জাতির ভাগ্যাকাশে অনেক আগমন ও প্রস্থান সমাগত হয়েছে। জাতি ঐ আগমন ও প্রস্থান থেকে কোন শিক্ষা নিয়েছে বলে আপাতত দৃষ্টিতে মনে হয় না। আগমন আর প্রস্থানের ধারাবাহিকতায় মানুষ শিখবে আর এই শিক্ষা বাস্তবসম্মত। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে শিখানোর প্রয়োজনে বিভিন্ন ঘটনাবহুল জীবন এবং আগমন ও প্রস্থান দৃশ্যমান রেখেছেন। তিনি তার ইচ্ছা ও অভিপ্রায় বর্ণনায় বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থও বিরাজমান রেখেছেন। আবার আশ্চয্যভাবেও কথা বলেন এবং দৃক্ষা ও শিক্ষা দেন। কখনো কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাধ্যমে শিক্ষা দেন বা কথা বলেন। সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমেও কথা বলেন, শিক্ষা এবং দীক্ষা দিয়ে থাকেন। সবই করেন আমাদের মঙ্গলের জন্য। তবে আমরাই আমাদের মঙ্গলটাকে বেছে নিতে পারিনি অথবা মঙ্গলকে আলিঙ্গন করতে চাইনা। তাই সৃষ্টিকর্তার উপর দোষারূপ, তকদিরের উপর দোষারূপ, পরিস্থিতি বা পরিবেশের উপর দোষারূপ, প্রকৃতির উপর দোষারূপ, বিভিন্ন রোগ জিবানু বা মহামারির উপর দোষারূপ করে থাকি এমনকি সৃষ্টির সকল কিছুর উপরই আমাদের মিথ্যা দোষারূপ অব্যাহত। মোটকথা দোষারূপই যেন আমাদের একটি যৌক্তিক দাবী যা নিজেকে রক্ষা করার ভুল হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠীত। বাবা আদম ও মা হাওয়ার মাধ্যমেই এই দোষারূপের যাত্রা শুরু হয়েছিল যা আজও বিদ্যমান রয়েছে। তবে এখন রকম ফের ও খোলস পাল্টিয়েছে মাত্র।
আগমন দেখেছি আর প্রস্থান দেখেছি এবং দেখব তবে শিক্ষা নিব কি নিব না তা সম্পূর্ণই নির্ভর করে আমাদের নিজের স্বাধীনতা ব্যবহারের উপর। স্বাধীনতাই আমাদেরকে বিনষ্টের দিকে নিয়ে যায় এবং যাচ্ছে। তবে অতিরিক্ত স্বাধীনতা বা স্বাধীনতাকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করার উপায় এবং কৌশল আবিস্কার এখন জরুরী হয়ে পড়েছে। রাজনীতির উত্থান এবং পতন, রাষ্ট্র ক্ষমতার উত্থান এবং পতন, জাতি, গোষ্ঠী, গোত্র এবং দেশ আর শক্তির মালিকের উত্থান ও পতন প্রত্যক্ষ করেছি কিন্তু নিজেরা এর থেকে শিক্ষা নিয়েছি কি? তা এখন ভাবার বিষয় এবং সেই আলোকে আগামীর তরে অগ্রসর হওয়া উচিত। আমরা যে এখন স্বাধীন তা বুঝারও ক্ষমতা হারিয়ে বসেছি, কে আমাদেরকে স্বাধীন করেছে, কেন করেছে, কিসের উদ্দেশ্যে করেছে তাও কি খতিয়ে দেখেছি? না দেখার সুযোগ ও সময় আমাদের নেই। তবে স্বাধীন দুই ধরণের; একটি দুনিয়াবী আর একটি হলো আখেরাতের। দুনিয়াবী স্বাধীনতা যিনি বা যিনারা এনে দিয়েছেন তাদের খবর বা তাদের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় বুঝে অগ্রসর হওয়া জরুরী। অথবা তাদের ঋণ শোধ করার প্রয়োজনীয়তার কথা ভাবা উচিত বা দরকার সেই কথাটিও আমরা অকৃতজ্ঞরা দিনে দিনে ভুলে বসেছি। তবে যতটুকু রয়েছে তা সম্পূর্ন লোকদেখানো বা আগামীর বৃহৎ কোন লাভের আশায় আর কি? সবই এখন অবস্থাদৃষ্টে আমাদেরকে বুঝতে ও জানতে সহায়তা করছে। তবে কেউ কেউ এখনও পরিপূর্ণ সজাগ রয়েছেন এবং দুই ঋণ শোধের নিমিত্তে কাজ করে যাচ্ছেন তবে সবই নিজের কল্যানেই হচ্ছে:-।
আখেরাতের ঋণ শোধ বা স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষায় নিয়োজিতরা এখন একটু পিছনে পিছপা হটেছেন বটে তবে স্বজাগ থেকে সামনে এগুনোর সময় এখনই। এই সময়ের পরে কি হবে তা বলা মুশকিল কারণ সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে সকল শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন, তাঁর সমস্ত কিছু দিয়ে ব্যবহার করছেন, যখন যা প্রয়োজন তাই তিনি দিয়ে যাচ্ছেন এমনকি পাক রূহকে দিয়ে সহায়তা করে সকল ইতিবাচক ও কল্যাণকামী কার্য সম্পাদন করে যাচ্ছেন। তাহলে পিছপা হবার কি কারণ তা এখনই খতিয়ে দেখতে হবে? পৃথিবীকে শান্তি, নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা এবং শয়তানের শয়তানি থেকে মুক্ত রাখার জন্য আমাদেরকে স্বাধীন করে সকল উপাদানের যোগান দিয়ে ব্যবহার করছেন; কিন্তু আমরা ঐসকল উপাদান এবং ব্যবহার বর্জন করে নিজেরাই নিজেদের মত করে পৃথিবীর চাহিদায় দিনে দিনে বিলিন হয়ে যাচ্ছি। তবে এর থেকে বেড় হওয়ার এখনই সময়। ধর্ম, ঈমান, আমল এবং বিশ্বাস ও পৃথিবীর স্বাধীনতা উপভোগ এমনকি কল্যাণকর করে তোলার এক একটি উপকরণ ও যোগান হিসেবে নিজেরাই নিজেদেরকে নিয়োজিত করি এবং রাখি। তাহলেই চর্চার কাজটুকু সম্পন্ন হবে এবং সেই সাথে দৃশ্যমান ফল দেখব এবং নিজে ও অন্যদেরকে উপভোগ করাব।
বর্তমানের বিদায় বিভিন্ন রকম হয়, কারোটা ঝাকজমকের সাথে, কারোটা ঘৃণার সাথে আবার কারোটা কলঙ্কের নেতিবাচক ইতিহাসের সাথে এমনকি নিরব ও অদৃশ্য অমানিশার সাথে। তবে সবই কিন্তু আমাদের জীবনের জন্য একটি দিকনির্দেশনা মাত্র। তবে তা যদি আমরা জেনে শুনে এবং বুঝে নিজের জিবনে প্রয়োগের মাধ্যমে আগামীর সার্বজনীন কল্যাণে কৃতকর্মের মাধ্যমে অগ্রসর হই তাইনে নতুন এবং ভাল কিছু দেখবই দেখব। রানী-রাজারা আসেন, সরকার এবং রাজনীতিকরা আসেন, শক্তিশালী ও ধনীরা আসেন আবার সবারই প্রস্থান ঘটে; কিন্তু এই আসা ও যাওয়ার মধ্যের সময়টুকুই আমাদেরকে সঠিক জীবন, জ্ঞান, সম্পদ, শান্তি, আনন্দ, নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা, সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও প্রস্থানের পূর্ণতা দেয়। কিন্তু কি আমরা ঐসকল বুঝতে একটু সময় ব্যায় করি বা করতে চিন্তা ও চেষ্টা করি? না করি না, তবে এখন থেকে একটু সময় বের করে একাকিত্ত্বে করার চিন্তা ও চেষ্টা করি যাতে সার্বজনীন সুখ, শান্তি এবং এপার ও ওপারের নিশ্চয়তার পরিপূর্ণতা নিজে পাই এবং অন্যকে পাইয়ে দিতে চেষ্টা করি।
কোন কিছুই আমাদের জন্য চিরস্থায়ী নয় বরং একমাত্র চিরস্থায়ী হলো ঈমান, আমল ও বিশ্বাসের ফল। আখেরাতের স্বাধীনতা ভোগের নিশ্চয়তাটুকুই আমাদের জন্য চিরস্থায়ী। আর ঐ চিরস্থায়ী নিশ্চয়তার বীজ বপনের সময় এখনই আমাদের সামনে হাজির। তাই সকলেই সৃষ্টিকর্তার নিয়ামত বিনামূল্যের দান গ্রহন করে চিরস্থায়ী প্রস্থানে শান্তি, স্থিতিশীলতা, নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তার শতভাগ পরিপূর্ণতা বিধান করি। ক্ষনস্থায়ী জীবনে অল্প জাকজমক পরিহারে কাজ এখনই শুরু করি। কি ছিলনা ঐ সদ্য প্রয়াত রানীর, কি লাভ এখন তার ঐ জাকজমক এবং সম্পদ ও খ্যাতি আর চাকচিক্যের জৌলুসে। সবই ধুলাই মিশে একাকার। যেমন ধনী-গরীব সকলেরই একই দশা “মিনহা খালাকনাকুম, ওয়াফিহা নূয়্যিদুকুম, নুখরুজুকুম তারাতান ওখরা” অথাৎ মাটির দেহ মাটিতেই রেখে গেলাম, যা এখানের ধুলিসাৎ হবে। পৃথিবীর কোন কিছুই ঐ অবস্থানের পরিবর্তন করতে পারেনি এবং পারবেও না, তাহলে কেন এই বৈষম্য এবং অল্পদিনের ধাম্বিকতা? যেখানে জন্ম ও মৃত্যুতে নেই কোন ফারাক আর সৃষ্টির মাঝেও নেই কোন ফারাক এমনকি সৃষ্টিকর্তাও ধনী-গরীব, উচু-নিচুতে কোন ফারাক করেন না; তাহলে আমরা কেন ঐ বোকামীর দন্ড কাধে নিয়ে অশান্তির আগুনে জ্বলে পুড়ে শেষ হচ্ছি? ভেবে দেখবেন ও নতুনের জন্য সঠিক অবস্থান ঠিক করে দিয়ে যাবেন।
অনেক যুদ্ধ দেখেছি, পতন দেখেছি, জয় দেখেছি তবে কোনটারই স্থায়ীত্ব দেখি নাই। কোনটারই আগে ও পরে শান্তি, আনন্দ, নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা দেখিনাই। ঐগুলোর অতিত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করে আগামীর জন্য একটি পরিপূর্ণ ব্যবস্থা উপহার দেয়ার সময় এখনই আর সৃষ্টিকর্তাও ঠিক এই কাজটুকুই আপনাকে, আমাকে এবং আপনাদের সকলে নিয়ে সমাপ্তি টানতে চান। আসুন আমরা সকলে মিলে ঐ কাজে মননিবেশ করি এবং সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ের পথে অগ্রসর হই। দুনিয়াবী সকল কর্মকান্ডে সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ের সঙ্গে মিলিয়ে কার্যে পরিণত করি যাতে আগামীর জন্য সুনিশ্চিত এক অভয়ারন্য উপহার দিয়ে যেতে পারি। পরিশেষে আমাদের দেশের সকল রাজনৈতিক নেতা, দল ও সাধারণ মানুষকে বলি ফিরে আসুন, ফিরে আসুন, ফিরে আসুন; নতুবা সাদুম ও গমুরার পরিণতির দিকে যাবেন কিন্তু এটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা নয় বরং আপনাকে আমাকে রক্ষা করতেই তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখন যেভাবে, যেদিকে এগুচ্ছি সেদিক থেকে যদি মন না ফিরাই তাহলে সৃষ্টিকতার প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম দেখতে বা পরখ করতে প্রস্তুত থাকুন। ভয়ঙ্কর ভিবিষিকাময় পরিস্থিতি এখন আমাদের সামনে আসছে তাই ঐ পরিস্থিতি থেকে নিজে বাঁচতে এবং অন্যকে বাঁচাতে ফিরে আসুন। নিজের বিচার বুদ্ধিকে জাগ্রত করুন এবং নিজেকে আয়নায় দেখুন। অতিতের ইতিহাস এবং ঘটনাবহুল জীবন, কর্ম এবং দৃষ্টান্তগুলোর সাথে স্ব স্ব ধর্মীয় বানীগুলোর মিলনমেলায় আগামীর সকল কর্মকান্ডগুলো সাজিয়ে তুলূন। সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য এবং আশির্বাদ, অনুগ্রহ এমনকি রহমতে সয়লাভ হয়ে পৃথিবী ফিরে পাবে তার আসল রূপ, আপনি, আমি ফিরে পাব আমাদের হারানো ঐতিহ্য, সৃষ্টিকর্তার সকল সৃষ্টির পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় উচ্চারিত শব্দচয়ন “চমৎকারিত্ব”। হ্যাঁ চমৎকারিত্বেই আমাদের ফিরে যাওয়ার সকল ব্যবস্থায় আয়োজনের পরিপূর্ণতা দিতে হবে। এখন থেকেই শুরু করুন। জয় হউক আগামীর কল্যাণের।