ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবায় হারিয়ে যাওয়া প্রায় ৩৫ বছর পর বাঘ প্রতিবন্ধী (বোবা) ছেলে রফিক মিয়া গ্রুপে নুরুল কাদের (৪৫) কে ফিরিয়ে পান পিতা জনৈক আলী আহাম্মদ। খুশিতে আত্মহারা হয়ে সেখান থেকে উদ্ধার করে আনার প্রায় তিন মাস পর রহস্যজনক কারণে সেই ছেলেকে আবার নিজের সন্তান বলে অস্বীকার করছেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের কায়েমপুর গ্রাম। এত বছর পর ফিরে পাওয়া জন্মদাতা পিতা মাতা ও স্বজনদের এখনো আচরণে শ্রী ও দুই সন্তান নিয়ে অসহায় অবস্থায় পিতার বাড়িতেই দিনাতিপাত করছে নুরুল কাদের। খুঁজে পাওয়া বোবা সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার এমন বিমাতাসুলভ আচরণে কতবার প্রতিবেশী ও গ্রামের লোকজন। প্রতিবেশীরা বলেছেন প্রথমে সন্তান ফিরে পেয়ে খুশি হলেও সম্পদের ভাগ দিতে হবে এমন চিন্তায় এবং অন্য সন্তানদের চাপে এমন আচরণ করছেন বাবা-মা ও ভাই-ভাবি। বাকপ্রতিবন্ধী নুরুল কাদেরের চাচা আবু সিদ্দিক জানান, প্রায় ৩৫ বছর আগে তার বড় ভাই আলী আহমেদের ছেলে তৎকালীন রফিক মিয়া নামে বর্তমানে নূরুল কাদের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামের চকরিয়া এলাকায় গিয়ে কান্নাকাটি করলে একটি পরিবারের তাকে পেয়ে বাড়ি নিয়ে যায় এবং লালন পালন করে। এক সময় তাকে বিবাহ করায়। তার ঔরষজাত দুটি সন্তানও রয়েছে। চাচা আবু সিদ্দিক আরো জানান; গত তিন মাস আগে কায়েমপুর এলাকার এক প্রবাসী চকরিয়ায় বেড়াতে গিয়ে তাকে দেখতে পায় পরে বাড়িতে জানালে তার বাবা-মা এবং আমি সহ বেশ কয়েকজন সেখানে গেলে সেও তার বাবা-মা চিনতে পারে এবং তার বাবা ও মা তার শরীরের কয়েকটি চিহ্ন দেখে নিশ্চিত হয় সেই তাহাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তান। পরে সেখানকার স্থানীয় চেয়ারম্যান ও তার পালিত স্বজনদের উপস্থিতিতে শেখান থেকে আনা হয় নুরুল কাদেরের স্ত্রী সন্তানসহ। গত দুই মাস ভালই ছিল তারা। সম্পত্তির ভাগ তাকে দিতে হবে ভেবে রহস্যজনক কারণে হঠাৎ করে তার বাবা, মা ও ভাবি বিভিন্ন তালবাহানা করে তাকে অস্বীকার করার নাটক করছে। নতুন করে সনাক্তকরণের জন্য
ডিএনএ টেস্টের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, এই বোবা ছেলেটি তাদেরই হারিয়ে যাওয়া সন্তান। সে বড় হলেও তার চেহারার তেমন পরিবর্তন হয়নি। আমরা তাকে ছোটবেলায় রেখেছি। ছেলেকে এনে সারা গ্রামে ঘুরে জানিয়েছেন তাদের হারানো সন্তানকে ফিরে পেয়েছেন। সন্তান ও নাতি-নাতনি পেয়ে বাড়িতে উৎসব করেছেন। গত ১ মাস ধরে তাদের অস্বীকার করছেন বাবা-মা। চট্টগ্রামের চকরিয়া এলাকার পালিত স্বজন কফিল উদ্দিনের সাথে মুঠোপনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান নুরুল কাদেরের প্রকৃত বাবা মা ও স্বজনরা এসে নিশ্চিত হয়ে তাকে বাড়ি নিয়ে যায় এবং আমিও গিয়েছিলাম সেখানে। তারা আমাকে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। এখন কেন তারা তাকে অস্বীকার করছে তা আমার বোধগম্য নয়। কায়েমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইখতিয়ার আলম রনি জানান, ফিরে পাওয়া বাকপ্রতিবন্ধী ছেলেটি তাদের সন্তান। এখন সম্পত্তির ভাগ দিতে হবে বিধায় প্রবাসী দুই ছেলে ও ছেলের বৌদের চাপে এখন তাদের সন্তান নয় বলে বেড়াচ্ছেন। পিতার এখনো আচরণে গ্রামের সুধী সমাজের চাপে বাধ্য হয়ে ডিএনএ টেস্টের জন্য বিজ্ঞ আদালতের নিকট আবেদন করেছেন প্রতিবন্ধী হতভাগ্য যুবক নুরুল কাদেরের বাবা আলী আহাম্মদ।
আলী আহম্মদ সাংবাদিকদের জানান ডিএনএ টেস্টে প্রমাণিত হলে তারা তাকে সন্তানের স্বীকৃতি দেবেন নতুবা আগের জায়গায় পাঠিয়ে দেবেন। কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, নুরুল কাদের এর বাবা আমার কাছে আসার পর ডিএনএ টেস্ট করার জন্য বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করতে বলেছিলাম। শুনেছি তিনি আবেদন করেছেন।