প্রশান্তি ডেক্স॥ ইন্টারনেট প্রটোকল-৬ (আইপিভি-৬) বাস্তবায়নে অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এমনকি ভুটানও এই প্রটোকল বাস্তবায়নে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। তবে আশার কথা, বাংলাদেশে এটা নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো প্রটোকল-৬ বাস্তবায়ন শুরু করেছে। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও (আইএসপি)আইপিভি-৬ বাস্তবায়ন করছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ শতাংশ হারে বেশ ভালো অবস্থানে পৌঁছাবে বাংলাদেশ।
আইপিভি-৪ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আইপিভি-৬ বাস্তবায়ন শুরু হলেও বাংলাদেশ করছি, করবো করে দেরি করে ফেলে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত এপনিকের (এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার) ৪৯তম সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ঘোষণা দেয়—বাংলাদেশে আইপিভি-৬ বাস্তবায়নের হার ০.২ শতাংশ। সে সময় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই হার ছিল ৬০ শতাংশ।
জানা যায়, বর্তমানে দেশে আইপিভি-৬ বাস্তবায়নের হার ২.২৩ শতাংশ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যা ৭৫ শতাংশ, নেপাল ৩৫, ভুটান ১৫, শ্রীলঙ্কা ৩৫ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইপিভি-৬ বাস্তবায়ন না করলে ইন্টারনেটের কোয়ালিটি অব সার্ভিস ভালো পাওয়া যাবে না। এর অপারেশন ব্যয় বাড়বে। ভবিষ্যতে যে সফটওয়্যার, সলিউশন্স তৈরি হবে দেখা যাবে তা আইপিভি-৬ সমর্থিত। ফলে সে সময় আইপিভি-৪ ওইসবে কাজ করবে না। এমনও হতে পারে, যারা নতুন সফটওয়্যার ও সলিউশন্স তৈরি করবে, তারাও বলতে পারে—আমরা আইপিভি-৪-এর জন্য কোনও কিছু তৈরি করবো না। ফলে সে সময় সেবা নিয়েও একটা সমস্যা তৈরি হতে পারে।
২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি সমুদ্র শহর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত বিডিনগ-১১ সম্মেলনে বক্তারা পরবর্তী ৬ মাসে আইপিভি-সিক্স ০.১ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে অনুষ্ঠিত এপিনিক-৪৯তম আসরে জানানো হয়—দেশে বাংলাদেশে আইপিভি-৬ বাস্তবায়নের হার ০.২ শতাংশ। ওই সম্মেলন দেশের ইন্টারনেট অ্যাসোসিয়েশন, বিডিনগ, এপিনের সদস্য প্রতিষ্ঠান ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার মহাপরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সে সময়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব অংশ নেন। সবারই আশাবাদ ছিল আইপিভি-৬ বাস্তবায়নের হার বাড়বে।
আইপিভি-৬ বাস্তবায়নে কেন বাংলাদেশ পিছিয়ে, এর বাস্তবায়ন ধীরগতিতে হচ্ছে কেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এর পেছনে মূল কারণ আইএসপিগুলোর গাফিলতি। বারবার বলার পরও তারা করতে পারছে না। আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন স্তর আছে। সেগুলোর মধ্যে সিংক্রোনাইজেশন হচ্ছে না। বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও তারা করতে পারছে না। ফলে আইপিভি-৬ বাস্তবায়ন নিয়ে আমি সন্তুষ্ট নই।’
দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হকের কাছে এটি বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। শিগগিরই একটি ব্যাচের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে পলিসি নিয়ে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট, ব্যবহৃত ওয়াইফাই রাউটার আইপিভি-৬ সমর্থিত হতে হবে। এজন্য এটি বাস্তবায়নে সরকারকেও উদ্যোগ নিতে হবে। বিটিআরসি কিছু কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে এটির বাস্তবায়ন দ্রুত হবে।’ তিনি জানান, একটি ওয়াইফাই রাউটারের লাইফ সাইকেল ৪-৫ বছর। দেশে দেড় কোটি পুরনো রাউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো বদলাতে হবে। তা না- হলে আইপিভি-৬ সেসবে কাজ করবে না। কাজ না করলে ইন্টারনেটের কোয়ালিটি অব সার্ভিস তথা মানসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে না।
আইপিভি-৬ বাস্তবায়নের ধীরগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এপনিকের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পলিসি চেয়ার সুমন আহমেদ সাবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা (বাংলাদেশ) এটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি কিন্তু দ্রুতগতিতে হচ্ছে না। কারণ, খুঁজতে গেলে দেখা যাবে—কেন হচ্ছে না, তা কেউ জানে না। তবে আমি মনে করি, এই প্রটোকল বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ করোনা মহামারি। এই মহামারির কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি।’ তিনি জানান, দেশের মোবাইল ফোন অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠানগুলো আইপিভি-৬ বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এটি আমাদের জন্য আশার খবর।
প্রসঙ্গত, আইপিভি-৬ হলো ইন্টারনেট প্রটোকলের সর্বশেষ সংস্করণ। বর্তমানে বাংলাদেশে আইপিভি-৪ ব্যবহার হচ্ছে। আইপিভি-৬ এর ব্যবহারের হার মাত্র ২ শতাংশ। আইপিভি-৪ হলো ৩২ বিটের প্রথম প্রজন্মের ইন্টারনেট প্রটোকল, যার মাধ্যমে ৪৩০ কোটি অ্যাড্রেস ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু এই অপ্রতুল ৩২ বিট দিয়ে বিশাল আইপি অ্যাড্রেসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। এ কারণেই নতুন ধরনের একটি নেটওয়ার্ক লেয়ারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সামনে চলে আসে আইপিভি-৬। আইপিভি-৬ হলো ১২৮ বিটের অ্যাড্রেস লেয়ার প্রটোকল, যা ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি নেটওয়ার্ক ডিভাইসকে স্বতন্ত্র পরিচয় দেয়। আইপিভি-৪-এর জন্য কোয়ালিটি অব সার্ভিস ও নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে।