ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া ) প্রতিনিধি ॥ যেদিকে চোখ যায় বিস্তীর্ণ হলুদের সমারোহ। যেন দিগন্ত ছুঁয়েছে সরিষার ফুলের হলুদ আভা। কসবায় শীতের সকালে কুয়াশাচ্ছন্ন হলদে ফুলের মনমাতানো মৌ-মৌ গন্ধ আর অপরূপ দৃশ্য আকৃষ্ট করে যে কাউকে । বিশেষ করে উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠের পর মাঠ সরিষার আবাদ হয়েছে। এখন সরিষার ফুল ধরার সময়। অপরূপ এ দৃশ্য দেখে কৃষকের মনে হচ্ছে যেন তাদের খেতে রাশি রাশি সোনা ছড়িয়ে রেখেছে। কসবা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়েছে সরিষার। তবে উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বাহাদুরপুর, ময়দাগঞ্জ, ডাবিরঘর, পুকুরপাড়, শ্যামনগর,সবচেয়ে বেশি সরিষার আবাদ করা হয়েছে।
যদি অনুকুল আবহাওয়া থাকে তাহলে সরিষার ফলন বেশি হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। তারা সরিষা ঘরে তুলেই ধান চাষের জন্য জমি তৈরি করতে শুরু করবেন। এখন এসব এলাকার চাষিরা সরিষার পরিচর্যা নিয়ে ব্যাপক সময় পার করছেন। জমে থেকে পাকা সরিষা সংগ্রহ করতে পারলেই কৃষকদের চিন্তা দূর হবে।
চলতি মৌসুমে পুরো উপজেলায় প্রায় ৩৯৬ এক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে সরিষার। আবহাওয়া অনুকূলে তারপরও দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনে দিন কাটাচ্ছে কৃষকরা।
গত মৌসুমের তুলনায় এবার অনেক বেশি সরিষার আবাদ হচ্ছে কসবা উপজেলা জুড়ে। কৃষকের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ হলেও বারি সরিষা ১৪, বারি সরিষা ১৭, বারি সরিষা ১৮, বিনা সরিষা ৪ এবং বিনা সরিষা ৯ জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
কসবা উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের এলাকায় কৃষক জালাল উদ্দিন জানান, জমি তৈরি করা থেকে ফলন ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় ৫ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদের তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে এসব জমি থেকে প্রায় ১৮ মন সরিষার ফলন পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।
তবে এবার বাজারদর বেশি পাওয়ার আশা করছেন অনেকেই। একাধিক কৃষক জানান, অন্যান্য ফসলের মতো সরিষা আবাদে তেমন শ্রমের প্রয়োজন হয় না। জমি থেকে পাকা সরিষা সংগ্রহ ও মাড়াই করে ফসল ঘরে তোলার জন্য পরিবারের পুরুষের পাশাপাশি নারী, বৃদ্ধ ও শিশু সদস্যরাও নিয়মিতভাবে কাজ করেন।
উপজেলা বিনআউটে ইউনিয়নের নিমতাবাদ গ্রামের কৃষক আব্দুল সালাম বলেন, অল্প খরচ ও অল্প সময়ের সরিষার ফলন করে তোলা যায়। ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় চলতি মৌসুমে সরিষার ফলনও হয়েছে বেশ। সরিষার বর্তমান বাজার দর প্রায় ১৮ শত টাকা।
তিনি আরো বলেন রোদে শুকিয়ে গুদামজাত করে পরে বিক্রি করতে পারলে সরিষার বাজার দর আরো বেশি পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাজেরা বেগম বলেন, চলতি বছরে কসবায় ৩৯৬ অ্যাক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে আবহাওয়া ভালো থাকলে সরিষার বাম্পার ফলন হবে পুরো কসবা উপজেলায় । বিঘা প্রতি মাত্র তিন চার হাজার টাকা খরচ হবে প্রায় পাঁচ মন করে সরিষার ফলন পাবেন চাষিরা। অল্প খরচে বেশি লাভবান হয়ে থাকবেন উপজেলায় বিভিন্ন এলাকার সরিষা চাষীরা।