প্রশান্তি ডেক্স\ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতা শহীদ আসাদ (আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান)। পুলিশের গুলিতে আসাদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তৎকালীন ছাত্র-জনতার মাঝে মারাত্মক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের নামফলক বদলে শহীদ আসাদের নামে করা হয়। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার প্রবেশমুখে আইয়ুব গেটের নাম বদলে আসাদ গেট করা হয়। পরবর্তী সময়ে সেই স্থানে শহীদ আসাদ স্মরণে তৈরি করা হয় তোরণ। তবে সেই তোরণ এখন বেহাল।
গত মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সরেজমিন দেখা যায়, শহীদ আসাদ গেট তোরণটি ছেয়ে গেছে পোস্টারে। খসে পড়েছে টাইলস। ময়লা জমে আছে তোরণের ওপরে এবং আশপাশে। আসাদের প্রতিকৃতিতে জমেছে ময়লার আস্তরণ। দেখে বোঝার উপায় নেই—এটি দেশের এক সূর্য সন্তানের। পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে গেট সংলগ্ন সড়কটিতেই শুধু টিকে আছে আসাদের নাম।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর ২০ ফেব্রুয়ারি শহীদ আসাদ দিবস আসলেই স্মৃতি ফলকটি ধোয়ামোছার কাজ করা হয়। আয়োজন করা হয় সমাবেশ। তবে বছরের পর বছর পাড় হলেও করা হয় না কোনও সংস্কার, নেওয়া হয় না তোরণে পোস্টার লাগানো বন্ধের ব্যবস্থা।
কথা হয় ঢাকা উদ্যানের স্থানীয় বাসিন্দা সেলিনা আক্তার শেফালীর সঙ্গে। তিনি আসাদ গেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাসের অপেক্ষায়। সঙ্গে তার ৮ম শ্রেণিতে পড়া ছেলে সাহির হাওলাদার। প্রায় বিশ বছর ধরেই মোহাম্মদপুর বসবাস করছেন। প্রতিনিয়তই ব্যবহার করেন আসাদ গেটের এই সড়কটি। আসাদ গেটকে কেবলই একটি সড়কের নাম হিসেবেই এতদিন জানতেন তিনি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন রোডেরই তো নাম থাকে। তেমনই আসাদ গেট এই রোডের নাম ভেবেছিলাম। কিন্তু কে এই আসাদ তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা নেই। আর আসাদ যে বিশেষ কেউ তা কী এই ধরনের ভাঙাচোরা স্মৃতিফলক দেখলে বোঝা যায়?
শহীদ আসাদ সম্পর্কে জানে না তার সন্তানও। মা-ছেলের অভিমত—যদি আসাদ গেটকে বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা হয় এবং সড়কের পাশে শহীদ আসাদ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয় তাহলে অনেকেই শহীদ আসাদ সম্পর্কে জানতে পারবেন।
স্মৃতিফলকে ছোট এক লাইনে শহীদ আসাদ সম্পর্কে লেখা ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত হন শহীদ আসাদুজ্জামান। সে থেকে ছাত্রজনতা এই স্থানের নামকরণ করেন আসাদ গেট’। এ ছাড়া বিস্তারিত কিছু লেখা নেই।
শহীদ আসাদ সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা থাকলে স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরু থেকে ছাত্রদের অবদান সম্পর্কে সকলে জানতে পারবে মন্তব্য করে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাইফুদ্দিন বলেন, ‘আসাদ গেট নিয়ে আমিও বিস্তারিত জানি না। কেবল এইটুকু জানি দেশের জন্য তাঁর অবদান আছে।’
শহীদ আসাদ সম্পর্কে জানানো হলে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের গৌরবময় ইতিহাস এইভাবে অযত্নে পড়ে থাকলে কেউই তো মূল্যায়ন করবে না। সবাইকে জানাতে হলে এইখানে শহীদ আসাদ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে হবে।’
আসাদ গেটের তোরণটি ঢাকা জেলার অর্থায়নে নির্মিত হয়। এর রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ঢাকা জেলার নির্বাহী পরিচালক মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আসাদ গেটের তোরণটি ঢাকা জেলার অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে, কিন্তু এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এখন সিটি করপোরেশনের। তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।’ এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনে যোগাযোগ করা হলেও কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আসাদ। তার এই মৃত্যুতে সরকারবিরোধী আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং যা পরবর্তী স্বাধীনতার সংগ্রামকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তোলে।