প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইউক্রেনে দেশটির যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য রাশিয়ার সবচেয়ে সিনিয়র জেনারেল ও চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে দায়িত্ব দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণের পর রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সিনিয়র কমান্ড পর্যায়ে এটিই সবচেয়ে নাটকীয় পরিবর্তন।
রাশিয়ার বেশ কয়েকজন জাতীয়তাবাদী যুদ্ধপন্থী ব্লগার, যারা যুদ্ধের সমালোচনা করতে ক্রেমলিনের প্রচ্ছন্ন অনুমতি পেয়েছেন, তারা যুদ্ধে ব্যর্থতার জন্য গেরাসিমভকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, গত ১৫ বছর আধুনিকায়ন ও নতুন সরঞ্জাম পাওয়া একটি পরাশক্তির সেনাবাহিনী হিসেবে কম শক্তির প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে আধিপত্য দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইউক্রেনে এবং পশ্চিমে, এমনকি রাশিয়ার ভেতরেও রুশ সেনাবাহিনীকে সাদাসিধে, দুর্বল প্রস্তুতির, সরঞ্জামায়িত, প্রতিক্রিয়া দেখাতে মন্থর এবং কমান্ড কাঠামোর ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
যুদ্ধের গতি রাশিয়ার পক্ষে আনতে অপরিকল্পিত সেনা সমাবেশ উদ্যোগে ব্যর্থতার পর বেশ কিছুদিন ধরে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল জনগণের সামনে প্রায় অদৃশ্য থাকা গেরাসিমভকে দূরে ঠেলে দেওয়া হতে পারে।
রুশ ভাড়াটে গোষ্ঠী ওয়াগনারের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন এবং চেচনিয়ার রুশ অংশের নেতা রমজান কাদিরভ সমালোচনা করেছেন গেরাসিমভের। তারা যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের সাফল্যের দাবি করছেন।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমর্থকরা বলছেন, যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়া প্রায়ই দুর্বল দক্ষতা দেখিয়েছে। রসদ, প্রযুক্তি ও শৃঙ্খলার মতো অনেক সমস্যা দশ মাস পরও বিরাজমান।
রণক্ষেত্রে এই পরিবর্তন কেমন প্রভাব ফেলবে?
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, বিশেষ সামরিক অভিযানে সিনিয়র কমান্ডারকে দায়িত্ব দেওয়া প্রমাণ করে এর পরিসরের বিস্তৃতি এবং সংগঠন ও শৃঙ্খলার উন্নতির গুরুত্ব।
গেরাসিমভের সহকারী হিসেবে থাকবেন জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন। তিন মাস আগে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সঙ্গে আছেন জেনারেল ওলেগ সালিউকভ, ও ডেপুটি চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ কর্নেল জেনারেল আলেক্সেই কিম।
কট্টরপন্থী সামরিক বিশেষজ্ঞ ইগোর করোচেঙ্কো মনে করেন, গেরাসিমভকে দায়িত্ব দেওয়ার ফলে ইউক্রেনে রণক্ষেত্রে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ বাড়িয়েছে।
নেপথ্য রাজনীতি?
গেরাসিমভকে সরাসরি কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে পুতিন হয়ত পশ্চিমাদের বার্তা দিতে চাইছেন যে, তিনি যেকোনও উপায়ে এই যুদ্ধ জিততে চান।
এক রুশ সামরিক ব্লগার লিখেছেন, এখন জেনারেল স্টাফ সরাসরি সবকিছুর জন্য দায়ী থাকবেন। জেনারেল সুরোভিকিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল কেন্দ্রে থাকবেন। কিন্তু তার অবস্থান খুব একটা ঝুঁকিপূর্ণ না।
আর. পলিটিক পর্যালোচনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা তাতিয়ানা স্টানোভায়া মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত যুদ্ধক্ষেত্রে খুব বড় কোনও পরিবর্তন আনবে না। তার মতে, গেরাসিমভকে কমান্ড তুলে দেওয়া হয়েছে সুরোভিকিনের গুরুতর ব্যর্থতার কারণে। পুতিন ব্যর্থতার বিরুদ্ধে কার্যকর কৌশল খুঁজছেন।
কে এই গেরাসিমভ?
২০১২ সালের ৯ নশ্বের জেনারেল স্টাফ প্রধান ও উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে গেরাসিমভকে দায়িত্ব দেন পুতিন। এর তিন দিন আগে সের্গেই শোইগুকে প্রতিরক্ষমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে পারমাণবিক হামলার নির্দেশ দেওয়ার যে তিনটি ব্রিফকেস রয়েছে সেগুলোর একটি করে বহন করেন পুতিন, শোইগু ও গেরাসিমভ।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন গেরাসিমভ। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে পট-পরিবর্তনকারী রুশ সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা ছিল।
ইউক্রেনে আক্রমণের একদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, ইউক্রেন যুদ্ধের পুতিন বাদে অপর যেসব ব্যক্তি সরাসরি দায়ী গেরাসিমভ তাদের একজন।
তবুও মাঝেমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জেনারেল মার্ক মাইলির কথা বলেন গেরাসিমভ।
১৯৫৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর কাজানে জন্ম এই রুশ জেনারেলের। মিলিটারি অ্যাকাডেমি অব দ্য জেনারেল স্টাফ থেকে ১৯৯৭ সালে স্নাতক পাস করে পদোন্নতি পেয়ে এই অবস্থানে পৌঁছেছেন তিনি। সূত্র: রয়টার্স।