প্রশান্তি ডেক্স॥ বঙ্গোপসাগরের পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে আজ শনিবার (২৯ অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে শুঁটকি মৌসুম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক হাজার জেলে সেখানে জড়ো হবেন। এবার শুঁটকি থেকে চার কোটি টাকা রাজস্ব আসবে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২টার পর দুবলার চরের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন জেলেরা। এজন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন উপকূলের জেলে-মহাজনরা। সাগরে যেতে যে যার মতো করে প্রস্তুত করছেন জাল, দড়ি, নৌকা ও ট্রলার। কেউ কেউ তৈরি করেছেন নতুন ট্রলার, আবার কেউ পুরনোটিকে মেরামত করে নিয়েছেন। বন বিভাগের পাস নিয়ে তারা দুবলার চরে যাচ্ছেন। সাগরে এখন দস্যুদের উৎপাত না থাকলেও ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি মাথায় নিয়েই যাত্রা শুরু করবেন তারা।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে ২৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া শুঁটকি মৌসুম চলবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। টানা চার মাস সেখানে থাকবেন জেলেরা। এজন্য সাগর পাড়ে গড়তে হবে অস্থায়ী থাকার ঘর, মাছ শুকানোর চাতাল ও মাচা। সেসব তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে না সুন্দরবনের কোনও গাছপালা ও লতাপাতা। বন বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী চরে যাত্রার আগে ট্রলারে তাদেরকে সঙ্গে নিতে হবে প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী। এসব নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগেরহাটসহ উপকূলের কয়েক হাজার জেলে-মহাজনরা।
বন কর্মকর্তারা বলছেন, এবার শুঁটকি থেকে চার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বন বিভাগ। গত মৌসুমে রাজস্ব আহরণ হয়েছিল তিন কোটি ৮৫ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ টাকা। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হবে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ‘বন বিভাগের কাছ থেকে পাস নিয়ে নিজ নিজ এলাকা থেকে রওনা হয়ে জেলেদেরকে সরাসরি যেতে হবে দুবলার চরে। যাওয়ার পথে সুন্দরবনের কোনও নদী-খালে প্রবেশ ও অবস্থান করতে পারবেন না জেলেরা। দুবলার চরে অবস্থানকালে সাগর ছাড়া সুন্দরবনের খালে প্রবেশ ও সেখানে মাছ ধরতে পারবেন না তারা।’
দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের নেতা কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনে এখন দস্যুদের ভয় নেই। তাই স্বস্তি নিয়েই সাগরে যেতে পারছেন জেলেরা। বন বিভাগ থেকে এখনও সব পাস-পারমিট পাওয়া যায়নি। তবে এবার শুঁটকি মৌসুমে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার সাড়ে ছয় হাজার বহরদারের অধীনে ৯/১০ হাজার জেলে দুবলার চরে যাবেন। ট্রলার নিয়ে গভীর সাগর থেকে আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বাছাই করে শুঁটকি করবেন তারা। যাওয়ার সময় ট্রলারে করে এখান থেকে কাঠ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছেন জেলেরা। বন বিভাগের কাছ থেকে পাস নিয়ে শনিবার থেকে সাগরে যেতে শুরু করবেন তারা।’
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘এ বছর চরে জেলেদের থাকা ও শুঁটকি সংরক্ষণের জন্য এক হাজার ৩০টি ঘর, ৬৩টি ডিপো এবং ৯৬টি দোকান স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গত শুঁটকির মৌসুমে দুবলার চর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছিল তিন কোটি ৮৫ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ টাকা। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হবে।’