প্রশান্তি ডেক্স॥ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। গত বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত বুধবার (১৯ অক্টোবর) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। এর একদিন আগে অর্থাৎ গত মঙ্গলবার রিজার্ভ ছিল ৩৬ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে অর্থাৎ গত বছরের ১৯ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। যা এখনকার চেয়ে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসতে পারে।
প্রসঙ্গত, বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহেও উন্নতি হচ্ছে না। আবার আমদানি ব্যয়ও কমানো সম্ভব হয়নি।
অবশ্য পরিস্থিতি সামলাতে সরকার এখন আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিতে চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে আইএমএফ ঋণ দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে। ধারণা করা যাচ্ছে, আগামী বছরের শুরুতেই ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া যাবে।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকার যদি আইএমএফের দেওয়া শর্ত মেনে নেয়, তাহলে আগামী বছরের শুরুতেই ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া সম্ভব। তবে সরকার যদি শর্ত পরিপালনে বেশি আন্তরিকতা দেখায় তাহলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ অর্থাৎ ডিসেম্বরেও প্রথম কিস্তি পাওয়ার সুযোগ আছে। তিনি উল্লেখ করেন, আগামী ২৬ অক্টোবর দেশে আসছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। এ সময় ঋণ দেওয়ার শর্ত নিয়ে আলোচনা করবেন তারা। এই প্রতিনিধি দলের রিপোর্টের ওপর নির্ভর করছে কতদিন নাগাদ ঋণ পাওয়া যাবে।
আহসান মনসুর বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আকুর বিল পরিশোধ করতে হবে। তখন দেশের অর্থনীতিতে চাপ আরও বাড়বে। তাই রিজার্ভ যাতে আর না কমে সে জন্য আইএমএফের ঋণটা যাতে দ্রুত পাওয়া যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে আমদানি ব্যয় কমানোর পাশাপাশি রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আইএমএফের প্রতিনিধি দল আগামী ২৬ অক্টোবর দেশে আসছে। তারা ফিরে গিয়ে যে প্রতিবেদন জমা দেবে, সেই প্রতিবেদন উঠবে আইএমএফের বোর্ডে। এরপরেই ঋণ পাওয়া যাবে। তবে কবে নাগাদ ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া যাবে নির্দিষ্ট করে তা বলা মুশকিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে আমদানি ব্যয় প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ২৬৯ কোটি (১২.৬৯ বিলিয়ন) ডলার হয়েছে। আর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে রফতানি আয় ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলার এসেছে। একই সময়ে প্রবাসী আয় মাত্র ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫৬৭ কোটি ডলার। প্রথম দুই মাসে রফতানি ও রেমিট্যান্স বাড়লেও সেপ্টেম্বরে কমেছে।
চলতি অক্টোবর মাসেও রেমিট্যান্স প্রবাহে ধীরগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এই মাসের ১৩ দিনে (১ থেকে ১৩ অক্টোবর) এসেছে ৭৭ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে বড় অঙ্কের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
মূলত, বাংলাদেশে রিজার্ভের উল্লম্ফন হয় ২০২০ সালে। ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে।