প্রশান্তি ডেক্স॥ বাংলাদেশ ২০২১ সালে বৈশ্বিক তৈরি পোশাক রফতানির বাজারে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। ২০২০ সালে ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে তৃতীয় অবস্থানে ঠেলে দিয়ে দ্বিতীয় হয়েছিল। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে পোশাক রফতানিতে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বাংলাদেশের।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) প্রকাশিত বিশ্ব বাণিজ্য পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ২০২১ সালে বৈশ্বিক তৈরি পোশাক রফতানি বাজারে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে, ২০২০ সালে ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে তৃতীয় অবস্থানে ঠেলে দিয়ে দ্বিতীয় হয়েছিল। গত বুধবার (৩০ নভেম্বর) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) প্রকাশিত বিশ্ব বাণিজ্য পরিসংখ্যান পর্যালোচনা ২০২২-এ দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী তৈরি পোশাক (আরএমজি) রফতানিতে ভিয়েতনামের অংশ ২০২০ সালের ৬.৪০ শতাংশ থেকে ২০২১ সালে ৫.৮০ শতাংশে নেমে গেছে।
বৈশ্বিক আরএমজি বাজারে বাংলাদেশের অংশ অবশ্য ২০২০ সালে ৬.৩০ শতাংশ থেকে গত বছর ৬.৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই অনুপাত ২০১৯ সালে ৬.৮০ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ছিল ৬.৪০ শতাংশ।
ডব্লিউটিও’র পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, গত বছর বাংলাদেশ থেকে আরএমজি রফতানি দৃঢ়ভাবে বেড়েছে এবং বার্ষিক ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি রেকর্ড করেছে। ২০২০ সালে এই রফতানি একটি বড় ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছিল এবং ভিয়েতনামের আরএমজি রফতানির ৭ শতাংশ বৃদ্ধির বিপরীতে বাংলাদেশে ১৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল।
বৈশ্বিক পোশাক রফতানি বাজারে ২০১০ সালে বাংলাদেশের অংশ ছিল ৪.২০ শতাংশ, তখন ভিয়েতনামের অংশ ছিল ২.৯০ শতাংশ।
চীন ২০২০ সালে বৈশ্বিক পোশাক রফতানি বাজারে দেশটির অংশ ৩১.৬০ শতাংশ থেকে গত বছরে ৩২.৮০ শতাংশে উন্নীত করে প্রথম অবস্থান ধরে রেখেছে।
ডব্লিউটিও’র প্রকাশনা অনুসারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরএমজির দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ব রফতানিকারক। সুতরাং, প্রযুক্তিগতভাবে বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহত্তম বিশ্ব আরএমজি রফতানিকারক দেশ এবং ভিয়েতনাম চতুর্থ।
ডব্লিউটিও’র পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শীর্ষ ১০ পোশাক রফতানিকারকের বার্ষিক মোট রফতানি মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৬০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের ৩৭৮ বিলিয়ন থেকে একটি বড় উত্থান। এই মূল্য ২০১৯ সালে ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেকর্ড করা হয়েছিল।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে :
ইউরোপীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ তথ্যে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক সরবরাহকারী সব শীর্ষ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বাংলাদেশের। উল্লিখিত সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ থেকে ১৫.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে, যেখানে বিশ্ব থেকে তাদের মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ৬৭.১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট পোশাক আমদানিতে ২২.৮ শতাংশ নিয়ে বাংলাদেশ ইউরোপের পোশাক আমদানির দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। ২০২২ সালের প্রথম ৮ মাসে ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোশাক আমদানি ৪৫.২৬ শতাংশ বেড়েছে।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্য বলছে, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর পোশাক আমদানির প্রধান শীর্ষস্থানীয় উৎস এবং ২৮.০৬ শতাংশ শেয়ার নিয়ে চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬.৫৯ শতাংশ। ২০২২ সালের জানুয়ারি-আগস্টে চীন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোশাক আমদানি ১৮.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। একই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোশাক আমদানির তৃতীয় বৃহত্তম উৎস তুরস্কের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০.৩৮ শতাংশ। তুরস্ক থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমদানি বেড়েছে ১৬.৯৭ শতাংশ। একই সময়ে, ভারত থেকে ইইউ ৩.৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে। ভারত থেকে ইইউ’র আমদানি আগের বছরের তুলনায় ২৮.৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
উচ্চ প্রবৃদ্ধিসহ অন্য শীর্ষ দেশগুলো হলো কম্বোডিয়া ৪২.২১ শতাংশ, পাকিস্তান ৩১.৩৪ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়া ৩৫.৪১ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সবকিছুই ঠিক আছে। কিন্তু সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পরিস্থিতি একটু খারাপ হয়েছে। দেখার বিষয় সামনের দিনগুলো কেমন থাকে।’
ইইউ’র সম্মিলিত রফতানি পরিসংখ্যান দেশভিত্তিক আলাদা করা হলে বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শীর্ষ রফতানিকারক হবে।
তুরস্ক এবং ভারত পঞ্চম এবং ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে, তারপরে রয়েছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও পাকিস্তান।