ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ কসবা উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের পাথারিয়াদ্বার গ্রামে পাহাড় কাটাকালে ভেকু মেশিন জব্দ হলেও ২৪ ঘন্টা পর মামলা হলো শুধু পাহাড়ের মালিকের বিরুদ্ধে। ভেকু মেশিন মালিক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেনি প্রশাসন। গত মঙ্গলবার (১৬ আগষ্ট) সন্ধ্যায় প্রশাসন মাটি কাটার সময় ঘটনাস্থলে হানা দিলে ভেকু মালিক ও ভেকু চালক পালিয়ে যায়। পরে খনন কাজে ব্যবহৃত একটি ভেকু মেশিন জব্দ করে গোপিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের জিম্মায় রাখা হয়।
গত মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইউপি সদস্য মুক্তার হোসেন দীর্ঘদিন যাবত গোপিনাথপুর ইউনিয়নের পাথারিয়াদ্বার, গানপুর, মধুপুর, রামপুর, সুতারমুড়া ও জেঠুয়ামুড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের পাহাড় কেটে নিয়ে এলাকার নীচু জলাশয়, পুকুর ও বিলে পাহাড়ী মাটি বিক্রি করে যাচ্ছে। তার নিজস্ব একটি পাহাড় কাটার ভেকু মেশিন রয়েছে। অন্য একটি ভাড়ায় এনে এলাকায় ব্যবহার করে পাহাড় ও বনাঞ্চল নিধন করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছে। সে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হওয়ায় এলাকার মানুষকে জিম্মি করে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে এলাকার সাধারন মানুষ সাংবাদিকদের জানান। ফলে পাহাড়ী সৌন্দর্যময় জনপদগুলোর জীববৈচিত্রও হারিয়ে যাচ্ছে।
পাথারিয়দ্বার গ্রামের বাসিন্দা ফায়েজ মিয়া জানান, পাহাড় কাটা বেআইনী হলেও আমাদের এলাকায় পাহাড় কাটা যেন উৎসবে পরিনত হয়েছে। আমার বাড়িটি পাহাড়ী টিলার উপর। বাড়ির দুদিক দিয়ে বিস্তীর্ন পাহাড় ও টিলা কাটা হয়েছে। শুনেছি আগামী শুক্রবার থেকে বাড়ির লাগোয়া দক্ষিন পাশের টিলাটি ভেকু মেশিন দিয়ে কেটে ফেলবে। এরপর আমার বাড়িটি ধসে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। তিনি বলেন, একজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হয়ে তিনি যে বেআইনী কাজ করছেন এতে আমরা ভীত সন্ত্রস্ত।
পাথারিয়াদ্বার মসজিদের ইমাম হাফেজ আলাউদ্দিন জানান, মসজিদে মাদকের বিরু্েদ্ধ কথা বললেও পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে কথা বলা মুশকিল। চাকুরী হারানোর ভয় আছে।
একই গ্রামের বাছির মিয়া বলেন, খাড়া করে পাহাড় কাটার কারনে গবাদিপশু ঘাস খাওয়ার সময় কিনারায় গেলে উপর থেকে পড়ে পঙ্গু ও মুত্যুবরণ করে একাধিক গবাদিপশু। তিনি বলেন, গত কিছুদিন আগে আমার একটি গরু উপর থেকে পড়ে তাৎক্ষনিক মারা গেছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সনজীব সরকার সাংবাদিকদের বলেন, পাহাড় কাটার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। জড়িতরা পালিয়ে যায়। ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেনের ভেকু মেশিনটি জব্দ করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড় মালিক ইউনুছ মিয়া ও ভেকু মেশিন মালিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে। কিন্তু পরদিন বেলা দুটো পর্যন্ত থানায় খোজ নিয়ে যায়, পাহাড় কাটার বিষয়ে কোনো মামলা হয়নি।
এক পর্যায়ে গোপিনাথপুর ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পাহাড় কাটার দায়ে শুধু পাহাড়ের মালিক ইউনুছ মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হচেছ ভেকুর মালিকের বিরুদ্ধে নয়।
গোপিনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ভ’ইয়ার সাথে ভেকু মেশিনের মালিক কে এ বিষয়টি জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভেকুর মালিককে এলাকার সবাই চেনে। আপনারা (সাংবাদিকরা) কেনো আমাকে বিপদে ফেলতে চাচ্ছেন?
গতকাল বুধবার দুপুরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ’মি) সনজীব সরকারের সংগে সর্বশেষ যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভেকুর মালিকানা ইউপি সদস্য অস্বীকার করছেন। তাই ভেকুর মালিক ছাড়াই শুধু পাহাড়ের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। তবে পুলিশী তদন্তে ভেকুর প্রকৃত মালিক বেরিয়ে আসলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।