কসবায় সূর্যমুখী ফুল চাষে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি\ ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখী ফুল চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় কম খরচে আর স্বল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় খুশি চাষিরা। আর সূর্যমুখী ফুল চাষে সহযোগিতা করছে উপজেলা কৃষি অফিস।

বিস্তীর্ণ সূর্যমুখী ফুলের হলদে ভাব দৃশ্যটি যে কারো মনকে আকৃষ্ট করে তোলে অনায়াসে, তাইতো প্রতিনিয়ত পর্যটকরা ভিড় করছে হলদে রানীর রাজ্যে। সারি সারি সূর্যমুখী গাছের ডগায় বড় বড় আকারের ফুল, যেন দিগন্তজুড়ে হলুদের সমারোহ। সকাল গড়িয়ে বিকেলে যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছে ঠিক তখনই কসবায় সূর্যমুখী বাগান গুলি  সৌন্দর্য যেন ফুটে উঠে সূর্যমুখীর হাসিতে। মৃদু রোদে দূর থেকে মনে হয় যেন সূর্যের মেলা বসেছে। পুরো কসবায়  যেন বইছে সূর্যমুখীর সু – বাতাস। সূর্যমুখীর অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন পর্যটকরা ভীড়। সূর্যমুখী ফুলের  অপরূপ দৃশ্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। চারদিকে হলুদ ফুলের মন মাতানো ঘ্রান আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের ফসলি জমি।  সূর্যমুখী ফুল মানুষকে শুধু আনন্দই দেয়না। মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মেটাতে তেল হিসাবেও ব্যবহার হচ্ছে। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেল  উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকার সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের প্রণোদনাসহ উৎসাহ দিচ্ছে। চাষিরা বলেন, সূর্যমুখী চাষ করার পদ্ধতি মোটামুটি সহজ। প্রতি বিঘা জমিতে তিন কেজি বীজ, সামান্য সার ও কীটনাশক হলেই পর্যাপ্ত। সবকিছু মিলিয়ে খরচ হয় ২/৩  হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে কৃষকের লাভ খুবই ভালো হয়। তাই দিন দিন এ চাষের প্রতি কৃষকরা ঝুঁকছেন বেশি।

উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের মনকাশাইর গ্রাম থেকে সূর্যমুখীর বাগান দেখতে আসা পর্যটক সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, পড়ন্ত বিকেলে সূর্যমুখীর হাসি সত্যিই অসাধারণ। সূর্যমুখীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আমরা এসেছি। তেলবীজ হিসেবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ যেন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকারি সহায়তায় অল্প ব্যয়ে প্রচুর লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের আগ্রহের যেন শেষ নেই।

প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী চাষ করা তাজুল ইসলাম বলেন, আমি প্রায় দুই বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। ফলনও খুবই ভাল হয়েছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সূর্যমুখী চাষ আরোও সম্প্রসারণ করব। সরকারের কাছ থেকে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে পরামর্শের পাশাপাশি বিনামূল্যে বীজ পেয়েছি।

সূর্যমুখী চাষীরা বলেন, সূর্যমুখী বাগান দেখতে আসা অনেক পর্যটক সূর্যমুখী ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছেন এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি আমরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রনোদনার আওতায় কসবায় ৮০ জন কৃষক সূর্যমুখী চাষ করেছে। এবার উপজেলায় থেকে ৬ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম বলেন, কসবায় উপজেলায় মোট ৬ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকরা যাতে লাভবান হয় সেই লক্ষ্যে সরকার কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছে। সূর্যমুখী ভোজ্য তৈল হিসেবে গুণগত মানের দিক থেকে বেশ ভালো। বাজারে সূর্যমুখীর চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় এবং উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষের উপযোগী হওয়ায় এ বছর ভালো ফলনের মাধ্যমে চাষীদের মুখে হাসি ফুটবে বলে আমরা আশা করছি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.