ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি॥ কসবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ড. আইউবুর রহমান স্মরণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বাদৈর ইউনিয়নের মান্দারপুর গ্রামে বিনামূল্যে ছয় শতাধিক রোগীকে চক্ষু চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বসুন্ধরা আই হাসপাতাল এবং ঢাকাস্থ মান্দারপুর সমিতির যৌথ উদ্যোগে ওই গ্রামের স্থাপিত মা আমেনা গফুর হাসপাতালে সব রোগীদের চক্ষুসেবা ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়।
বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা: মজুমদার গোলাম রাব্বী, প্রফেসর ফয়জুল ইসলাম, অপটোমেট্রিস্ট গাজী রিয়াজ রহমানসহ আটজনের জনের একটি দল বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। এ সময় ঢাকাস্থ মান্দারপুর সমিতির উপদেষ্টা এম এ কাইয়ুম সরকার, মান্দারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান, জেলা পরিষদের সদস্য রোমানুল ফেরদৌসি, বাদৈর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শিপন আহম্মেদ ভূইয়া, আরিফুল ইসলাম ভূইয়া সোহাগসহ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।
ভিশন কেয়ার ফাউন্ডেশনের মানবসম্পদ বিভাগের সদস্য মো: আবু তৈয়ব জানান, ছয়শত রোগীর নাম আগে থেকেই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার তিনটা নাগাদ প্রায় ৬০জন রোগীকে অপারেশনের জন্য বাছাই করা হয়।
প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে অনেককে ব্যবস্থাপত্রের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে বাছাই করা রোগীদের বিনা মূল্যে অস্ত্রোপচার (অপারেশন) করবে বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট।
সরেজমিন দেখা যায়, বিনামূল্যে চক্ষু সেবার খবর পেয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামের লোকজন আসতে শুরু করেছে। লাইন ধরে টিকেট কেটে ডাক্তার দেখাচ্ছে। তাদের মধ্যে বেশীর ভাগই বয়স্ক রোগী। তাদের সহায়তা করছে মান্দারপুর সরকার বাড়ি প্রজন্ম তরুণ সংঘ নামে একটি সামাজিক সংগঠন।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা গনি মিয়া নামে ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ বলেন, আগে কৃষি কাজ করতাম। এখন বয়সের ভারে কিছু করতে পারি না। সারা শরীরে রোগে বাসা বেঁধেছে। প্রায় দুই মাস ধরে চোখে অনেক সমস্যা। দুই চোখ দিয়ে শুধু ঝাপসা দেখছি। বিনামূল্যে চিকিৎসার খবর পেয়ে এখানে এসে ফ্রি চিকিৎসা (নিছি) নিয়েছি। পরীক্ষা করার পর বলছে ছানি অপারেশন করাই দিব।
সখিনা বেগম প্রশান্তি প্রতিনিধিকে বলেন, স্বামী মারা গেছে ছয় বছর হয়েছে। টাকার (টেহার) লাইগ্গা ডাক্তার দেখাইতে পারি না। বসুন্ধরার হসপিটালের মাধ্যমে চিকিৎসা নিছি। আল্লাহ্ মিলাই দিছে। আমরার মত গরীব মানুষরা ফ্রি চিকিৎসা ছাড়া তো কোন উপায় নাই।
মান্দারপুর গ্রামের প্রবীণ বৃদ্ধ সিদ্দিকুর রহমান প্রশান্তি প্রতিনিধিকে বলেন, এক সময় টাকা পয়সা ছিল। এখন আমার অবস্থা খুবই শোচনীয়। আয় রোজগার নাই। ৭/৮ বছর ধরে চোখে সমস্যা। পাঁচ মাস ধরে সমস্যা আরো বেড়ে গেছে। এক চোখ তো অন্ধ আরেকটা চোখে ঝাপসা দেখি। গ্রামের লোকজনের মাধ্যমে শুনতে পারি বিনামূল্য চোখের চিকিৎসা করাই। অনেক উপকার পাব।
বৃদ্ধা রাবিয়া খাতুন বলেন, দুই ছেলে থাকলেও আমার দেখভাল করে না। গ্রামবাসী আমাকে সাহায্য সহযোগীতায় কোনভাবে চলি। গতবার আমার চোখের চিকিৎসা করাইছি। এবারও আসছি ছানি অপারেশন করার জন্য। আমরা গরীব মানুষ চিকিৎসা করানোর এত টেহা তো আমাদের কাছে নাই।