ভজন শংকর আর্চায্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধ ॥ ষড়্ঋতুর এই দেশে বছর ঘুরে শীত মৌসুম এলেই খেজুরের রস সংগ্রহ শুরু করেন গাছিরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায়ও বসে নেই তাঁরা। কোমরে ছোট ছোট কলস ও ধারালো দা নিয়ে গাছ ওঠে রস বের করায় ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।
শীতকালে গ্রামবাংলায় খেজুরের রসের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এই রস দিয়ে পিঠা-পায়েস থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি হয়। তবে সীমন্তবর্তী এই উপজেলায় আগের তুলনায় খেজুরগাছের সংখ্যা অনেকাংশেই কমে গেছে। আগের মতো গাছিদের দল বেঁধে কাজে যেতে দেখা যায় না। দেড় যুগ আগেও উপজেলার প্রতিটি গ্রামে অধিকাংশ বাড়িতেই একাধিক খেজুর গাছ দেখা যেত। কালের বিবর্তনে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এজাতীয় গাছসহ সব ধরনের গাছ কেটে বাড়ি-ঘর নির্মিত হয়েছে।
সীমান্তবর্তী এই উপজেলার খিরনাল, কাজিয়াতলী, মূলগ্রাম, রাধানগর, বায়েক এলাকায় দেখা গেছে গাছিরা খেজুরের রস নামানোর কাজে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সীমান্তবর্তী বায়েক গ্রামের গাছি মাজেদ ও শওকত আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই দুই ভাই শীতকাল এলে শতাধিক খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। ইতিমধ্যে অধিকাংশ গাছের রস বের করার কাজ শুরু হয়েছে। অন্য গাছগুলোতে কয়েক দিনের মধ্যে রস সংগ্রহ শুরু হবে। তারা খেজুরের রস থেকে অল্প পরিমাণে গুড় তৈরি করলেও এ বছর আরও বেশি গুড় তৈরির আশা করছেন।
অপর গাছি বিল্লাল হোসেন ও রবিউল ইসলাম বলেন, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছে গাছে রসও বাড়ে। এলাকার অনেকেই বাড়ি থেকে রস কিনে নিয়ে যান। শীতের ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি গুড় তৈরি করা যায়। দিনে দিনে কদর বাড়ছে গুড়ের। যতটুকু গুড়ই তৈরি হয়, দিনে দিনেই বিক্রি হয়ে যায়। উপজেলার বাইরে থেকেও কিছু ক্রেতা আসেন গুড় নিতে।
এলাকার সচেতন মহল বলছে, একসময় মাঠের যেদিকে চোখ যেত, শুধুই খেজুরগাছ দেখা যেত। কিন্তু এখন খেজুরগাছ আগের মতো দেখা যায় না। এই খেজুরগাছ ও খেজুরের রস একসময় গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বহন করলেও এখন আর এসব গাছ সংরক্ষণে কোনো মহলই উদ্যোগী হচ্ছে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে খেজুরগাছ রক্ষায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পদক্ষেপ না নিলে অন্য সব বিলুপ্ত হওয়া গাছগাছালির মতো খেজুরগাছের নামও বিলুপ্তির তালিকায় উঠবে বলে মনে করছেন এই জনপদের গাছিসহ স্থানীয় সচেতন লোকজন।
এনিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাজেরা বেগম বলেন, খেজুরের রসের সঙ্গে বাঙ্গালি সংস্কৃতির একটি মিল রয়েছে। নানা কারণেই দিন দিন খেজুর গাছগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে সরকারি বে-সরকারিভাবে খেজুর গাছ রোপণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
কসবা এলাকার মাটি খেজুর চাষের উপযোগি। উপজেলা পর্যায়ে খেজুর চারা প্রদানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করবো।