বিএনপির পঙ্কিল পাঠাগার: তাজউদ্দীনকে আটক করেই সেনাপ্রধানের ব্যাজ পরে জিয়া, কে এম ওবায়দুর রহমানের কারণে আটক হন কামারুজ্জামান

বাআ॥ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান যেমন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের গণহারে হত্যা করেছে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠকদের হত্যার মাধ্যমেই ক্রমেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে সে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার অন্যতম কুশীলব যেমন তৎকালীন উপ-সেনাপ্রধান জিয়া, তেমনি ২৩ আগস্ট জাতীয় চার নেতাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে প্রথমে সেনাপ্রধানের পদে অধিষ্ঠিত হয় সে। ২০০৪ সালের ১৭ আগস্ট বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সেই বর্বরতা এবং হত্যার রাজনীতির ধারা বজায় রেখেছেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ও পুত্র তারেক রহমান।

২০০৪ সালের ১৬ এপ্রিল প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত জাতীয় চার নেতা হত্যার বিষয়ক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৫ আগস্ট সপরিবারের বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরের দিন মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের বাড়ি ঘিরে ফেলে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। আত্মস্বীকৃত খুনি মেজর ডালিম নিজে গিয়ে তাজউদ্দীনের গৃহবন্দিত্ব নিশ্চিত করে। জেল হত্যা মামলার সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি আদালতকে জানান, ১৬ আগস্ট রাত দেড়টার দিকে ডালিম তাদের বাড়িতে গিয়েছিল। পরে ২৩ আগস্ট পুলিশ এসে তার বাবা তাজউদ্দীন আহমদকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যায়।

৩ নভেম্বর জেলে মধ্যে তাদের হত্যার পর, এই ডালিমসহ অন্য খুনিদের বিদেশ কূটনৈতিক হিসেবে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে দেশের মধ্যে তাদের ব্যবসা করার সুযোগ এবং রাজনীতি করার সুযোগ দেন খালেদা জিয়া। এমনকি সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর দুই খুনিকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে সংসদে বসায় বিএনপি-জামায়াত জোট। ২০০১ সালে খালাদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর জেলহত্যা মামলার আসামি কারাবন্দি খায়রুজ্জামানকে মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রদূত করে বিদেশে পাঠানো হয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মরণোত্তর অবসর ভাতা দেওয়ার মতো নিকৃষ্ট ইতিহাসও রচনা করেছে বিএনপি সরকার।

সিমিন হোসেন রিমি আরো সাক্ষ্যতে আরো জানান- বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী এএইচএম কামারুজ্জামান ধানমন্ডির একটি বাড়িতে আত্মগোপনের সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু কে এম ওবায়দুর রহমান তাকে আশ্বাস দিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে আনে। এরপর তাকে গ্রেফতার করে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে খন্দকার মোশতাকের নির্দেশে ৩ নভেম্বর কারান্তরীণ অবস্থায় তাকেসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে জিয়াউর রহমানের বাহিনী। জেল হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিল কে এম ওবায়দুর রহমান। কিন্তু ২০০৪ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত সরকারে থাকার সময় তাকে খালাস দেওয়া হয়।

১৯৭৫ সালের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার পুরস্কার হিসেবে এই ওবায়দুর রহমানকে মন্ত্রী এবং বিএনপির মহাসচিব বানায় জিয়াউর রহমান। এর আগে, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের পদে থাকা অবস্থায় ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতির কারণে পদ হারাতে হয়েছিল তাকে। এরপর ক্ষমা চেয়ে ফের দলে ফিরলেও সুযোগ পেয়েই ঘাতকদের সাথে হাত মিলিয়ে আওয়ামী নেতাকর্মীদের টার্গেট করে নিধনযজ্ঞ চালাতে জিয়াউর রহমানের ডান হাত হয়ে ওঠে সে। বর্তমানে তার মেয়ে শামা ওবায়েদও একজন বিএনপি নেত্রী। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে দেশবিরোধী গুজব, অপপ্রচার এবং বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশবিরোধী অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে সে।

জেলহত্যা মামলার সাক্ষ্য থেকে ১৪ এপ্রিল প্রথম আলো পত্রিকা আরো জানায়- ২০০৪ সালে পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বে থাকা এবং পরবর্তীতে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা শমসের মবিন চৌধুরী জানান, ১৯৭৬ সালের এপ্রিল বা মে মাসে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী তাকে একটি তালিকা দেন এবং বলেন তালিকার সেনাকর্মকর্তাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তালিকার সদস্যরা (বঙ্গবন্ধু ও চার নেতার খুনিরা) ছিল লিবিয়াতে, সেখানেই তাদের নিয়োগপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়। নুর ও ডালিম লন্ডনে থাকায় তাদের নিয়োগপত্র লন্ডনে পৌঁছে দেওয়া হয়। মূলত সেনাপ্রধান হিসেবে জিয়াউর রহমানই তখন রাষ্ট্র পরিচালনা করছিল। তার নির্দেশেই এই খুনিদের পুর্নবাসন করা হয়েছিল।

এদিকে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকার সশয় এই খুনিরা অবাধে দেশে যাতায়াত করতে থাকে। এমনকি ২০০৪ সালে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড মেরে হত্যাচেষ্টার সময়ও ঢাকায় খালেদা জিয়ার আশীর্বাদপুষ্ট হিসেবে অবস্থায় অবস্থান করছিল খুনি নুর। হত্যার মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর দ্রুত দেশত্যাগ করে সে। এছাড়াও মাঠে থেকে এই হামলা পরিচালনাকারী মাওলানা তাজউদ্দীনকে সরকারি চ্যানেল ব্যবহার করে নিরাপদে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয় হামলার মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমান। এরপর খালেদা জিয়া ও বিএনপি নেতারা এই হামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য জজমিয়া নাটক সাজায়। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিরপেক্ষ তদন্তে জজ মিয়া নাটকের অবসান ঘটে এবং হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে তারেক রহমানসহ শীর্ষ বিএনপি নেতাদের নাম উঠে আসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.