প্রশান্তি ডেক্স॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি কয়েকটি বিষয়ে সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা আছে। জ্বালানি, খাদ্য ও বাণিজ্য বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি। সমঝোতা হলে এবারের সফরে এর প্রতিফলন দেখা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গম, পেঁয়াজসহ ভারত থেকে জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এসব পণ্য সরবরাহের বিষয়েও উভয় দেশের মধ্যে অঙ্গীকার হতে পারে। এসব পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে ভারতের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা থাকলে সেটি বাজারের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।
এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সেপা) করার জন্য আলোচনা শুরুর বিষয়ে একটি সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই চুক্তি হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়ে একটি শক্ত কাঠামো দাঁড়াবে, যার অধীনে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের ৫০ বছর পার হয়ে গেছে। এই পরিপক্ব সম্পর্ক এই সফরে নতুন মোড় নিতে পারে। বিশেষ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে নতুন জায়গায় নেওয়ার জন্য কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট মূল ভূমিকা পালন করবে। প্রথাগত সম্পর্কের বাইরে গিয়ে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সম্পৃক্ত করবে সেপা।’
বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কানেক্টিভিটি, জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যপণ্য সরবরাহসহ বিভিন্ন সহযোগিতার জন্য নতুন দ্বার উন্মোচন করবে সেপা। এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সাপ্লাই চেইনে এটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
শহীদুল হক বলেন, ‘কোভিড ও অন্যান্য বৈশ্বিক সংকটের কারণে সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহে বড় ব্যাঘাত ঘটেছে এবং ঘটছে। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে নতুন চিন্তাভাবনা এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আসবে, এটাই স্বাভাবিক।’
একই মত পোষণ করে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘কোভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অনেক নতুন পরিস্থিতি জন্ম দিয়েছে। যার ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন দেশের ওপর। বৈশ্বিক ব্যবস্থা এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে।’
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন উদ্যোগ ও প্রয়োজন অনুযায়ী পুরোনো উদ্যোগকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। এ ধরনের উদ্যোগ সম্পর্কের নতুন দিকনির্দেশনা দেয়।’
হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পারস্পরিকতা মাথায় রেখে এবং পরস্পরের প্রয়োজন উপলব্ধি করে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে পারস্পরিক প্রয়োজন ও অঙ্গীকার পূর্ণ করতে হবে।’ অঙ্গীকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার সময় যদি কোনও অঙ্গীকার করা হয়, তবে সেটি রক্ষা করতে হবে।’
কোভিড পরিস্থিতিতে চুক্তি করেও ভারতের কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা সরবরাহ করতে পারেনি এবং এর নেতিবাচক প্রভাব দুই দেশের সম্পর্কে পড়তে পারে বলে মনে করেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘জ্বালানি ক্ষেত্রে ভারত কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে এবং তাদের যদি উদ্বৃত্ত থাকে এবং আমরা যদি দীর্ঘমেয়াদে কিছু করতে পারি, সে বিষয়টি নিশ্চয় আমাদের চেষ্টা থাকবে।’
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ সেপ্টেম্বর চার দিনের সফরে দিল্লি যাবেন। সেখানে তাকে স্বাগত জানাবেন দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। পরের দিন হায়দ্রাবাদ হাউজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। এবারের সফরে স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় শহীদ সৈনিকদের পরিবারের সন্তানদের ‘মুজিব বৃত্তি’ দেওয়া হবে। এছাড়া ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের সিআইআই এবং বাংলাদেশের এফবিসিসিআই যৌথভাবে একটি অনুষ্ঠান করবে।