বাআ॥ ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান হাওয়া ভবন থেকে একটি বিকল্প সরকার পরিচালনা করতো। মূল সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপির চাইতেও প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল তারেক রহমানের সেই হাওয়া ভবন সিন্ডিকেট। এরপর ৫ বছরে ব্যাপক দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, খাস জমি দখল, চাঁদাবাজির ভাগ, বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট এবং সরকারের উন্নয়ণ প্রকল্পের কয়েক হাজার কোটা টাকা আত্মসাৎ করে তারেক রহমান। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তারেকের এসব অপকর্ম ফাঁস হয়ে পড়ে।
১২ মার্চ ২০০৭ সালের যুগান্তর পত্রিকায় তারেক রহমানের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। যৌথ বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তারেক রহমান জানায়- মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, দুবাই এবং সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে এসব অর্থ রেখেছে সে।
তারেক স্বীকারোক্তিতে জানায়- ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচন এবং ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, সেটার জন্য মনোনয়ন বাবদ দলীয় নেতাদের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা অনুদান পাওয়া গেছে। কিন্তু দলীয় নেতাদের সূত্র থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, এসব টাকা অনুদান নয় বরং চাঁদা হিসেবে আদায় করেছিল তারেক রহমান। হাওয়া ভবন সিন্ডিকেটে এই টাকা না দিলে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সম্ভব ছিল না। এসব টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে তারেক।
এসময় যৌথ বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে ৩০ জন বিএনপি নেতার নাম বলেছে তারেক রহমান, যারা তার হয়ে দলীয় মনোনয়ন ও পদ-বাণিজ্যের বিষয়গুলো দেখাশোনা করতো। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আমানউল্লাহ আমান, গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
এদিকে, মালয়েশিয়া সরকার তারেক রহমানের ২৩০ মিলিয়ন ডলার তথা ১ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা জব্দ করে ওইসময়। দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৫ মিলিয়ন ডলার প্রজেক্টেও তারেক রহমানের বেশ কয়েকটি বিনিয়োগের তথ্য জানা যায়। এসব দুর্নীতির তথ্য আন্তর্জাতিকভাবেও বেশ আলোচিত হয়ে ওঠে তখন।
এছাড়াও ২০০৭ সালের ১০ মার্চ উদয় টাওয়ারের মালিক আমিন আহমেদ ভূইয়ার মুখোমুখি করা হয় তারেক রহমানকে। সেসময় তারেক রহমান স্বীকার করে জানায়, সে ১ কোটি টাকা চাঁদা হিসেবে নিয়েছিল আমিন আহমেদের কাছ থেকে। এছাড়াও দেশের বড় বড় ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন সময় মোটা অংকের টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে তারেক। এরমধ্যে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের কয়েকটি ভিডিও দেখানো হয় তারেককে। এরপর বিভিন্ন দেশে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর কথা স্বীকার করে সে।