বাআ॥ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে নির্যাতন করা হতো সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ‘গুডস হিল’-এর বাড়িতে। পাকিস্তানি ঘাতক বাহিনীকে সঙ্গে করে নিয়ে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের নারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাতো এই যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী। মূলত পাকিস্তানি হানাদারদের পথ প্রদর্শক এবং বাঙালি যুবক, বুদ্ধিজীবী ও সংখ্যালঘুদের গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড ছিল চট্টগ্রামের এই কুখ্যাত সাকা চৌধুরী।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং দেশদ্রোহীদের তালিকায় শীর্ষে ছিল এই পরিবারের সদস্যরা। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের নির্মমভাবে হত্যার পর স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের ছায়ায় আবারো নাশকতায় মেতে ওঠে সাকা চৌধুরী। এরপর বিএনপির অন্যতম নেতা হয়ে ওঠে সে এবং ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ায় পর খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হয়।
কিন্তু ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর, বিএনপি-জামায়াত জোটের ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা ধরা পড়ে। তখনও দেখা যায় এই কুখ্যাত সাকা চৌধুরী অসাংবিধানিকভাবে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া দুই জায়গা থেকে ভোটায় হয়েছে। এছাড়াও অবৈধপথে আয় করা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার অপরাধে দুর্নীতি দমন কমিশন আটক করে তাকে।
পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলে, তদন্তে দেখা যায়- মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড এবং খুন ও ধর্ষণের ক্ষেত্রে পাকিস্তানি সেনাদের প্রধান সহযোগী ছিল এই সাকা চৌধুরী। পাকিস্তাদের কাছে এদেশের রাস্তাঘাট অচেনা থাকায়, সাকা চৌধুরী নিজে তাদের প্রদর্শক হিসেবে ভূমিকা রাখতো। এমনকি তার ‘গুডস হিল’-এর বাসায় নিয়মিত আসর বসাতো পাকিস্তানি সেনারা। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ধরে এনে নির্যাতন করা হতো ‘গুডস হিল’ এর টর্চার সেল-এ।
চট্টগ্রামে টানা পাঁচ দিন অবস্থান করে শত শত মানুষের সাক্ষ্য নিয়ে এসব তথ্য-প্রমাণ পায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল। তদন্ত দলের সদস্য এএসপি নুরুল ইসলাম জানান, ১৯৭১ এ চট্টগ্রাম অঞ্চলে গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটে সাকা চৌধুরীর ভূমিকা ছিল গভীর। সেসব স্মৃতিচারণ করে সাধারণ মানুষ এখনো ভীত হয়ে ওঠে।
২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি যুগান্তর পত্রিকার সংবাদে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্থ এবং নির্যাতনের শিকার যেসব পরিবার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জানিয়েছে, সাকা চৌধুরী তাদের ওপর সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দেয়। শিবির ক্যাডারদের সহায়তায় মামলার বাদীদের হত্যার হুমকি দিয়ে নির্যাতন চালায় সাকা চৌধুরীর কুখ্যাত পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরী।
সাকার বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার বাদী আবু তাহের এ ব্যাপারে সাকা চৌধুরী, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, ফাইয়াজ চৌধুরী এবং নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ড. শাহাদতের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর বেপরোয়া হয়ে রাজাকার সাকা চৌধুরীর পক্ষ নিয়ে পুলিশের ওপর হামরা করে হুম্মাদ কাদেরসহ বিএনপির জামায়াতপন্থী নেতাকর্মীরা। এদের হামলায় আহগ হয় সিএমপির এসি জেদান আল মুসা। মূলত চট্টগ্রামকে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে ফেলেছিল সাকা ও হুম্মাম গং।