অর্জন ও বিসর্জন এবং আন্দাজনির্ভর কথা

বর্তমানে আন্দাজ নির্ভর কথায় কান দেয়া লোকের সংখ্যা এখন বেশী। কারণ ঐ আন্দাজ নির্ভর লোকগুলো মিডিয়ায় সরব। এই মিডিয়ায় বর্তমানে নেতিবাচকতা এবং আন্দাজনির্ভর কথাবার্তা ও সংবাদের গুজবে মাতোয়ারা দর্শক। ইতিবাচক ও সত্যের অনুসন্ধানে বের হওয়া তেতোর স্বাধ কেউ নিতে আগ্রহী নয়। বরং মিথ্যাকে সত্যের আলোকে চালিয়ে দেয়া এমনকি প্রতিষ্ঠিত করেদিতে মিডয়া প্রধান ভুমিকা ও নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তবে সঠিক পরিবেশনায় এবং গুনগত অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকা মিডিয়াগুলো হিমশীম খাচ্ছে ক্ষমতা ও অর্থ এবং নেতিবাচকতার কাছে। ধরাশায়ী হচ্ছে অন্ধকারের কীটদের প্রকাশ্য শক্তির কাছে; শর্য্যাশায়ী হয়ে জীবনের যবনীকাপাত’র ইটি টানছে পর্দার আড়ালে। এই হল হতাশার কথা এবং সত্যের দন্ডায়মান অবস্থা।

অপরদিকে এই মিডিয়ার কল্যাণেই মানুষ জানতে পারছে সত্য ও মিথ্যার ফারাক। তবে যাচাই বাছাই করার সময় ও সুযোগ বর্তমানে সূদূর অতীত। মানুষ এখন এতই ব্যস্ত যে কোন কিছু পরখ করার সময় খুজে পাচ্ছে না; তবে সামনে যা দেখছে বা শুনছে অথবা পড়ছে তাই বিশ্বাস করছে অথবা আস্থায় নিয়ে সামনে এগুচ্ছে, কখনো কখনো দৃষ্টান্ত দিচ্ছে এমনকি অন্যকে সন্দেহ করছে অথবা বিরুদ্ধে অবস্থান করছে। এই হল হালচাল; তবে মানুষের চৈতন্য ফিরে পেতে এই মিডিয়া দ্বারাই মানুষকে ইতিবাচক ও সত্যের প্রতি আসক্তি বাড়াতে হবে। তবে যুগের চাহিদায় সময়ের প্রয়োজনে মিডিয়াকে গতানুগতিক না করে চাহিদার যোগানে উপযুক্ত করে ব্যবহার অত্যাসন্ন। তবে কেউ কেউ মিডিয়াকে দোষারূপ করছেন আবার মিডিয়ার কনটেন্ট প্রস্তুতকারীদেরও দোষারূপ করছেন; আবার কেউ কেউ ধর্মীয় আবরণেও বিভিন্ন বক্তব্যের আলোকে দোষারূপ করে যাচ্ছেন। কিন্তু কথা হলো প্রয়োজনীয় এবং আগামীর ভাবনা আর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহীতা এমনকি যাবতীয় মূল্যবোধ সম্বলিত কর্মকান্ড আনন্দ, শিক্ষা, সমালোচনা এবং মানুষিক প্রশান্তির প্রয়োজন আর সচেতনতার ব্যবহার; আগামীর ইতিবাচক প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা স্বচ্ছ কাচের আয়নার ন্যায় প্রস্ফুটিত করুন। জনগণ সকল কিছুই গ্রহণ এবং বর্জনে আপনার ভুমিকা গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।

সকল অর্জনের সঙ্গে বিসর্জনও রয়েছে। তবে ভালকিছু অর্জনে খারাপ কিছু বিসর্জন দিতে হয়; হয়েছেও বটে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে এই বিসর্জনের ভুমিকা অপ্রতুল। আমরা বিসর্জন দিতে অপারগতা প্রকাশ করি কিন্তু প্রকারান্তরে বিসর্জন দেয়া হচ্ছে। তবে সকল বিসর্জনে সফলতা আসলেও কিন্তু একমাত্য মূল্যবোধ বিসর্জনে বিফলতা আসে। মূল্যবোধ বিসর্জনে সাময়িক সফলতায় বিফলতার পাল্লা ভারী হয়ে জীবনের সকল স্তরে অন্ধকার নেমে আসে আর সেই অন্ধকার স্থায়ী জীবন পরকালে স্থায়ীরূপ লাভ করে। তবে এই পৃথিবীতেও অন্ধকারের যন্ত্রণা ভোগ করে যেতে হয় এবং হয়েছে ও হবে। আমাদের জীবনে এই বিসর্জনের তালিকা দীর্ঘায়ীত করতে হবে এবং এই বিসর্জনকে মূল্যবোধ দিয়ে আলিঙ্গন করে আগামীর তরে সাজিয়ে একে একে বিদায় করতে হবে। তবেই প্রকৃত শান্তি, স্থিতিশীলতা, নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা এবং আগামীর অভয়ারণ্যে পরিণত হবে আমাদের স্ব স্ব মাতৃভূমি। আমাদের সকল অর্জনগুলোই একে একে প্রকাশিত হবে, প্রশংসিত হয়ে আশা ও দিশার আলো প্রজ্জ্বলিত করবে। দৃষ্টান্ত হিসেবে স্বীকৃতি পাবে এবং স্থায়ী ও নিশ্চিত নিশ্চয়তার গন্তব্য হিসেবে এই দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি ও সৃষ্টির সকলেই উপভোগ্য এক নৈসর্গিক অবস্থানে বেহেস্তের পূর্বাভাস হাতছানি দিয়ে ভাসমান থেকে সকলকে শান্তির আবরণে আবদ্ধ করে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যের বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখবে।

সদ্য বাংলাদেশের একটি অর্জন দুটি বছরের জন্য শিকলাবদ্ধ হয়েছে। এই অর্জনটুকু বিসর্জনের পর্যায়ে অবতীর্ণ হয়েছে। ভাল ও মন্দ দুটোই এই বিসর্জনে নিহিত রয়েছে তবে এপিকটাকে এই শিকলাবদ্ধ অবস্থা থেকে বের করতে কাজ করে আমাদেরই আনতে হবে। এই ক্ষেতে যে সকল নেতিবাচক প্রতিবন্ধকতা এবং বিসর্জনের তালিকার বিসর্জনগুলো বিসর্জিত হয়নি সেইগুলোকে সম্মিলিতভাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নিরীহে ঐক্যবদ্ধ ইতিবাচক ও মূল্যবোধের ব্যবহারে শিকলাবদ্ধ অবস্থা থেকে উন্মুক্ত অবস্থানে বের করে নিয়ে এসে পূর্বের তুলনায় আরো গতিশীলতা দিয়ে জনবান্ধব করে সকলের জন্য দৃশ্যমান ও উন্মুক্ত রাখার প্রয়াস মিডিয়ার মাধ্যমে দৃষ্টিসীমায় রাখতে হবে। এখনই একটি তালিকা করতে হবে যে, আর কি কি ইতিবাচক অর্জন বিসর্জনের বা শিকলাবদ্ধের পর্যায়ে রয়েছে এবং সেই মোতাবেক ইতিবাচক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে সফলতার অর্জনে পরিণত করতে হবে। আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, পরিবার, অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজ এবং মাদ্রাসা, মক্তব, মসজিদসহ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সকল সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও সেবা সংশ্লিষ্ট ব্যবসাগুলোকে ইতিবাচক এবং মূল্যবোধে সাজিয়ে অনন্য এক দৃষ্টান্তে পরিণত করতে হবে।

আরো একটি কথা না বললেই নই যে, আগাম কথা বলা, লেখা এমনকি সংসবাদ মাধ্যমে প্রচার আর স্যোসাল মিডিয়ার রূপকথার ভাইরাল উপলক্ষগুলোকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোর দায়িত্ব এখন আমার আর আপনার এবং আপনাদের সকলের। এইক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ ব্যবস্থার দ্বার উন্মোচন করা জরুরী। সকল বিষয়ের নেতিবাচক প্রভাব বিদূরভীত করাও এখন মিডিয়ারই কাজ এবং দায় ও দায়িত্ব। গত কিছুদিন ছিল উপনির্বাচন নিয়ে মিডিয়া ট্রায়াল এবং মুখরোচক টালমাটাল বক্তব্য। যা দেখে হতভম্ব হওয়া ছাড়া আর কিইবা থাকতে পারে। তবে এখন আবার ঐ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আর এটা নিয়েও কম যায়নি মিডিয়া। কেউ কেউ আগাম রাষ্ট্রপতিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেলেছেন আবার কেউ কেউ রাষ্ট্রপতি এবং স্পীকার নিবর্চানের অঘোষিত ফলাফলও প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বাস্তব হলো ঐ সকল মিডিয়া আওয়াজ অনুমান বা আন্দাজ নির্ভর অথবা নিজেকে জাহির করার একটি মাধ্যম। অপর দিকে এও বলা যায় এর মাধ্যমে উত্তেজনা, মনোমালিন্য এবং বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের উদয় হয়। এইক্ষেত্রে বলা যায় গ্রাম্য কথন-“ঠেডা পরে হাস মরল আর ফকিরের ফকিরালী জাহির হইল।” যদি কোন কোন ব্যক্তির উক্তি বা বক্তব্য এমনকি লিখনি বা প্রচার মিলে যায় বা ফলে যায় তখন তিনি হবেন মহাগুরু। মানুষ তার কাছে ছোটাছোট করবে বা ধর্না দিবে। এই ভেবেই স্বপ্নবিভোর মানুষজন মিডিয়াকে নিজের আখের গোছানোর কাছে সাজিয়ে গুজিয়ে ব্যবহার করছে। তাই আমাদেরকে সাবধান হতে হবে, পরিবর্তন হতে হবে এমনকি সজাক দৃষ্টি নির্বন্ধ রাখতে হবে। মিডিয়ায় আবার দৃ:খের সংবাদও প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়ে বর্তমানে দৃশ্যমান রয়েছে, সদ্য তুরক্স ও সিরিয়ার ভিভিষিকাময় ভুমীকম্পে সৃষ্ট তান্ডব এবং ইউক্রেইন ও রাশিয়ার ভয়াভহতম মরনঘাতী আক্রমন। এই সবই আমাদের উপার্জনের এবং অর্জনের উপলক্ষ মাত্র। তাই উপার্জন ও অর্জন এবং উপলক্ষ্য থেকে বের হয়ে এসে মানবিক এবং মূল্যবোধে জাগ্রত হয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেতন হই এবং নিজেদেরকে ইতিবাচক পরিবর্তন করি। স্যোসাল মিডিয়ার যে কোন মাধ্যমের লিখা, প্রচার ও প্রকাশ পরীক্ষা নিরীক্ষা অথবা যাচাই বাছাই করে দেখে শুনে এমনকি বুঝে এগুতে হবে। নতুবা নতুন নতুন বিপদের সমূহ সম্ভাবনা আগামীর পথকে বাধাগ্রস্থ করবে। মিডিয়ার মুখ বন্ধ করা নয় বরং ইতিবাচক প্রকাশ ও প্রচার এবং লিখনে সহযোগীতার দ্বার উন্মোচন করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাহলেই ইতিবাচকতার ধারাবাহিক চাপ ও গতিতে নেতিবাচকতা পরাভূত হবে। আইন দ্বারা কলম, মুখ এবং ইচ্ছাশক্তিকে বন্ধ করা বা দমানো যায় না। তাই অশি ও মশির তর্ক বিতর্কের কথা চিন্তা করে আগামীর সকল পদক্ষেপ নিয়ে সামনে এগুতে হবে। সকল মিডিয়ার দ্বার উন্মুক্ত এবং সকল নেতি ও ইতিবাচকতার দ্বার উন্মুক্ত রেখে ইতিবাচকতাকে এগিয়ে নিতে হবে এবং নেতিবাচকতাকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের সকল কর্মকান্ডকে এগিয়ে নেয়ার হাতিয়ারগুলোকে অশি ও মশিতে যৌক্তিক ও সময়োচিতভাবে ব্যবহারের চর্চা অব্যাহত রেখে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সরকার এবং বিরোধীপক্ষ ও জনগণ এর ত্রৈমাত্রিক সমীকরণের সম্মীলন একীভুত করনে কাজ করতে হবে। আগামীর জন্য ঐক্যবদ্ধতা এবং ঐ তিনের ঐক্য জরুরী। এই ঐক্যই পারে আগামীর স্বর্গীয় পৃথিবীর দ্বার উন্মোচন করে অর্জন বা বিসর্জন ও আন্দাজ নির্ভরতাকে সময়োচিত জবাব দিতে। আসুন আমরা স্ব স্ব অবস্থানে থেকে সকলে সকলকে সহযোগীতা এবং সহমর্মীতায় আলিঙ্গনে আবদ্ধ হই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.