প্রশান্তি ডেক্স॥ বিচারকদের সঙ্গে আইনজীবীদের বিরোধের জেরে দ্বিতীয় দফায় গত বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দ্বিতীয় দিনের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বিচারপ্রার্থী ও স্বজনরা। এ অবস্থায় আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন জেলখানা থেকে আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীরা। আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আইনজীবীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এ সময় বিচারপ্রার্থীরা কারাগারে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রিজন ভ্যানে করে জেল খানা থেকে আদালতে আসেন অন্তত শতাধিক বিচারপ্রার্থী। আদালতে আইনজীবী না থাকায় বিচার কাজ বন্ধ ছিল। বিচার না পেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আখাউড়া উপজেলার রুবেল মিয়া।
তিনি প্রিজন ভ্যানের ভেতর থেকে চিৎকার করে বলেন, বিচার যেহেতু পাইনি তাই জেলখানার ভেতরে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করবো।
তিনি জানান, গত তিন মাস ধরে ডাকাতির প্রস্ততির মিথ্যা মামলায় বিনা বিচারে জেলখানায় কাটাচ্ছেন। আদালতে এসে আইনজীবী পাচ্ছেন না তাই ন্যায় বিচারও পাচ্ছেন না। তাই আত্মহত্যার হুমকি দেন। পাশাপাশি রুবেল তার এলাকার সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে এর প্রতিকার চান।
রবিউল নামে আরেক বিচারপ্রার্থী বলেন, আমরা মামলা দুই দিনেই জামিন হওয়ার কথা। কিন্তু কোর্ট বন্ধ থাকার কারণে দুই মাস ধরে জেল খাটতে হচ্ছে। আমার দাদু মারা গেছে দুই দিন আগে তাও জামিন পাচ্ছি না। আমাদের কী অপরাধ? আমরা চাই, দ্রুত যেন কোর্ট চালু হয়।
শুধু রুবেল, রবিউল নয় অন্যান্য বিচারপ্রার্থীরাও আদালতে এসে বিচার না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তারা প্রিজন ভ্যানের ভেতর আইনজীবীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
এদিকে, বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে একমত পোষণ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাদের স্বজনরা। লতা আক্তার নামে একজন বলেন, আইনজীবী ও জজের মধ্যে ঝামেলার কারণে আমার স্বামী আজকে দেড়মাস ধরে জেল খাটছে। আদালতে হাজির করা হলেও আইনজীবী না থাকায় তার জামিন করাতে পারছি না। আমরাও বার বার আদালতে এসে ফিরে যাচ্ছি। আমরা চাই দ্রুত যেন এই সমস্যার সমাধান করা হয়।
সদর উপজেলার সুলতানপুর থেকে আসা নাঈমা বেগম বলেন, আমার ভাইকে একটি মামলায় দুই মাস আগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর থেকে আদালতে সমস্যা থাকার কারণে আমরা ভাইকে জামিন করাতে পারছি না। আমরা চাই দ্রুত যেন প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী এই সমস্যার সমাধান করে দেয়। কোর্ট যেন দ্রুত চালু হয়। কোর্ট চালু হলে আমার ভাইয়ের জামিন করাতে পারবো।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে হেফাজতে ইসলামীর ঘটনায় মামলায় আসামি হীরার মা শাহানা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে জামিন করাতে পারছি না। উকিলের কাছে গেলে বলে যে তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা আদালতে যাবে না। আর জজের কাছে গেলে বলে যে ওনারা কোর্ট খুলে বসে আছেন, কিন্তু আইনজীবী আদালতে আসে না। আইনজীবী ছাড়া জামিন হবে না। আমরা এখন এই সমস্যায় আছি।
এদিকে আদালতের চলমান অবস্থা নিয়ে বিব্রত হওয়ার কথা জানিয়ে আদালত পরিদর্শক বলেন, আইনজীবী ও বিচারকদের মধ্যে ঝামেলার কারণে আমরা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে আছি। আদালত সূত্র জানায়, প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১৫ হাজার বিচারপ্রার্থী ও তাদের স্বজনেরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোট ২৩টি আদালতে আদালতে বিচার সংক্রান্ত কাজে আসেন।