বাআ॥ শ্রীলঙ্কার পথে যেতে পারে বাংলাদেশ এমন শঙ্কা উড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ এবং ইউক্রেনে সংঘাত সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী গতিতে এগিয়ে চলছে। এছাড়া যেকোনও ঋণ নেওয়ার সময় সরকার উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা করে।
ভারত সফরে যাওয়ার আগের দিন গত রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দেশটির বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমানে পুরো বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। আর এই চ্যালেঞ্জ কেবল বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের অর্থনীতি এখনও অত্যন্ত শক্তিশালী রয়েছে। যদিও আমরা কোভিড-১৯ মহামারির মুখোমুখি হয়েছি এবং এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এখানে তার প্রভাব রয়েছে। কিন্তু ঋণের হারে বাংলাদেশ সর্বদা সময়মতো সব ঋণ পরিশোধ করছে। আর আমাদের ঋণের হার খুবই কম। শ্রীলঙ্কার তুলনায় আমাদের অর্থনীতির গতিপথ এবং উন্নয়ন, (পরিকল্পিত) খুব, খুব হিসেব করে নেওয়া হয়।
এ ধরনের সুবিবেচিত পদক্ষেপের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিরাপদ রয়েছে বলে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, গৃহীত প্রকল্প থেকে লাভের বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ কোনও ঋণ নেয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি পুরো বিশ্ব অর্থনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। আমরাও হয়েছি। তবে হ্যাঁ, কিছু লোক আছেন যারা এই বিষয়টি উত্থাপন করেন। ওহ, শ্রীলঙ্কার মতো হবে বাংলাদেশ, এই হবে, সেই হবে। তবে আমি নিশ্চিত করতে পারি, সেটা (বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো) ঘটবে না। কারণ আমরা… আমাদের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা, আমরা যা প্রস্তুত এবং বাস্তবায়ন করি, সর্বদাই আমরা দেখি যে এর রিটার্ন কী হবে? জনগণ কীভাবে সুবিধাভোগী হবে? অন্যথায় আমি শুধু টাকা খরচ করে কোনও প্রকল্প গ্রহণ করি না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যখনই সরকার কোনও ঋণ নেওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করে, তখন প্রকল্পটি শেষ হলে দেশের জন্য কী পরিমাণ রিটার্ন আসবে তার পূর্বানুমাণ করার জন্য একটি সুস্পষ্ট নীতি রয়েছে। আমাদের অর্থনীতির উন্নয়ন কীভাবে হবে? জনগণ সুবিধাভোগী হবে, এটাই আমাদের অগ্রাধিকার। তাই আমরা সব পরিকল্পনা, কর্মসূচি সেভাবেই নিচ্ছি। আমরা অপ্রয়োজনীয় কোনও টাকা খরচ করি না।
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে এবং অনেক বিশেষজ্ঞের বিশ্বাস, দেশটির উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলোতে চীনের মতো বিভিন্ন দেশের ঋণের কারণে বর্তমান সংকট তৈরি হয়েছে। ঋণের অর্থে গ্রহণ করা প্রকল্পগুলো থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ রিটার্ন পায়নি দেশটি। যে কারণে দেশটির অর্থনীতির ভঙ্গুর দশা তৈরি হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ এ ধরনের ঋণকে ফাঁদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যে ফাঁদে উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য বাংলাদেশ যেভাবে অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয় পরিচালনা করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, তার সরকার একেবারে নিয়মনিষ্ঠ পদ্ধতি বিবেচনার পর পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
‘এবং আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করি, অত্যন্ত হিসেব-নিকেশের মাধ্যমে, আমি মনে করি, আমরা শ্রীলঙ্কার মতো একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হব না… শুধু তাই নয়, নীতিগত বিষয়েও, যে মুহূর্তে মহামারি শুরু হয়েছিল, কোভিড-১৯, আমি আমাদের জনগণকে আরও বেশি খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম, যতটা তারা খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পারে। এ জন্য আমরা গ্রাম পর্যায়ে সব ধরনের সহায়তা ও সেবা দিয়েছি এবং লোকজনকে উৎসাহিত করেছি।’
তিনি বলেন, আমি সবসময় তাদের সমর্থন করেছি। জনগণের কী করা উচিত সেবিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছি। আমি বলেছি, আপনার খাদ্য আপনাকেই উৎপাদন করতে হবে, যাতে আমরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হই।
তবে ইউক্রেন সংঘাত বাংলাদেশের জন্য কিছু সমস্যা তৈরি করেছে বলে স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, এই সংঘাতের খারাপ প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে আমরা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করি।