প্রশান্তি ডেক্স\ রাজধানীর হাজারীবাগে অবস্থিত কাজিরবাগ জামে মসজিদ। বাইরে ও অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় আর দশটা মসজিদের মতোই, এলাকাবাসী নিয়মিত নামাজ আদায় করেন মসজিদটিতে। তবে এলাকাবাসী ও মসজিদ কমিটির ভিন্ন এক উদ্যোগ আলাদা করেছে এটিকে। মসজিদে ঢুকলে চোখে পড়বে একটি সাদা বোর্ড যেখানে মার্কার কলম দিয়ে লেখা মসজিদের আয়-ব্যায়ের হিসাব।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৭৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মসজিদটি। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত মসজিদটি মাটির থাকলেও পরে পাকা করা হয়। বর্তমানে চলছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার নির্মাণ কাজ। তবে বিগত দুইবছর ধরে মসজিদের আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতার স্বার্থে ব্যবস্থা করা হয়েছে হোয়াইট বোর্ডের।
মসজিদের খাদেম নূর আলম খান জানান, মসজিদটিতে প্রতি মাসের হিসাব মুসল্লিদের অবগতির জন্য সাদা বোর্ডে প্রকাশ করা হয়। সর্বশেষ অক্টোবর মাসের হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে। এখন নভেম্বরেরটা প্রকাশের কাজ চলছে। প্রতি মাসের হিসাব প্রকাশের পর তা মসজিদে টাঙিয়ে রাখা হয়। মুসল্লিরা সহজেই জানতে পারেন কোন খাতে কত টাকা ব্যয় হচ্ছে মসজিদের বা আয় হচ্ছে।
মসজিদের ব্যয়ের এসব হিসাবের মধ্যে ইমাম-মুয়াজ্জিন-খাদেমের বেতন থেকে বিদুৎ-পানি বিল, মসজিদের খাদেমের সংশ্লিষ্ট কাজে যাতায়াত ব্যয়, উন্নয়ন-মেরামত রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ইত্যাদি। আয়ের হিসাবেও ওয়াক্ত নামাজের সময় পাওয়া অনুদান, জুম্মার নামাজের পর পাওয়া দান, মসজিদের বাইরের দান বাক্স, বাড়ি ভাড়া, দোকান ভাড়াসহ প্রতিটি খাত থেকে আয় লেখা হয় আলাদা আলাদাভাবে।
মসজিদের মুসল্লিরা জানান, এলাকার পঞ্চায়েতে ৫০০ বাড়ি আছে, বর্তমানে মসজিদের ঊর্ধ্বমুখি উন্নয়ন কাজ চলছে৷ অন্যান্য মসজিদে জুম্মার নামাজে মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব ঘোষণা করা হয়। তবে মুসল্লিদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত তা জানতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে মনোমালিন্য, ভুল বোঝাবুঝির তৈরিও হয়। সেই জায়গা থেকে স্বচ্ছতা রাখতে প্রকাশ্যে আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখার এই উদ্যোগ। যে যে ওয়াক্তে নামাজে আসবে আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ষাটোর্ধ্ব আব্দুর রহিম জানান, ‘সব মসজিদেই এটি ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়। তারপরও মসজিদের মতো একটা পবিত্র জায়গায় আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে ঝগড়া বাঁধে। এলাকাবাসীর মধ্যে এধরণের বিষয়ে নিয়ে বিবাদ খারাপ দেখায়। আমাদের মসজিদে এভাবে লিখে দেওয়া হয়। আমরা মসজিদে দান করছি, টাকাটা কোথায় যাচ্ছে, কীভাবে যাচ্ছে ভালোভাবে দেখতে পারছি। মসজিদে ঘোষণা দিলে তো এত সুন্দরভাবে বোঝা যায় না।’
অপর মুসল্লি হাসানুজ্জামান বলেন, ‘সবকিছুতেই স্বচ্ছতা দরকার। তার ওপর এটি মসজিদের বিষয়। এভাবে প্রকাশ্যে থাকায়, মুসল্লিরা দেখতে পারে কোথায় কত টাকা খরচ হচ্ছে, সব ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, গড়মিল হচ্ছে কিনা। মসজিদ কমিটিরও দায়বদ্ধতা কাজ করে।’
মসজিদ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে ৫০০টা বাড়ি আছে। সবার মতামতে ৩০ সদস্যের কমিটি করা হয়। জুম্মার নামাজে ঘোষণা করা হলেও সবাইতো আর মসজিদে সবদিন থাকতে পারেন না। যিনি যেই ওয়াক্তে আসতে পারেন, হিসাব দেখে নেন। গত ২ বছর ধরে আমরা এভাবে প্রকাশ্যে আয়-ব্যয়ের হিসাব দিচ্ছি। মুসল্লিদের কোনও অভিযোগ নেই। কারণ সব তাদের চোখের সামনেই হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় সব মসজিদেই এভাবে আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা উচিৎ। এভাবে হলে হিসাবের স্বচ্ছতা থাকবে। এলাকাবাসী ও মুসল্লিদের মধ্যে সম্প্রীতি থাকবে।’