ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় পূর্বের একটি হত্যাকান্ডের জের ধরে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হলেন উপজেলা পিকআপ ভ্যান সমিতির সভাপতি মো. আক্কাস মিয়া (৪৫)। হামলায় আহত হয়েছে আরও তিনজন। নিহত আক্কাছ পৌর এলাকার আকবপুর গ্রামের মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে। নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। পরবর্তী অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
নিহতের পরিবার সুত্রে জানা যায়, প্রায় দু’বছর আগে নিহতের চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর আলমকে রাতের বেলায় ঘর থেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে উপজেলার অনন্তপুর বিল থেকে ভাসমান অবস্থায় জাহাঙ্গীরের মৃতদেহ উদ্ধার হয় । ওই ঘটনায় প্রতিপক্ষের সাবেক পৌর কাউন্সিলর আবু তাহের সহ কয়েকজনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী। ওই মামলায় প্রধান স্বাক্ষী ছিলেন আক্কাস মিয়া। আক্কাস মিয়া চাচাতো ভাইয়ের হত্যার বিচারের দাবীতে মামলাটি পরিচালনা করাসহ মানববন্ধন ও বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছিলেন। এ সব কর্মকান্ডই তার জন্য কাল হয়েছে। প্রতিপক্ষরা তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে সুযোগ খুঁজতে থাকে।
সেই ঘটনার জের ধরে গত সোমবার (২২ আগষ্ট) বিকেলে গ্রামের ঈদগাহ মাঠের সাথে স্ত্রী সেলিনা বেগমের কবর জিয়ারত করে বাড়ী ফেরার পথে পূর্ব থেকে উৎ পেতে থাকা প্রতিপক্ষের সাবেক পৌর কাউন্সিলর আবু তাহেরের নেতৃত্বে মৃত আবদুল খালেকের পুত্র রহিম মিয়া (৪৫), শহিদ মিয়া (২৭), মজিদ মিয়া (৩৫) কাওসার মিয়া (২২) ও সাত্তার মিয়া (৩৭) এবং আবু তাহেরের ছেলে তারেক ও ভাতিজা রুবেল মিয়া দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আতর্কিত হামলা চালায় আক্কাস মিয়ার উপর। প্রতিপ্েক্ষর উপুর্যপরি দায়ের কোপে রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়ে চিৎকার করতে করতে মাটিতে লূটিয়ে পড়ে আক্কাস মিয়া ।
এ সময় তার আর্তচিৎকার শুনতে পেয়ে তার ভাই হিরন মিয়া (৬০), রমজান মিয়া (৫৪) ও ভাতিজা শাকিল (২৫) তাকে বাচাঁতে এগিয়ে আসলে তাদের উপরও হামলা চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন। হামলায় আহত হন এই তিনজন। হামলাকারীরা চলে গেলে বাড়ির লোকজন মুমুর্ষ অবস্থায় আক্কাস মিয়াসহ আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে আক্কাস মিয়ার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় একটি বেসরকারী হাসপাালে স্থানান্তর করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার গভির রাতে আক্কাসের মৃত্যু হয়।
নিহতের বড় ভাই আহত হিরন মিয়া (৬০) জানান, প্রতিপক্ষরা নির্মমভাবে আমার ভাইকে এলোপাতারী কুপিয়ে হত্যা করেছে। আক্কাছের চার ছেলে তিন মেয়ে পিতৃহারা হয়েছে। তিনি আইনমন্ত্রীর নিকট তার ভাই হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন।
এ বিষয়ে সাবেক পৌর কাউন্সিলর আবু তাহেরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনার সময় তিনি ও তার তারেক মিয়া এবং ভাতিজা রুবেল মিয়া কসবায় অবস্থান করছিলেন। ঘটনাস্থলে ছিলেননা বলেও জানান তিনি। কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন পিপিএম জানান, নিহতের ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।