প্রশান্তি ডেক্স॥ ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এক নারী। গত বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) দিবাগত রাত ১টায় লঞ্চের ডেকে কয়েকজনের সহায়তায় ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। মা ও নবজাতক সুস্থ আছে।
নবজাতকের পরিবারকে নগদ ১০ হাজার টাকা উপহার দিয়েছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চে ওই নবজাতক ও তার মা-বাবার যাতায়াত আজীবনের জন্য ফ্রি ঘোষণা করা হয়েছে। লঞ্চের সুপারভাইজার জিল্লুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
লঞ্চে সন্তান জন্ম দেওয়া নারীর নাম ঝুমুর বেগম। তার স্বামী হারিসুর রহমান নারায়ণগঞ্জে মুরগীর দোকানের কর্মচারী। ঝুমুরের বাড়ি বরিশাল সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের সোলনা গ্রামে। সন্তান প্রসবের নির্ধারিত সময় ছিল আরও ১৮ দিন পর। সেই প্রস্তুতি নিয়েই স্বজনদের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন। এটা তার দ্বিতীয় সন্তান।
লঞ্চের সুপারভাইজার জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ভাই ও ভাবীকে নিয়ে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে ওঠেন সন্তানসম্ভবা ঝুমুর বেগম। লঞ্চের নিচতলায় জায়গা করে নেন তারা। লঞ্চ ছাড়ার পর প্রসব বেদনা শুরু হয়। এ সময় ওই লঞ্চে থাকা একজন ধাত্রী এবং এক নার্সসহ সাত জন নারী এগিয়ে আসেন। আর ওষুধসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা লঞ্চ থেকে দেওয়া হয়। এরপর রাত ১টার দিকে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ।’
ঝুমুরের মা জানান, আর্থিক সংকটে আগেভাগে মেয়েকে বাড়িতে আনতে পারেননি। জামাইয়েরও আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের ১৮ দিন বাকি থাকতে বাড়ি আনার আগেই লঞ্চে সন্তান প্রসব করেছেন তার মেয়ে।
ধাত্রী সুফিয়া বানু বলেন, ‘ওই মেয়ের প্রসব বেদনা শুরু হলে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন নার্স এবং ৫ থেকে ৭ জন যাত্রী এগিয়ে আসেন। এরপর স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের জন্য যা যা দরকার তা করা হয়। এ সময় লঞ্চ থেকে সব ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়। রাত ১টায় ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম দেন ঝুরুমর। এখন মা ও তার সন্তান ভালো আছে।’
লঞ্চের যাত্রী ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা ফারজানা আক্তার বলেন, ‘শিশুটিকে কোলে নেওয়ার জন্য খুব উদগ্রীব ছিলাম। এ জন্য তাদের পাশে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেছি। এরপর লঞ্চের স্টাফরা সুযোগ করে দিলে শিশুটিকে কোলে নিয়ে সেলফি তুলি। প্রতিটি যাত্রী ওই নারীকে সাহায্যের চেষ্টা করেছেন। বিষয়টি ভালো লেগেছে।’
যাত্রী মো. রাকিব বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ছাড়াও অনেক সময় যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। এ জন্য লঞ্চে একজন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া দরকার।’
বরিশাল ঘাটের সুপারভাইজার মিজানুর রহমান বলেন, ‘সন্তান প্রসব হওয়ায় লঞ্চ মালিক খুশি হয়ে মা ও নবজাতককে নগদ অর্থ উপহার দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ওই নবজাতক ও তার মা-বাবার আজীবন যাতায়াত ফ্রি করে দিয়েছেন।’