ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ কসবায় টিসিবি’র পণ্য কার্ডধারীদের না দিয়ে ফেরত নেয়ার সময় স্থানীয় জনতা উপজেলা পরিষদ চত্বরে মালামালসহ অটো আটক করে পুলিশের জিম্মায় দেয়। আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কসবা থানা ওসি ও সাংবাদিকরা বার বার নির্বাহী অফিসারকে ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে সন্ধ্যার পর তিনি অফিসে এসে সাংবাদিকের জানান, এ বিষয়ে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সংগে আলাপ করে ব্যবস্থা নেবেন।
ঘটনার বিবরনে প্রকাশ, গত মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) কসবা বিআরডিবি কার্যালয় থেকে টিসিবির ডিলার আবু কাওসার ন্যায্য মুল্যে মোট ৬৫৪ জন নির্দিষ্ট কার্ডধারীকে তেল, চিনি ও ডাল দেয়ার কথা। সকলকে মালামাল না দিয়ে বেশ কিছু মালামাল সরিয়ে ফেলেন এবং ঘোষনা দেন পণ্য শেষ হয়ে গেছে। এতে ক্ষুব্দ নারী-পুরুষ উপজেলা গেটে অবস্থান নেয়। এরা মালামালসহ মোহাম্মদ আলী নামক এক অটোচালককে আটক করতে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহায়তা চায়। স্থানীয় সাংবাদিকরা পুলিশে খবর দিলে কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
সেখানে তিনি আটক ৩৮ কেজি চুয়াবিন তেল, ৩৮ কেজি মসুরী ডাল, ২১ কেজি চিনি ও অটোসহ চালককে আটক করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ফোন দেন। ফোনে তাকে না পেয়ে ওসি কসবা থানা এসআই মোহাম্মদ আক্কাসকে দায়িত্ব দিয়ে যান। এসময় সাংবাদিকরাও নির্বাহী অফিসারকে একাধিকবার ফোন দেন। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।
পরে সন্ধ্যার পর নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলম একাধিক ডিলারের সংগে তার অফিসে বসে কথা বলেন। এসময় সাংবাদিকরা ইউএনও’র অফিসে পৌঁছলে তিনি সাংবাদিকদের কোনো সাক্ষাতকার না দিয়ে বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সংগে তিনি কথা বলে যদি নিয়মের ব্যতয় ঘটে থাকে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন এবং সাংবাদিকদের এ বিষয়ে সাক্ষাতকার দেবেন।
উপজেলার তারাপুর গ্রামের কার্ডধারী আনোয়ার হোসেন, গুরুহিত গ্রামের জিহাদ, নুপুর বেগম, কসবার রেহেনা বেগম, সুমাইয়া আক্তার জানান, বেলা একটায় অফিসে গেলে ডিলার তাদের বলেন; মাল নাই। কিন্তু অটো দিয়ে মাল নিয়ে যায় বাহিরে। তাই আমরা একটি অটো সাংবাদিকদের সাহায্যে আটক করি।
আকবপুর গ্রামের হেনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, কার্ড পেয়ে এযাবত তিন কিস্তিতে এসেছি। কিন্তু কোনোবারই মাল নিতে পারিনি।
টিসিবি ডিলার আবু কাউসার জানান, তিনি বিআরডিবি অফিস থেকে ৬৫৪ জনকে পণ্য দেন। কিন্তু তার রেজিষ্টার চেয়ে দেখা যায় ৫৯০ জন পণ্য গ্রহিতার টিপসহি রয়েছে।
ফলে ৬৪ জন কার্ডধারী পণ্য গ্রহিতার মালামাল টিসিবি ডিলার আত্মসাত করেছেন বলে ভুক্তভোগী ও স্থানীয় অধিবাসীরা দাবী করেছেন।
অটোচালক মোহাম্মদ আলী জানান, ডিলার কাউসার কাকা আমার অটোতে এই মালামাল দিয়ে বলেন এগুলো তার দোকানে কুটি বাজারে নিয়ে যেতে।
অপরদিকে ট্যাগ অফিসার সহকারী পল্লী উন্নয়ন কমকর্তা মোহাম্মদ রাসেল জানান, কখন মালামাল চুরি করে সরিয়ে ফেলেছে তা তিনি টের পাননি।
স্থানীয় পৌর কমিশনার ফোরকান আহাম্মদ ও রিনা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, লেবারদের জন্য চারটি প্যাকেট দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু বাকি প্যাকেটগুলো কখন সরিয়েছে তারা টের পায়নি।
কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এখতিয়ার। পরিষদের ভেতরে না হলে আমি ওই মালামাল, অটোচালক ও ডিলারকে আটক করে থানায় নিয়ে আসতাম।
সর্বশেষ খবরে জানা যায়, আটককৃত মালামাল গত মঙ্গলবার রাতে তালিকা করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলমের নেতৃত্বে স্থানীয়দের মধ্যে ন্যায্যমুল্যে বিতরন করা হয়।