বাআ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন হলে জনপ্রিয়তার কারণেই শেখ হাসিনাকে পরাজিত করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হলে শেখ হাসিনাকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। তাঁর এতই জনপ্রিয়তা যে, ভোট হলে শেখ হাসিনা বিপুল ভোটে আবারও বিজয়ী হবেন। তাই তার বিরুদ্ধে এত ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত মঙ্গলবার সচিবালয় প্রাঙ্গনে আয়োজিত আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এতো জনপ্রিয় ছিলেন যে নির্বাচনে তাকে হারানো কোনো অবস্থায় সম্ভব ছিল না, সে জন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছে। নির্বাচন হলে শেখ হাসিনাকে পরাজিত করা সম্ভব নয় সে কারণেই তাকে হত্যাচেষ্টা। ২১ আগস্ট প্রধান টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা। এতো জনপ্রিয় বঙ্গবন্ধুর কন্যা। সারা বাংলায় ভোট হলে বিপুল ভোটে আবারও বিজয়ী হবেন। সেই জন্যই আজকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
আগস্ট মাস এলে ষড়যন্ত্রকারীরা বিচলিত হয়, ষড়যন্ত্রের ঝাঁপি খুলে যায় জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২১ আগস্ট এলে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে। ২০ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ২১ আগস্ট ব্যর্থ হয়েছে। এখনো ষড়যন্ত্র আছে আমরা জানি।
তিনি বলেন, এবার কিন্তু আমরা খুব সজাগ ও সতর্ক। আমরাও জানি কোথায় কে কী করছেন। বিদেশিদের দরবারে কোথায় কোথায় বৈঠক হচ্ছে। এবার চোখ-কান খোলা রেখেছি, শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে পার পাবেন না।
বিএনপি মাহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, আর রাজনীতি করবো না বলে মুচলেকা দিয়ে যে কাপুরুষটা বিদেশ চলে গিয়েছিল, সে হলো আপনার প্রধান নেতা। মুচলেকা দিয়ে বলেছিলেন- আর রাজনীতি করবেন না, এখন বিদেশে বসে টেমস নদীর পাশে বসে কলকাঠি নাড়েন। ফখরুল সাহেবকে সেখান থেকে ফরমায়েশ দেন এবং তিনি এখান থেকে কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘টেক ব্যাক’ বাংলাদেশ, ওখান থেকে স্লোগান দেয়। ওখান থেকে বলে ‘টেক ব্যাক’ এখান থেকে বলে বাংলাদেশ। ‘টেক ব্যাক’ কারা করবে বিএনপি? আবারও ’৭৫ ও ২১ আগস্ট ঘটানোর জন্য? আবারও দুর্নীতির হাওয়া ভবন করার জন্য?
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি এখন স্বপ্ন দেখছে। আগস্ট এলে এতো ভয় পান কেন? আগস্ট হলো আপনাদের চক্রান্তের মাস। বিদেশিদের দরবারে গিয়ে নালিশ করছেন। নালিশের রাজনীতি করছেন। আজকে এই অবস্থায় আমাদের কথা বলতে হয়। সারা দুনিয়ার ছবি চোখে পড়ে না, শুধু বাংলাদেশেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, তেলের দাম বাড়ে জ্বালানির দাম বাড়ে? কোথায় বাড়েনি বলুন? জিনিসপত্রের দাম কোথায় বাড়েনি। লন্ডনে হুট করে মূল্যস্ফীতি এখন ১০ দশমিক ১ শতাংশ। পাকিস্তান শ্রীলঙ্কার কথা নাই বললাম, সেখানে লাগামহীনভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে।
তিনি বলেন, দেশের দু:সময়ে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ছাড়া কাউকে পাশে পাওয়া যায়নি। শেখ হাসিনা রাত দিন জেগে পরিশ্রম করছেন। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে মানুষের জন্য। বিএনপি রাজনীতি করে ক্ষমতার জন্য।
সবাইকে সাশ্রয়ী হাওয়ার আহবান জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুধু একটা কথাই বলবো। সবাই একটু বাস্তববাদী হোন। কৃচ্ছ্রতা সাধন করুন। অতিরিক্ত গাড়ি, অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহার করা ঠিক নয়। যারা অতিরিক্ত গাড়ি ব্যবহার করছেন, ফিরিয়ে দেন। অতিরিক্ত তেল যারা ব্যবহার করছেন আর করবেন না। কৃচ্ছ্রতা সাধন করুন।’
বিএনপির উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকার পতনের স্বপ্ন দেখে লাভ নেই। আপনারা যে কোনভাবে সরকারের পতন চান। কিন্তু কেন? আমরা রাজপথ থেকে এসেছি, প্রয়োজন আবার রাজপথে ফিরে যাব। সকল অশুভ শক্তিকে রাজপথে মোকাবেলা করা হবে। রাজপথ কোন দলের নয়, রাজপথ এদেশের জনগণের। রাজপথ কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি।
দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য না দিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রত্যেককে কথাবার্তায়, আচার আচরণে দায়িত্বশীল হতে হবে। দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলবেন না। এই সময়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন কোনো কথা বলা সমীচীন নয়। দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বন্ধুত্ব নষ্ট করতে পারে। ঠান্ডা মাথায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, এটাই আজকে আমাদের সবচেয়ে বড় মেসেজ।
সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ মঈনুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, পানিসম্পদ উপ-মন্ত্রী এনামুল হক শামীম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম সারওয়ার,স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খাইরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।