে বাধ্য করেছে বলে পুতিন যে অজুহাত তুলে ধরার চেষ্টা করছেন সেটিকেও সহযোগিতা করছে।
ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ইউরি জুখভ বলছেন, পুতিন চান ‘পশ্চিমা বুগিম্যান’ আখ্যান তুলে ধরতে চান। রুশরা এটি শুনতে প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধ নয়, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের কারণে যুদ্ধ পরিকল্পনা মতো এগোচ্ছে না বলে বিশ্বাস করা সহজ।
সূত্র: নিউজউইক