প্রশান্তি ডেক্স ॥ চলমান রমজান ও গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখতে চায় পেট্রোবাংলা। এরমধ্যে এলএনজি সরবরাহ দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে বাড়িয়ে ৭২০ মিলিয়ন ঘনফুট করা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম কমে এসেছে। এখন প্রতি এমএমবিটিইউ (মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) এলএনজি খোলা বাজার থেকে ১২ থেকে ১৩ ডলারে কিনছে পেট্রোবাংলা। তিনি জানান, এলএনজি আমদানির দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় সব মিলিয়ে ৫৬টি জাহাজে এলএনজি আসবে। অন্যদিকে স্পট মার্কেট (দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি না করে খোলা বাজার থেকে যে জ্বালানি কেনা হয়) থেকে জুন পর্যন্ত ১২ কার্গো এলএনজি আসবে। তিনি আশা করেন, এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও স্বাভাবিক থাকবে।
এখন দৈনিক গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ২৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে ৭২০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে দুই হাজার ১৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে আমাদের গ্যাসের চাহিদা তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। আমাদের দেশীয় উৎপাদন থেকে গড়ে দুই হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস পাওয়া যায়। পাশাপাশি স্পট ও দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানির মাধ্যমে আরও এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত করা সম্ভব। সব মিলিয়ে রমজানে গ্যাসের ঘাটতি হবে না বলে আমরা আশা করছি।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবার গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বোচ্চ গ্যাসের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে পেট্রোবাংলা দৈনিক এক হাজার ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে। এখনও অন্তত ১৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে আরও ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে হবে পেট্রোবাংলাকে।
পেট্রোবাংলা বলছে, দুটি টার্মিনালের দৈনিক গ্যাস সরবরাহ ক্ষমতা এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সাধারণত ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ করে থাকে। পেট্রোবাংলা যদি সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদার সময় গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করতে চায় তাহলে এলএনজির সরবরাহ আরও ১৭০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়াতে হবে।
এবার গ্রীষ্মে দৈনিক সর্বোচ্চ চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াট নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ এ বিষয়ে একটি বৈঠক করে জ্বালানি আমদানি স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পায়রা এবং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যুৎ বিভাগ ডলার সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়ে দায়িত্ব নিয়েছে বলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান।
ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, রমজান ও গ্রীষ্মকে সামনে রেখে আমরা আগেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তিনি বলেন, সেহরি, ইফতার ও তারাবির সময় যাতে বিদ্যুৎ ঘাটতি না হয় সে বিষয়টি মনিটরিং করা হবে। পাশাপাশি ওই সময় বিদ্যুৎ না পেলে কী কী করা হবে সেই বিষয়টিও পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে। তিনি জানান, সমস্যা যাতে না হয় সেজন্য ইতোমধ্যে সাবস্টেশন, ট্রান্সফরমার মেনটেইনেন্স করেছি। পাশাপাশি সমস্যা হলে দ্রুত সমাধানের জন্য জরুরি যন্ত্রপাতি হাতের কাছে রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে প্রত্যেকটি এনওসিকে। গত বুধবার দিনের বেলা ডিপিডিসির অধীন এলাকায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল এক হাজার ৫৬১ মেগাওয়াট, যা গত বৃহস্পতিবার দাঁড়ায় ১৫১২ মেগাওয়াটে। সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে গড়ে এক হাজার ৪১০ মেগাওয়াট। এখন পর্যন্ত ডিপিডিসির অধীন এলাকায় লোডশেডিং হয়নি বলেও তিনি জানান।